৮৬তম জন্মদিনে আজো ধ্রুবতারা লতা

সুরের আকাশের ধ্রুবতারা তিনি। আসমুদ্রহিমাচল যার সুরের লহরিতে মগ্ন হয়ে ওঠে, তিনি সুরসম্রাজ্ঞী লতা মুঙ্গেশকর। আজ ২৮ সেপ্টেম্বর, ‘নাইটিংগেল অব ইন্ডিয়া’ খ্যাত এই সুরের রানীর ৮৬তম জন্মদিন। ১৯২৯ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবা দীননাথ মুঙ্গেশকরের হাত ধরে ছোটবেলায় শাস্ত্রীয় সংগীতের মাধ্যমে সুরের ভুবনে প্রথম পা রাখেন। একটু একটু করে কণ্ঠে সুরের লহরি বাঁধা পড়তে থাকে শিশু বয়স থেকেই। ছোট থেকেই অন্য আর পাঁচটা সাধারণ ঘরের মেয়েদের মতো ছিলেন না লতা। ঘরকন্নাতে তাঁর মন ছিল না ছোট থেকেই। মেয়েদের সাংসারিক গণ্ডি তাঁকে বাঁধতে পারেনি মেয়েবেলা থেকেই।
সুরের প্রতি মুগ্ধ লতাকে ছোট থেকেই বৃষ্টির রিমঝিম আওয়াজ, দখিনা ফাগুনের পাতাঝরা বিকেলের পাখিদের কলরবের সুর তাঁকে আকৃষ্ট করত। সুরের টানে উন্মনা হয়ে পড়তেন লতা। কৈশোরে পা রাখতে না রাখতেই তানসেনের সেই অলৌকিক সুরগাথা তাঁর হৃদয়কে স্পর্শ করে নেয়। ওস্তাদ আমানত আলী খাঁ সাহেবের সান্নিধ্যে থেকে শুরু হয় তাঁর সংগীতজগতে প্রবেশের প্রথম ধাপ। সুরকে সঙ্গী করে জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার সুপ্ত জেদ মনে বাসা বেঁধে নেয়। মাত্র ১৩ বছর বয়সেই সুরের দুনিয়ায় রীতিমতো চমক সৃষ্টি করে আবির্ভাব ঘটে লতার। জীবনের শুরুটা হয় মারাঠি ছবি ‘গজাভাউ’-তে প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে। প্রথম ছবির প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে নিজের পায়ের তলার জমিকে অনেকটাই শক্তপোক্ত করে নেন লতা মুঙ্গেশকর। এর পর শুরু হয় তাঁর জীবনে সংগীতের সোপান ভেঙে এগিয়া চলা। অভিনেত্রী মধুবালার ঠোঁটে ‘আয়েগা আনেওয়ালা’, ডিম্পলের ‘হাম তুম এক কামরেমে বন্দ হো’ গানে তিনি জনপ্রিয়তাকে একরকম ছিনিয়ে নেন।
শুধু হিন্দি দুনিয়াই নয়, মোট ৩৬টি ভাষায় গান গেয়েছেন তিনি। যার মধ্যে বাংলায় ‘না যেওনা’, ‘রজনী এখনো বাকি’, ‘ও মোর ময়না গো’, ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘রঙ্গিলা বাঁশিতে কে ডাকে’র মতো সুপার-ডুপার হিট করা গান রয়েছে। যে গানে দুই বাংলার আপামর বাঙালির হৃদয়ের ভালোবাসা জয় করে নেন অনায়াসেই। শুধু লতা মুঙ্গেশকরের কণ্ঠে জনপ্রিয় গানই নয়, তাঁর জাদুস্পর্শী কণ্ঠের ছোঁয়ায় ধ্রুপদি, গজল, ভজনসহ বিভিন্ন ধারার সংগীতমাত্রই বরাবর অন্য মাত্রা পেয়েছে। তাঁর সুরের আবেশে তিনি বারবার মোহিত করে রেখেছেন শ্রোতাদের। তাঁর সুরের ঝর্ণা ধরে ‘আজারে পরদেশী’, ‘বিতি না বিতাই রেয়না’, ‘কাহি দীপ জ্বলে কাহি দিল’, ‘তেরে বিনা জিন্দেগি সে’, ‘তেরে বিনা জিয়া যায়ে না’, ‘ন্যায়নো মে বদরা’, ‘চলতে চলতে’, ‘ইয়ারা সিলি সিলি’র মতো অসংখ্য গানের সুর মাত করে দিয়েছে শ্রোতাদের।
১৯৭৪ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি গান রেকর্ড করার জন্য গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম ওঠে লতা মুঙ্গেশকরের। ২০০১ সালে ভারত-রত্ন পুরস্কার পান এই গায়িকা। এ ছাড়া জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন তিনবার। ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পেয়েছেন চারবার। সে সঙ্গে পদ্মভূষণ, দাদাসাহেব ফালকে, রাজীব গান্ধী পুরস্কারসহ অজস্র পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছেন তিনি।