পরমব্রত, মতি নন্দীর মুকু

“অনিমেষ দা, ‘রবীন্দ্রনাথের’ সঙ্গে দুপুরের খাবার খাচ্ছেন?” এমন প্রশ্ন করতে পাশ থেকে ‘রবীন্দ্রনাথ’ সুন্দর বাচনভঙ্গিতে বললেন, ‘রবীন্দ্রনাথও স্বয়ং খাচ্ছেন!’ এই ‘রবীন্দ্রনাথ’ কোন ‘রবীন্দ্রনাথ’? কৌতূহল হতেই পারে! এই রবীন্দ্রনাথ হলেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়।
সম্প্রতি সুমন ঘোষ পরিচালিত ‘কাদম্বরী’ নামের একটি ছবিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। আর এখন ঢাকায় অনিমেষ আইচ পরিচালিত ‘ভয়ঙ্কর সুন্দর’ ছবির কাজ করছেন। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন ভাবনা। তাঁদের রসায়নটা কিন্তু চমৎকার। গতকাল বুধবার এফডিসির সাত নম্বর ফ্লোরে অনিমেষ আইচ, ভাবনা, পরমব্রত দুপুরের খাবার একসঙ্গে খাচ্ছিলেন। তিনজনেরই পছন্দ বাঙালি খাবার। পরমব্রত সরিষা ইলিশ, গরম লাল ভাত খুব পছন্দ করেন। এদিকে অনিমেষ আইচ, ভাবনা দুজনেরই পছন্দ ভাত ও বাঙালি খাবার। খেতে খেতে তারা খুঁনসুটি করছেন আবার সিরিয়াস গল্পও করছেন।
তাদের আলাপচারিতার মাঝে অনিমেষ আইচ বলেন, ‘এরা এখন দুষ্টুমি করলেও সেটে অনেক ভদ্র। আমার শিল্পীরা আমাকে একদম জ্বালায় না। কাজ করে অনেক আরাম পাই।’
কথা শেষ না হতে ভাবনা অভিযোগের সুরে বললেন, ‘দাদা তুমি তো আমাকে নিয়ে কিছুই লেখ না। কাল রাতে পরমব্রতকে নিয়ে কত সুন্দর একটা স্ট্যাটাস লিখেছ!’
এবার অনিমেষ আইচ একটু আসামীর সুরে বললেন, ‘ও তোকে নিয়ে কিছু লিখিনি? আচ্ছা কথা দিলাম লিখব।’
গত পরশু রাতে শুটিং শেষ করে ফেসবুকে অনিমেষ আইচ স্ট্যাটাস লিখেছিলেন, ‘বিনয় মানুষকে বড়ো করে, হাসি মুখ দিয়ে দুনিয়া জেতা যায়। পরম খুব ভালো একটা ছেলে, বিনয় আর সারল্য ওর সম্পদ। অনেক বড়ো হও ভাই।’
খেতে খেতে আলাপ জমতে শুরু করল। সব কথা অব দ্য রেকর্ড বললেন অভিনেতা পরমব্রত। তাই সেসব লেখা যাচ্ছে না। পরমব্রতের গল্পের বিমুগ্ধ শ্রোতা ছিলেন ভাবনা। কিছুক্ষণ পর ভাবনা মিষ্টি হেসে বলেন, ‘জানেন, নারী সাংবাদিক আমাদের সাক্ষাৎকার নিতে এলে আমি অনেক নিরাপত্তহীনতায় ভুগি।’ এর কারণ অবশ্য আর ব্যাখ্যা করেননি ভাবনা।
আজ (গতকাল ২৯ এপ্রিল) তো নৃত্যদিবস। আপনার কোনো পরিকল্পনা ছিল কি? প্রশ্ন শুনে ভাবনা বললেন, ‘শুটিংয়ের জন্য সব পরিকল্পনা বাতিল করেছি। শুটিং না থাকলে শিল্পকলায় যেতাম।’
এরপর খাওয়া শেষ করে অনিমেষ আইচ, পরমব্রত, ভাবনা খোলা জায়গায় এসে দাঁড়ালেন। সেখানে পরবর্তীর শটের দৃশ্য বুঝিয়ে দিলেন পরিচালক। এবার ঝটপট মেকআপরুমে চলে গেলেন পরমব্রত ও ভাবনা। চোখেমুখে তাদের অনেক চিন্তা। কারণ এই ছবির জন্য এই শটটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
কিছুক্ষণ পর সেটে লাইট তৈরি হলো। পরিচালক মনিটরে দেখে নিলেন সব ঠিকঠাক আছে কি না। ভাবনা সুন্দর লাল গাওন পরে সেটে হাজির হলেন। পরমব্রত খাটে শুয়ে আছেন।খাটের এক পাশে বসে ভাবনা মনোযোগ দিয়ে চিত্রনাট্য পড়তে লাগলেন।
কিছুক্ষণ পর পরিচালক বললেন, ‘আমরা এখন শটে যাব।’ ভাবনা খাট থেকে নেমে শটের জন্য প্রস্তুত হতে লাগলেন।
পাক্কা এক ঘন্টা সময় লাগল একটা শট ওকে করতে। এত সময় কেন? জিজ্ঞাসা করতে পরিচালক বললেন, ‘এটি ছবির শেষের দিকের দৃশ্য। বলতে পারেন ছবির গল্পের প্রধান কাজ। তাই একটু বেশি সময় নিয়েছি।’
শট মনের মতো হওয়াতে পরিচালক, শিল্পী সবাই খুশি। পড়ন্ত বিকেলে প্রযোজক সমিতির সামনের ফাঁকা জায়গাতে তাঁরা সবাই একসঙ্গে ক্রিকেট খেলতে শুরু করলেন।
পরিচালক বোলিং করছেন, অভিনেতা পরমব্রত ব্যাটিং। চারপাশের সবাই খেলা উপভোগ করছেন। ভাবনাও হাততালি দিয়ে দুজনকে সমর্থন দিচ্ছেন।
খেলা শেষ করে ফ্রেশ হয়ে অনিমেষের তৈরি করা সেটে এসে বসলেন পরমব্রত।
সেটটাও কিন্তু দেখার মতো। মনে হবে মফস্বলে নিম্নবিত্ত মানুষের একটি বাড়ি।
ঘরের চালে জীর্ণ লতাপাতা। উঠানে পেয়ারা গাছ। ঘরের উপরের বারান্দায় টাঙানো জীর্ণ কাপড় ও শার্ট। সেট নিয়ে প্রশ্ন করতে পরিচালক অনিমেষ আইচ বললেন, ‘সেট বানাতে আমি একটুও ছাড় দেইনি। গল্পের প্রয়োজনে যে রকম দরকার ঠিক সেভাবে বানিয়েছি। সেটের প্রশংসা শুরু থেকে সবার কাছ থেকে পাচ্ছি।’
মতি নন্দীর গল্প অবলম্বনে ‘ভয়ঙ্কর সুন্দর’ ছবিটি নির্মিত হচ্ছে। এখানে মুকু চরিত্রে অভিনয় করছেন পরমব্রত। মুকু তার মতই সরল মনের। তবে বয়সটা একটু বেশি।
সেটা মেকআপ আর অভিনয় দিয়ে ফুটিয়ে তুলছেন পরমব্রত।
আর অনিমেষ আইচের সঙ্গে একমত কে না হবেন! পরমব্রত তাঁর নামের মতো অনেক কোমল। বাড়ির সবাই তাঁকে আদর করে ডাকেন ‘বাবনা’। এখন অনেক বড় হয়ে গেলেও ছোটবেলার নাম উপভোগ করেন পরমব্রত। পর্দায়ও তার উপস্থিতি
সাবলীল। ভিন্ন ধারার ছবিতে অভিনয় করে তারকা খ্যাতি পান তিনি। পরিচালক হিসেবে তাঁর যোগ্যতা কারো অজানা নয়। অভিনয়েও দক্ষ। দুটো কাজ সমান তালে চালিয়ে যাবেন তিনি। নিজেকে কখনো বদলাতে চান না এই শক্তিশালী অভিনেতা।
আর বাংলাদেশ সফর কেমন চলছে? এক বাক্যে পরম উত্তর দিলেন, ‘ভালো, অনেক ভালো এখনকার মানুষের আতিথেয়তা।’