সাইফকাণ্ডে প্রকাশ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য : এক কোটি আদায় করতেই হামলা?
সাইফ আলী খান নয়, টার্গেট ছিল তাঁর ছোট ছেলে জাহাঙ্গীর? বিস্ফোরক সব তথ্য উঠে আসছে পুলিশি তদন্তে। গেল বুধবার মধ্যরাতে নিজ বাড়িতে ছুরিকাহত হন বলিউড অভিনেতা সাইফ আলী খান। ঘাড়ে, হাতে, পিঠে ছয়বার ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয় তাকে। গতকাল বৃহস্পতিবারই অস্ত্রোপচার হয় অভিনেতার। এরই মধ্যে ভয়ঙ্কর তথ্য এল সামনে। সাইফ-কারিনা দম্পত্তির চার বছরের ছেলে জাহাঙ্গীরের ঘরে ঢুকেছিল দুষ্কৃতকারী। সে এক কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছিল! এমনটাই খবর পুলিশ সূত্রের।
পুলিশ সূত্র বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভিকে জানিয়েছে, সাইফ আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর উরফে জেহ-র যত্ন নেওয়া নার্স বলেছেন, দুষ্কৃতকারী প্রথমে জেহ-র ঘরে প্রবেশ করে।
দাবির পরে হামলায় সাইফ আলি খান, ৫৪ বছর বয়সী নার্স ও অন্য একজন গৃহকর্মীসহ তিনজন আহত হয়। ছুরি দিয়ে মোট ছয়টি জায়গায় সাইফকে আঘাত করা হয়। তারমধ্যে মেরুদণ্ডের কাছে একটি আঘাত করা হয়। তারপর আহত বলিউড তারকাকে নিয়ে তার ছেলে ইব্রাহিম লীলাবতী হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেই সময় সাইফের গাড়ি আসতে দেরি হচ্ছিল। পরে একটা অটোতে চাপিয়েই সাইফকে লীলাবতী হাসপাতালে নেয়া হয়।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি বিপদমুক্ত। অভিনেতার শারীরিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল।
সাইফ আলী খানের সঙ্গে থাকেন তার স্ত্রী তথা বলিউড অভিনেত্রী কারিনা কাপূর এবং তার তার দুই শিশুসন্তান, আট বছরের তৈমুর ও চার বছরের জেহ। তারা সবাই বান্দ্রা পশ্চিমের একটি ১২ তলা বিল্ডিংয়ে চার তলায় বিস্তৃত একটি আবাসনে থাকেন। সেখানে চারটি ফ্ল্যাট আছে তার।
গতকাল বৃহস্পতিবার শুরুতে পুলিশ সূত্র এনডিটিভিকে জানায়, চুরির উদ্দেশ্য নিয়েই এসেছিল সে। পাশের লাগোয়া একটি বিল্ডিং টপকে সাইফ-করিনার বাসভবনে ঢুকেছিল। অভিনেতার বাড়ির সিঁড়ির সিসিটিভি ফুটেজে তাকে দেখা গেছে। তাকে টি-শার্ট এবং জিন্স পরা অবস্থায় দেখা যাচ্ছে, কাঁধে কমলা রঙের স্কার্ফ ছিল।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাহাঙ্গীরকে দেখভাল করেন ইলিয়ামা ফিলিপ আলিয়াস লিমা নামে এক নার্স। বিগত চার বছর ধরেই খান পরিবারের সঙ্গে আছেন তিনি। তিনিই প্রথম অনুপ্রবেশকারীকে দেখতে পান। তিনি পুলিশকে জানান, রাত ১১টা নাগাদ জাহাঙ্গীরকে ঘুম পাড়ান তিনি। রাত দুইটার সময় হঠাৎ ঘরে আওয়াজ পান। বাইরে থেকে জেহ-র ঘরের বাথরুমের বাতি জ্বলতে দেখে প্রথমে ভেবেছিলেন কারিনা কাপুর হয়তো তার ছেলেকে দেখতে এসেছেন। এই ভেবে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু আবার বুঝতে পারলাম হয়তো কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। তাই তিনি আবার ঘুম থেকে উঠে দেখতে পান, এক ব্যক্তি বাথরুম থেকে বেরিয়ে জেহ-র ঘরে ঢুকেছে।
ঠিক সেই মুহুর্তে তিনি তার মুখোমুখি হন। সঙ্গে সঙ্গে কে কে বলে চিৎকার করতেই, ওই দুষ্কৃতকারী ইশারা করে বলেন, কেউ যেন টু শব্দ না করেন। এরপরে জেহ-র উপরে হামলার ভয় দেখিয়ে এক কোটি টাকা দাবি করে। ওই নার্স হামলাকারীকে বাধা দিতে গেলে, সে তার হাতে ও কবজিতে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। পরে তিনি চিৎকার শুরু করেন।
নার্সের বক্তব্য অনুসারে, তার চিৎকার শুনেই ঘুম ভাঙে সাইফ অলী খানের। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসেন তিনি, হামলাকারীকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। হামলাকারী তখন এলোপাতাড়ি ছুরি দিয়ে আঘাত করে সাইফ আলীকে। পালানোর সময় গীতা নামক আরেক গৃহকর্মীকেও ছুরির দিয়ে আঘাত করে ওই দুষ্কৃতকারী। ছুরি দিয়ে মোট ছয়টি জায়গায় সাইফকে আঘাত করা হয়।
অন্যদিকে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ছয়টি কোপের মধ্যে দুটি গভীর আঘাত ছিল সাইফের। শিরদাঁড়ার পাশে হামলাকারী যখন কোপ আঘাত করে, তখন আড়াই ইঞ্চি ছুরি ভেঙে শরীরের ভিতরেই রয়ে যায়। অস্ত্রোপচার করে তা বের করা হয়। বাম হাতে দুটি গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছে। ঘাড়েও একটা কোপ মেরেছিল দুষ্কৃতকারী।
লীলাবতী হাসপাতালের সিওও নীরজ উত্তামানি জানিয়েছেন, সাইফ আলি খানের দেহে আড়াই ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার ও প্লাস্টিক সার্জারি করা হয়েছে।
পুলিশ ওই দুষ্কৃতকারীর যথাযথ ধারা অনুযায়ী মামলা দায়ের করেছে। সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তিকে এখনো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।