আজিমপুরে বাবা-মায়ের কবরে শায়িত হলেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী

প্রিয়জন ও ভক্তদের শেষ শ্রদ্ধায় শিক্ত হয়ে রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে বাবা-মার কবরেই অন্তিম শয়ানে শায়িত হলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সংগীতশিল্পী মুস্তাফা জামান আব্বাসী। এর আগে গুলশান আজাদ মসজিদে শনিবার বাদ যোহর তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।
শুধু গানের ভুবন নয় জীবন থেকেই বিদায় নিলেন বরেণ্য সংগীতশিল্পী, গবেষক ও লেখক মুস্তাফা কামাল আব্বাসী। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে সংগীতাঙ্গনে। গুলশান আজাদ মসজিদে জানাজা শেষে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানান সংস্কৃতজন-অগ্রজ ও অনুজরা। এ সময় তারা বলেন, লোকসংগীত গবেষণা ও সংগ্রহে তার অবদান অসামান্য।
দীর্ঘদিন ধরে বাধ্যর্কজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য সংগীতশিল্পী মুস্তাফা জামান আব্বাসী। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জীবন থেকে বিদায় নেন বরেণ্য সংগীতশিল্পী, গবেষক ও লেখক মুস্তাফা জামান আব্বাসী।
মুস্তাফা জামানের শিক্ষাজীবন কলকাতায় শুরু হয়। তিনি ১৯৫৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স এবং ১৯৬০ সালে এমএ পাস করেন। তিনি সঙ্গীতসাধনা ও সাহিত্যচর্চায় নিজস্ব অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। সঙ্গীত বিষয়ক গবেষণাতেও তিনি সিদ্ধহস্ত ছিলেন। তিনি বেতার ও টেলিভিশনে সঙ্গীতবিষয়ক অনেক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছেন। পত্র-পত্রিকাতে তিনি একজন সুখপাঠ্য কলাম লেখক হিসেবেও সুপরিচিত। দৈনিক প্রথম আলোয় মুস্তাফা জামান আব্বাসীর ‘গোধূলির ছায়াপথে’ কলামটি বেশ পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে।
দীর্ঘদিন শিল্পগোষ্ঠীর মহা-ব্যবস্থাপক, ব্যবসা সফল ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক। ২৫টি দেশে ভাটিয়ালি, বিচ্ছেদী, ভাওয়াইয়া, চটকা, নজরুলগীতি পরিবেশন করে খ্যাতি অর্জন করেন। দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে আন্তর্জাতিক লোকসঙ্গীত সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব ও সঙ্গীত পরিবেশন করেন। ইউনেস্কোর ছত্রছায়ায় বাংলাদেশ ন্যাশনাল কমিটি অব মিউজিকের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ১১ বছর, একাধিকবার বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন সঙ্গীতজ্ঞদের বিশ্ব অধিবেশনে।
কবি, লেখক ও গবেষক মুস্তফা জামান আব্বাসীর ২১টি গ্রন্থ পাঠকনন্দিত। মুস্তাফা জামান আব্বাসী রচিত অসংখ্য গ্রন্থের মধ্যে অন্যতম ‘লোকসঙ্গীতের ইতিহাস’, ‘ভাটির দ্যাশের ভাটিয়ালি’, ‘রুমির অলৌকিক বাগান’, উপন্যাস ‘হরিণাক্ষি’, স্মৃতিকথা ‘স্বপ্নরা থাকে স্বপ্নের ওধারে’ এবং ইংরেজি জীবনী।
বাংলা সংস্কৃতিতে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি একুশে পদকসহ অসংখ্য সম্মাননা লাভ করেছেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, লালন পুরস্কার, নজরুল একাডেমি পুরস্কার, আব্বাসউদ্দিন গোল্ড মেডেল, এ্যাপেক্স ফাউন্ডেশন পুরস্কার, জাতীয় প্রেস ক্লাব লেখক পুরস্কার, সিলেট মিউজিক পুরস্কার, মানিক মিয়া পুরস্কার, নাট্যসভা উপস্থাপক পুরস্কার, বাংলা সন চৌদ্দশতবার্ষিকী পুরস্কার ইত্যাদি। এশিয়া মিডিয়া সামিট, আন্তর্জাতিক রুমি কর্মকাণ্ড, আন্তর্জাতিক সুফি সম্মেলন, লোকসংস্কৃতি সেমিনার, রেডিও টেলিভিশনে বক্তব্য ও গানের জলসা নিয়ে ব্যস্ত।