বান্দরবানে পাহাড়ধসে ছাত্রীর লাশ উদ্ধার, নিখোঁজ ৪
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2017/07/23/photo-1500822924.jpg)
টানা ভারি বর্ষণে বান্দরবানে আবার পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। পাহাড়ধসে নিহত চিংমে হ্লা (১৮) নামের এক ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন আরো চারজন।
নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন রুমা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনার অফিস সহকারী মুন্নি বড়–য়া, কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তা গৌতম নন্দী, ডাক বিভাগের কর্মচারী মো. রবিউল ও ছাত্রী উমেচিং মারমা। নিখোঁজদের খোঁজে ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, গত শনিবার থেকে বান্দরবানে টানা ভারি বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। বৃষ্টিতে বান্দরবান থেকে রুমা উপজেলার উদ্দেশে এবং রুমা থেকে বান্দরবানের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া দুটি যাত্রীবাহী বাস পাহাড়ধসে বিধ্বস্ত রুমা সড়কের দলিয়ানপাড়া এলাকায় পৌঁছায়। দুই পাশের যাত্রীরা বাস পরিবর্তনের জন্য ভাঙা রাস্তা হেঁটে পার হওয়ার সময় বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে পড়ে। এ সময় পাহাড়ধসে মাটি চাপা পড়েন দুটি বাসের বেশ কয়েকজন যাত্রী। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, প্রশাসন ও স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেন। উদ্ধারকর্মীরা পাহাড়ধসে নিহত এক কলেজছাত্রীর লাশ উদ্ধার করেন। তাঁর নাম চিংমে হ্লা (১৮)। এ ছাড়া আহত অবস্থায় তিনজনকে জীবিত উদ্ধার করে বান্দরবান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত ব্যক্তিরা হলেন রুমা উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন, শিক্ষক চিত্তরঞ্জন তঞ্চঙ্গ্যা ও স্থানীয় বাসিন্দা অংথোয়াই চিং।
অপরদিকে পাহাড়ধসে এখনো নিখোঁজ রয়েছেন আরো চার যাত্রী। তাঁদের খোঁজে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, প্রশাসনসহ স্থানীয় লোকজন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর, বান্দরবান ৬৯ সেনা রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. যোবায়ের সালেহীন, জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক, জেলা পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়সহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বান্দরবানের মৃত্তিকা সংরক্ষণ কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় বান্দরবানে ৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এখনো ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।
পরিবহন শ্রমিক স্বপন দাস বলেন, গত ১২ জুন অবিরাম বর্ষণে বান্দরবান-রুমা উপজেলা সড়কের দলিয়ানপাড়া এলাকায় পাহাড়ধসে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সেনাবাহিনী কয়েক দফায় পাহাড়ের মাটি সরানোর চেষ্টা করলেও বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পারেনি। তবে সড়কের দুই পাশে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। বিধ্বস্ত ভাঙা সড়ক হেঁটে যাত্রীরা গাড়ি পরিবর্তন চলাচল করে আসছিল। রোববার সকালেও যাত্রীরা হেঁটে গাড়ি পরিবর্তন করতে যাওয়ার সময় পাহাড়ধসে অনেক যাত্রী মাটি চাপা পড়েন। আহত অবস্থায় তাঁরা তিন যাত্রীকে উদ্ধার করতে পেরেছেন।
পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর বলেছেন, পাহাড়ধসে মাটি চাপা পড়ে কয়েকজন যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজদের উদ্ধারে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসসহ স্থানীয়রা উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে। ভারি বর্ষণে পাহাড়ধসের শঙ্কা আরো বাড়ছে। বৃষ্টিতে চলাচলে স্থানীয়দের আরো বেশি সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন প্রতিমন্ত্রী।
জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক বলেন, পাহাড়ধসের ঘটনাস্থল থেকে এক ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকর্মীরা। এখনো আরো চারজন নিখোঁজ রয়েছেন। এ ছাড়া আহত অবস্থায় রুমা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ তিনজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যসহ সরকারি-বেসরকারি সংস্থার লোকজন উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নিয়েছেন। তবে বৃষ্টির কারণে উদ্ধার তৎপরতা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।
বান্দরবান-রুমা উপজেলা সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া বৃষ্টিতে বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কের বাজালিয়া পয়েন্টে বন্যার পানিতে প্রধান সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বান্দরবানের সঙ্গে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ঢাকার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
এদিকে বৃষ্টিতে পাহাড়ধসে প্রাণহানি, ঘরবাড়ি ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যা বাড়ছে। পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে।