মাশরাফিদের কাছে বুলবুলের প্রত্যাশা
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/02/04/photo-1423042045.jpg)
এখন অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন, নাগরিকত্বও নিয়েছেন সেখানকার। তাহলে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে কোন দলকে সমর্থন করবেন? বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপ দলের অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল প্রশ্নটা শুনেই অবাক, ‘এটা আবার কেমন কথা! আমার প্রথম পছন্দ বাংলাদেশ, দ্বিতীয় পছন্দ বাংলাদেশ এবং তৃতীয় পছন্দও বাংলাদেশ। বাংলাদেশ আমার ভালোবাসা, বাংলাদেশ আমার হৃদয়, বাংলাদেশই আমার সব কিছু। এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।’ আরেকটি বিষয়েও তিনি মোটামুটি নিঃসন্দেহ। তাঁর বিশ্বাস, এবারের বিশ্বকাপে অঘটনের জন্ম দিয়ে ক্রিকেট-দুনিয়াকে চমকে দিতে পারে বাংলাদেশ। এমনকি খেলতে পারে কোয়ার্টার ফাইনালেও।
দূরদেশে থেকেও বাংলাদেশের সফলতায় আনন্দে উদ্বেলিত হন, ব্যর্থতায় ব্যথিত হন বুলবুল। জীবন-জীবিকার তাগিদে হাজার-হাজার মাইল দূরের দেশে সপরিবারে পাড়ি জমিয়েছেন। কিন্তু নিজের জন্মভূমিকে তো আর ভুলতে পারেন না!
বাংলাদেশের ক্রিকেট যেন তাঁর রক্তের সঙ্গে মিশে আছে। বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে অবিস্মরণীয় সেঞ্চুরি করা বুলবুল দেশের ক্রিকেটের খোঁজ-খবর রাখেন নিয়মিত। আর বিশ্বকাপ এলেই হয়ে পড়েন স্মৃতিভারাক্রান্ত। পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুন না কেন, সব কাজ ফেলে বাংলাদেশের খেলা দেখতে বসে যান। মনে পড়ে যায় সেই ১৯৯৯ সালের কথা। ইংল্যান্ডে তাঁর অধিনায়কত্বেই বিশ্বকাপের কঠিন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রবেশ। প্রথম বিশ্বকাপের উত্তেজনা-রোমাঞ্চের স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে মাশরাফি-মুশফিক-সাকিব-তামিমদের মাঝে খুঁজে ফেরেন নিজেদের ছায়া।
ক্রিকেটার-অধিনায়ক দুই ভূমিকাতেই ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল বুলবুলের জন্য। বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলেছিল বলে তিনি ও তাঁর প্রত্যেক সতীর্থর মধ্যে ছিল ভালো করার তাড়না। ক্রিকেট-দুনিয়ার সামনে বাংলাদেশকে যেন লজ্জায় পড়তে না হয় সে ব্যাপারে সবাই ছিলেন সচেতন।
আরেকটি বিষয়ও বাংলাদেশ দলকে অনুপ্রাণিত করছিল। তখন বাংলাদেশকে টেস্ট মর্যাদা দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটাঙ্গনে গুঞ্জন চলছিল। টেস্ট মর্যাদার দাবি জোরালো করে তুলতে বাংলাদেশ দলের লক্ষ্য ছিল অন্তত একটি জয় এবং বাকি ম্যাচগুলোতে প্রাণপণ লড়াই করা।
লক্ষ্যপূরণ হতে সমস্যা হয়নি। নিউজিল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে প্রথম দুই ম্যাচে হেরে গেলেও তৃতীয় ম্যাচে স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। তারপর তো পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই ঐতিহাসিক জয়।
ওই জয়ের পথ ধরেই ২০০০ সালে এলো টেস্ট মর্যাদা। এরপর পেরিয়ে গেছে প্রায় ১৫ বছর, বাংলাদেশ খেলে ফেলেছে আরো তিনটি বিশ্বকাপ। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেট কতটা এগোতে পেরেছে?
এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের কোচের দায়িত্বে থাকা বুলবুলের ধারণা, প্রত্যাশিত জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি বাংলাদেশ, ‘আমরা যেভাবে শুরু করেছিলাম, যে আকাঙ্খা ছিল মনের মধ্যে, গত ১৫ বছরে সেই প্রত্যাশিত জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি আমাদের ক্রিকেট। দেশের ক্রিকেটকে আরো ভালো জায়গায় দেখার আশা করেছিলাম আমরা।’
বাংলাদেশের ক্রিকেট কেন প্রত্যাশা অনুযায়ী এগোতে পারেনি তার কারণও বুলবুলের কাছে স্পষ্ট, ‘পরিকল্পনার অভাবই এর মূল কারণ। অভিজ্ঞদের দ্রুত ছেঁটে ফেলে তরুণদের প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীলতাও দেশের ক্রিকেটকে সেভাবে এগোতে দেয়নি।’
তবু বাংলাদেশ আজ বিশ্বক্রিকেটের অন্যতম শক্তি। টেস্টে প্রত্যাশিত সাফল্য না পেলেও ওয়ানডেতে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সাফল্য আছে।
১৯৯৯ বিশ্বকাপের দলের সঙ্গে এবারের দলের কয়েকটি পার্থক্য খুঁজে পাচ্ছেন বুলবুল। বাংলাদেশের ক্রিকেট-ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানের দৃষ্টিতে, ‘এবারের দলটিতে বিশ্বমানের একাধিক খেলোয়াড় আছে। তবে দলটা একটু বেশিই তারুণ্যনির্ভর। তাই অভিজ্ঞতার ঘাটতিও আছে। এই অভাব ১৯৯৯ বিশ্বকাপে ছিল না। ওই দলের প্রতিটি বিভাগেই অভিজ্ঞ এবং নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় ছিল। তাই প্রথম বিশ্বকাপে প্রত্যাশার চেয়েও ভালো ফল করা সম্ভব হয়েছিল।’
তবু মাশরাফির দলের কাছে বুলবুলের দাবি কোয়ার্টার ফাইনাল। অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন বলে বাংলাদেশের সব ম্যাচ মাঠে বসে দেখার ইচ্ছাও তাঁর।
বুলবুলের দৃঢ় বিশ্বাস, এবারের বিশ্বকাপে সাকিব-তামিমদের পক্ষে চমক সৃষ্টি করা সম্ভব হবে, ‘যে কোনো দলকে হারানোর ক্ষমতা আছে বাংলাদেশের। দলের খেলোয়াড়রা দৃঢ় মনোবলের অধিকারী। তবে সবার আগে প্রয়োজন ভালো সূচনা। তাহলেই আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে, বাকি কাজও সহজ হয়ে যাবে।’
১৮ ফেব্রুয়ারি ক্যানবেরায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে মাশরাফিদের বিশ্বকাপ অভিযান। গত বছর এশিয়া কাপে আফগানদের কাছে হেরে যাওয়ায় ম্যাচটা একই সঙ্গে বাংলাদেশের জন্য প্রতিশোধেরও ‘মিশন’।
বুলবুলের প্রত্যাশামতো সুন্দর সূচনা আর প্রতিশোধ—মাশরাফির দলের সামনে এখন দুটি কঠিন লক্ষ্য!