সাইফুর রহমানের বাধ্যতামূলক অবসরের আদেশ প্রত্যাহারসহ পাঁচ দফা দাবি

এখনই জরুরি মিটিং কল করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানের বাধ্যতামূলক অবসরের অবৈধ আদেশ প্রত্যাহারসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে বিএসইসি অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। আজ বুধবার (৫ মার্চ) সিকিউরিটিজ কমিশন ভবনে বিএসইসি অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষের এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে ঘোষিত অন্য দাবিগুলো হলো- বিতর্কিত তদন্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে কমিশনের কর্মকর্তা কর্মচারীদের শোকজ বন্ধ করতে হবে এবং পূর্বে প্রদত্ত শোকজ সব প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে হবে, ১২৭ জনের নিয়োগের ব্যাপারে কমিশন কর্তৃক আইনজীবী নিয়োগ এবং তিন দিনের মধ্যে আপিল করে কমিশনের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে, কমিশনের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে অশোভন অপেশাদারমূলক দুর্ব্যবহার বন্ধ করতে হবে এবং ক্ষমা চাইতে হবে। উপরের চারটি দাবি না মানলে এখনই পদত্যাগ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে মাহবুবুর রহমান বলেন, বর্তমান কমিশন নিয়ে বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে হতাশা তৈরি আছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ কমিশনারদের খারাপ আচরণ, বিভিন্ন কোম্পানির তদন্তের আলোকে কর্মকর্তাদের ধারাবাহিক শোকজ করা এবং নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর আদেশ জারি করা। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের কাছে পাঁচ দফা দাবি জানাই। তবে তারা এই দাবি মেনে নেয়নি। এরপর আজ যৌথবাহিনীকে ভুল তথ্য দিয়ে ডেকে এনে তারা আমাদের কর্মকর্তাদের ওপর লাঠিচার্জ করিয়েছেন। এতে আমাদের ছয়জন কর্মী আহত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে আমরা বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের সঙ্গে কাজ করতে পারছি না। তাই আমরা বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের পদত্যাগ দাবি করছি। তারা যদি আজ বুধবারের মধ্যে পদত্যাগ না করেন তাহলে আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে পুরো কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করবেন। আমরা সরকারের কাছে গণমাধ্যমের মাধ্যমে এ বিষয়টি তুলে ধরছি। সরকারকে এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্য বিএসইসির সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পক্ষ থেকে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিক্ষোভ প্রসঙ্গে সংস্থাটির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, বিগত দিনের পুঁজিবাজারের বিভিন্ন অনিয়ম অনুসন্ধানে বিএসইসি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ১২টি লিস্টেড কোম্পানির বিভিন্ন অনিয়ম তদন্ত করে। এই পর্যন্ত তদন্ত কমিটি সাতটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অভিযোগ গঠনের প্রক্রিয়া চলমান। যার আওতায় রয়েছে পুঁজিবাজারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং বিএসইসির কিছু কর্মকর্তা। এছাড়া বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২৫ বছর চাকরি সমাপ্ত করায় বিধি মোতাবেক কমিশনের নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানকে গত ৪ মার্চ অবসর দেওয়া হয়। এই ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে কিছু উচ্ছৃঙ্খল কর্মকর্তা বিএসইসির চেয়ারম্যান এবং কমিশনারদের কমিশনের বোর্ড রুমে চলমান সভায় জোরপূর্বক ঢুকে অবরূদ্ধ করে। তারা কমিশন মূল ফটকে তালা দেয়, সিসি ক্যামেরা অফ করে দেয়। একই সঙ্গে বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে অরাজক, ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। তারা অকথ্য ভাষা ব্যবহার করে ও পেশিশক্তি প্রদর্শন করে। পাশাপাশি তারা চেয়ারম্যানের পিএসকে (সরকারের সিনিয়র সহকারী সচিব) লাঞ্চিত করে।
খন্দকার রাশেদ মাকসুদ আরও বলেন, তারা (বিক্ষোভকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী) দাবি করে উপরোল্লিখিত দুইটি ইস্যুতে নেওয়া সিদ্বান্ত এখনই প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় কমিশনের তৎক্ষণাৎ পদত্যাগ করতে হবে। এই চরম উশৃঙ্খল ভীতিকর পরিস্থিতি ৪ ঘণ্টা ধরে চলে। কমিশন অবরুদ্ধ থাকার খবরে এবং বিএসইসি একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো প্রতিষ্ঠান (সিআইআই) হওয়ায় প্রথমে পুলিশ ও পরবর্তীতে সেনাবাহিনী বিএসইসিতে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমান কমিশন পুঁজিবাজারের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ায় বিএসইসির কিছু উশৃঙ্খল কর্মকর্তা ও কর্মচারী এমন অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি করেছে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য বিএসইসি নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসর দিয়েছেন রাশেদ মাকসুদ কমিশন। একইভাবে আরো কয়েকজনকে এই অবসর দেওয়ার পরিকল্পনা করে রেখেছে খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন। যা নিয়ে বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভিতরে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে বিএসইসি চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের ফ্লোর পঞ্চম তালা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিএসইসি ভবনের সামনে যৌথবাহিনী মোতায়ের করা হয়। পরে যৌথবাহিনী বিএসইসির ভেতরে ঢুকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক কর্মকর্তা বলেন, আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিএসইসি চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের ফ্লোর পঞ্চম তলা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করছেন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে যৌথবাহিনী আসে। প্রথমেই কর্মচারী-কর্মকর্তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে যৌথবাহিনী। তবে, তাদের ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে, যার ফলে লাঠিচার্জ করা হয় বলে জানিয়েছে যৌথবাহিনী।
বর্তমান কমিশন নিয়ে বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে হতাশা রয়েছে জানিয়ে বিক্ষোভকারী আরেক কর্মকর্তা বলেন, হতাশার অন্যতম কারণ বিএসইসির কমিশনারদের খারাপ আচরণ এবং এলোমেলো সিদ্ধান্ত। এ ছাড়া ১২ কোম্পানির তদন্তের আলোকে ইতোমধ্যে এলোমেলো শোকজ করা। সব মিলিয়ে বৈরী পরিস্থিতি বিরাজ করছে বিএসইসিতে।