একজন লড়াকু ক্রিকেটার মোশাররফ রুবেল

বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে খুব বেশি ম্যাচ খেলতে পারেননি মোশাররফ হোসেন রুবেল। মাত্র পাঁচটি ওয়ানডে খেলেন তিনি। যে কটি ম্যাচ খেলেছিলেন, নিজের সামর্থ্যে পরিচয় দিয়েছেন। তবে জাতীয় দলের চেয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটেই তিনি বেশি পরিচিত ছিলেন। ঘরোয়া আসর গুলোতেই বেশি উজ্জ্বলতা ছড়িয়েছেন সাবেক এই স্পিনার।
২০০৮ সালে ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল রুবেলের। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মিলে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে তিন ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি। অবশ্য অল্প কিছুদিন পর ভারতের বিদ্রোহী ক্রিকেট লিগে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। তাই বেশিদিন জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পাননি। আইসিএলে খেলতে যাওয়ার আগে বিসিবির কাছে অবসরের চিঠিও দিয়েছিলেন তারা।
পরে অবশ্য আবার বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে ফেরেন রুবেল। ২০০৯ সাল থেকে নিয়মিত প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলে আসছিলেন তিনি। পেয়েছেন দারুণ সব সাফল্য। ২০১৩ সালে বিপিএলের ফাইনাল ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের হয়ে খেলে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছিলেন তিনি।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ও লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের পুরস্কার হিসেবে হঠাৎ ২০১৬ সালে জাতীয় দলে ডাক পান রুবেল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে ফিরে বেশ নজরও কেড়েছিলেন তিনি, তিন উইকেট নিয়েছিলেন। পরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দলেও রাখা হয় তাঁকে। এক ম্যাচ খেলে তিন ওভার বল করে কোনো উইকেট পাননি। এটিই ছিল তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ।
পরে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছেন। ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হওয়ার আগে বিপিএলে ২০১৯ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের হয়ে শেষ খেলেছিলেন রুবেল। এরপরই তাঁর আসল লড়াই শুরু হয়।

ব্রেন টিউমার ধরা পড়ার পর সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন তিনি। সফল অস্ত্রোপচারের পর সুস্থ হয়ে ওঠেন। মাঠে ফেরার প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে যাওয়া শুরু করে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কয়েক বছর পর আবার টিউমার ধরা পড়ে।
মাঠের লড়াইয়ে আর নামতে পারেননি রুবেল। হাসপাতাল আর ডাক্তারের কাছে ছোটাছুটি তাঁর নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। শেষ দিকে তাঁর অবস্থার চরম অবনতি হয়। প্রায় সময় তাঁর মৃত্যুর গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। গত মার্চে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন পর গত ১৫ এপ্রিল বাসায় ফিরেছিলেন তিনি।
আজ মঙ্গলবার হুট করে রুবেলের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। দ্রুত রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। আর এতে একজন লড়াকু ক্রিকেটারে অধ্যায়ের সমাপ্তি হয়।