ডেনিশদের স্বপ্নযাত্রা থামিয়ে প্রথমবার ফাইনালে ইংল্যান্ড
২৯ বছর পর নতুন গল্প লেখার স্বপ্ন নিয়ে ইউরোর সেমিফাইনালে পা রেখেছিল ডেনমার্ক। শেষ চারের লড়াইয়ে আগেভাগে লিডও পেয়ে যায় এরিকসেনকে হারিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করা ডেনিশরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ডেনিশদের স্বপ্ন পূরণ হতে দিল না ইংল্যান্ড। ডেনমার্কের স্বপ্নযাত্রা থামিয়ে প্রথমবার ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে পা রেখেছে ইংলিশরা।
ওয়েম্বলিতে আজ বুধবার বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত একটায় অনুষ্ঠিত ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ডেনমার্ককে ২-১ গোলে হারিয়েছে গ্যারেথ সাউথ গেটের দল। অবশ্য ইংল্যান্ডের দুই গোলের কেবল একটি করেছেন হ্যারি কেইন। আরেকটি ছিল প্রতিপক্ষের আত্মঘাতী। অন্যদিকে ডেনিশদের হয়ে জালের দেখা পেয়েছেন ড্যামসগার্ড।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে টুর্নামেন্টের প্রথম সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে স্পেনকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে ইতালি। এবার দ্বিতীয় দল হিসেবে ইউরোর ফাইনালে উঠেছে ইংল্যান্ড। আগামী ১১জুলাই দিবাগত রাত ১টায় হবে টুর্নামেন্টটির ফাইনাল।
এদিন ম্যাচটি শুরুর আগে ইংলিশ অধিনায়ক হ্যারি কেইন অসুস্থ হয়ে ছিটকে যাওয়া এরিকসেনের নাম লেখা ইংল্যান্ডের একটি জার্সি তুলে দেন ডেনমার্কের ক্যাপ্টেনের হাতে। যেখানে ইংল্যান্ডের ফুটবলারদের সই ছিল। এরপর শুরু হয় মাঠের লড়াই।
লড়াইয়ের মঞ্চে বল দখলে এগিয়ে ছিল ইংল্যান্ড। ম্যাচের ৫৯ ভাগ সময় বল দখলে রেখেছে তারা। আক্রমণেও অনেক এগিয়ে ছিল ইংলিশরা। পুরো ম্যাচে ২০ বার শট নেওয়া ইংল্যান্ডের ১০টি শটই ছিল অনটার্গেটে যাওয়ার মতো। কিন্তু ডেনিশ গোলরক্ষকের বাধা এড়িয়ে ঠিকঠাক ফিনিশিং দিতে ঘাম ছুটেছে ইংল্যান্ড ফুটবলারদের।
ম্যাচের ১৩ মিনিটে প্রথম সুযোগ পায় ইংল্যান্ড। কিন্তু রাহিম স্টার্লিংয়ের নেওয়া শট ঠেকিয়ে দেন ড্যানিশ গোলরক্ষক। এর দুই মিনিট বাদে ডেনমার্কের জালে শট নেন ইংলিশ অধিনায়ক কেইন। তাঁর লক্ষ্য মিস হয়ে যায়। পাল্টা আক্রমণে পরের মিনিটে ইংলিশদের জালে শট নেন হজবার্গ। সেটা থামিয়ে দেন ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক।
২৫ মিনিটের মাথায় ইংল্যান্ডের পোস্ট লক্ষ্য করে শট নেন ড্যামসগার্ড। বল টার্গেটে রাখতে পারেননি তিনি। অবশেষে ম্যাচের ৩০ মিনিটে গোল পেয়ে যায় ডেনিশরা। ফ্রি-কিক থেকে দুর্দান্ত গোলে দলকে লিড এনে দেন ড্যামসগার্ড। চলতি ইউরোয় এই প্রথম গোল হজম করে ইংল্যান্ড।
পিছিয়ে পড়ার ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়ায় ইংল্যান্ড। তাতে সমতায় ফিরতেও বেশি সময় লাগেনি। তবে গোলটি আসে প্রতিপক্ষের আত্মঘাতী থেকে। ৩৯ মিনিটের মাথায় সিমন জায়েরের আত্মঘাতী গোলে ইংল্যান্ড ম্যাচে ১-১ সমতা ফেরায়। এরপর বিরতির আগে গোল আর না আসলে ১-১ গোলের সমতা নিয়ে শেষ হয় প্রথমার্ধ।
বিরতি থেকেই ফিরেই ৪৯ মিনিটের মাথায় জায়েরকে ফাউল করার জন্য হলুদ কার্ড দেখেন ইংল্যান্ডের হ্যারি মাগুইর। ৫২ মিনিটে ডলবার্গ অফসাইডের আওতায় পড়েন। ফলে ভেস্তে যায় ডেনমার্কের আক্রমণ। তিন মিনিট পর হ্যারি মাগুইরের আক্রমণ প্রতিহত করেন ড্যানিশ গোলকিপার।
এরপর কয়েক দফা আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের পরও গোল পায়নি কোনো দল। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধে বেশ কয়েকবার সুযোগ সৃষ্টি করে ইংল্যান্ড। কিন্তু প্রতিপক্ষের ডি বক্সে গিয়ে বারবার হতাশ হতে হয়েছে। ইংল্যান্ড শিবিরে স্বস্তি আসে ১০৪ মিনিটে। প্রতিপক্ষের ডি বক্সের কাছে ফাউলের শিকার হন রাহিম স্টার্লিং। এতে পেনাল্টি পেয়ে যায় ইংলিশরা। পেনাল্টিতে শট নেন কেইন। ইংলিশ অধিনায়কের পেনাল্টিও ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন ডেনমার্ক গোলরক্ষক। কিন্তু ফিরতি বলে পা ছুঁইয়ে গোল আদায় করে নেন কেইন। সঙ্গেই সঙ্গেই উল্লাসে ভাসে লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম।
পরের সময়টুকু রক্ষণ ধরে রাখে ইংল্যান্ড। ফলে শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি নিয়েই মাঠ ছাড়ে হ্যারি কেইনের দল।
ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে ইউক্রেনকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করে সেমিফাইনালে ওঠে ইংল্যান্ড। অন্যদিকে ডেনমার্ক ২-১ গোলে হারিয়ে দেয় চেক প্রজাতন্ত্রকে। এবার ডেনিশদের হারিয়ে ফাইনালের টিকেট পেল ইংল্যান্ড।