হামজার অভিষেকে বাংলাদেশের ড্র

রক্ষণে দুর্দান্ত, মাঝমাঠেও চমৎকার। বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়েছে আক্রমণে। গোলের খেলা ফুটবলে পার্থক্য গড়ে দেয় গোলই। চেষ্টার কমতি অবশ্য রাখেনি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। কখনও নিজেদের ভুলে, কখনও ভারতের রক্ষণণভাগের দৃঢ়তায় গোলবঞ্চিত হয়েছে বাংলাদেশ। ৮৮ মিনিটে ফয়সাল আহমেদ ফাহিম তার শেষ চেষ্টাটা করেছিলেন। ডি-বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শটে ডিফেন্সকে পরাস্ত করলেও, ভারত গোলরক্ষক বিশাল কাইথ বাম দিকে ঝাঁপিয়ে বাঁচান দলকে। পুরো ম্যাচে ভুল করা বিশালের এই সেইভ বাঁচিয়ে দেয় স্বাগতিক ভারতকে।
এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের প্রথম ম্যাচে আজ মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) ভারতের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। শিলংয়ের জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়ামে ম্যাচটি দিয়ে বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষিক্ত হন হামজা দেওয়ান চৌধুরী। ভালো খেলেও জয় দিয়ে রাঙাতে পারেননি উপলক্ষ। ম্যাচ শেষ হয়েছে ০-০ স্কোরলাইন নিয়ে।
প্রথমার্ধে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে দুদলই পেয়েছিল অসংখ্য সুযোগ। তবে, কাজে লাগাতে পারেনি কেউ। দ্বিতীয়ার্ধে নিজেদের গুছিয়ে নেয় ভারত। শুরু থেকেই আক্রমণে ওঠে। ব্যস্ত রাখে বাংলাদেশকে। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম ১০ মিনিটে অনেক হামজা বনাম ভারতীয় আক্রমণের লড়াই চলেছে। ৪৭ মিনিটে ভারতের আক্রমণ অনেকটা দূর থেকে দৌড়ে এসে নষ্ট করেন হামজা। ৫৭ মিনিটে সুনীল ছেত্রীর দারুণ হেড যেভাবে ফিরিয়ে দেন হামজা, তা ছিল অবিশ্বাস্য। কর্ণার থেকে পাওয়া বলে বাংলাদেশের গোল বরাবর হেড নেন সুনীল। হামজা লাফিয়ে উঠে কাঁধ দিয়ে বাঁচান দলকে।
ম্যাচের ৫১ মিনিটে সুযোগ এসেছিল অতিথিদের কাছেও। মাঝমাঠ থেকে তারিক কাজীর লব ডানপ্রান্তে রিসিভি করেন রাকিব। ভারতীয় রক্ষণকে কাটিয়ে গোলে শটও নেন। তবে, বারপোস্টের জালে প্রতিহত হয় সেটি। ৬১ মিনিটে আবার সুযোগ আসে। ব্লু আর্মিদের গোলরক্ষক বিশাল আরেকটি ভুল করেন। এবার বল এসে পড়ে জনির পায়ে। ডিফেন্সকে কাটিয়ে গোলরক্ষকের সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ানে শট না নিয়ে পাস বাড়ান জনি, বাংলাদেশ হারায় আরেকটি সুবর্ণ সুযোগ। শেষ পর্যন্ত গোলশূন্য ড্র নিয়েই ছাড়তে হয় মাঠ।
বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছে দুর্দান্ত। ঘরের মাঠ হলেও প্রথমার্ধে বেশ পিছিয়ে ছিল ভারত। স্বাগতিকদের রক্ষণকে ব্যস্ত রাখে বাংলার আক্রমণভাগ। শিলংয়ের দর্শকরা নড়েচড়ে বসার আগেই সুযোগ আসে বাংলাদেশের কাছে। সেটি কাজে লাগাতে পারেনি দল। অভিষিক্ত হামজা চতুর্থ মিনিটে দেখান নিজের ঝলক। ভারতের পা থেকে বল কেড়ে নেন। ভালো সুযোগ আসে বাংলাদেশের। হামজার ডিফেন্সচেরা পাসে গোল পেতে এবারও ব্যর্থ লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
ম্যাচের ৯ মিনিটে বাংলাদেশ পায় তৃতীয় সুযোগ। ডানপ্রান্ত থেকে শেখ মোরসালিনের দুরন্ত ক্রসে মাথা ছোঁয়ান ইমন। অল্পের জন্য বার ঘেঁষে চলে যায় বল।
১১ মিনিটে হামজার নেওয়া কর্ণারে মিস করেন হৃদয়। পরের মিনিটেই ভুল করেন ভারত গোলরক্ষক বিশাল কাইথ। কিন্তু, ফাঁকা পোস্টেও বল জালে জড়াতে পারেননি তপু জুনিয়র। ১২ মিনিটেই কয়েকটি আক্রমণ করা বাংলাদেশ অব্যাহত রাখে নিজেদের প্রচেষ্টা। বিশেষত, মোরসালিন ডান দিক থেকে একের পর এক ক্রস করতে থাকেন। ১৭ ও ১৮ মিনিটে পরপর দুবার ক্রস করেন মোরসালিন। তবে, ফিনিশিংয়ের ব্যর্থতায় এগিয়ে যাওয়া হয় না অতিথিদের।
ক্রমাগত আক্রমণে বিপর্যস্ত ভারতও গুছিয়ে নেয় একটু একটু করে। ১৯ মিনিটে লং রানে আক্রমণে উঠলেও তারিক কাজী রক্ষা করেন বাংলাদেশকে। ৩০ মিনিটে ভালো সুযোগ পায় ভারত। বাম দিক থেকে তৈরি করা আক্রমণে ভারত বিপদের আভাস দিয়েছিল। ফরোয়ার্ড রাহুল ভেকের ফিনিশিং টাচ গ্লাভসে জড়িয়ে রক্ষা করেন গোলরক্ষক মিতুল মার্মা।
৩৭ মিনিটে আবারও সুযোগ আসে বাংলাদেশের পায়ে। মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে একাই ভারতের রক্ষণে প্রবেশ করেন রাকিব। তার বাম পায়ের আড়াআড়ি শট লাফিয়ে উঠে গ্লাভস বন্দী করেন বিশাল। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে শেষ হয় প্রথমার্ধ। কখনও ফিনিশিংয়ের অভাব, কখনও প্রতিপক্ষের দৃঢ়তায় গোল পায়নি কোনো দলই।