রোনালদোর সাফল্যের মুকুটে নেশন্স লিগের আরেকটি পালক

নেশন্স লিগের ফাইনালে শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে যেন সময় থমকে গেল। চোখে জল, বুকজুড়ে আবেগ, আর দুই হাত তুলে আকাশের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। যে মানুষটা বয়সের গণ্ডি পেরিয়ে ইতিহাসের পাতায় নিজেকে অমর করে তুলেছেন, তিনি আবারও প্রমাণ করলেন—দেশের জন্য ভালোবাসা কখনও ম্লান হয় না। ক্লাব ফুটবলে অগণিত শিরোপা জেতা এই মহাতারকা, যিনি বারবার শিখর ছুঁয়েছেন, আজও দেশের হয়ে জয়ের আনন্দে কেঁদে ফেলেন।
এই কান্না শুধু আবেগের নয়, এই কান্না দায়িত্ব পালনের, স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখার, বারবার নিজেকে প্রমাণ করার। বয়স চল্লিশের কোঠায় দাঁড়িয়েও যে মানুষটি দেশকে এনে দিলেন আরেকটি আন্তর্জাতিক ট্রফি, তাঁর মাহাত্ম্য যে সময়ের অনেক ঊর্ধ্বে।
নেশন্স লিগের ফাইনালে আজ সোমবার (৯ জুন) স্পেনকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে পর্তুগাল। ২-২ গোলে ড্রয়ের পর টাইব্রেকারে ৫-৩ গোলের জয় এনে দ্বিতীয়বারের মতো নেশন্স লিগ ট্রফি ঘরে তোলে পর্তুগাল। মিউনিখের অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনায় এক রোমাঞ্চকর সন্ধ্যায় নায়ক হয়ে উঠলেন ৪০ বছর বয়সী এক ফরোয়ার্ড, যার গোলে ম্যাচ গড়ায় পেনাল্টিতে।
দুর্দান্ত এক ক্যারিয়ারে ক্লাব ফুটবলে জিতেছেন অগণিত শিরোপা, কিন্তু দেশের হয়ে জেতার স্বাদই যেন তাঁর কাছে সবচেয়ে বড়। ম্যাচ শেষে রোনালদোর চোখ ভেজা, কণ্ঠ ভারী। বললেন, ‘পর্তুগালের হয়ে জেতা সব সময় বিশেষ। অনেক ট্রফি জিতেছি, কিন্তু দেশের হয়ে জেতার আনন্দ আলাদা। চোখের পানি, দায়িত্ব পালন, আর অপার আনন্দ—এই তিনে মিশে আছে আজকের রাত।’
সেমিফাইনালে ফ্রান্সকে ৫-৪ গোলে হারিয়ে আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর ছিল স্পেন। ২০২৩ সালের মার্চ থেকে অবিচ্ছিন্ন অপরাজিত ধারায় থাকা দলটি এগিয়ে যায় ম্যাচের ২১তম মিনিটে, মার্টিন জুবিমেন্দির সহজ ফিনিশে। তবে সেই আনন্দ বেশিক্ষণ টিকেনি। কিছুক্ষণ পরই রোনালদোর দুর্দান্ত এক সৃষ্টিশীলতার পর বল পেয়ে সমতায় ফেরান নুনো মেন্ডেস।
এরপর আবার এগিয়ে যায় স্পেন। মাঝমাঠ থেকে পেদ্রির অনবদ্য এক পাস ধরে গোল করেন মিকেল ওয়ারজাবাল—ইউরো ফাইনালের সেই নায়ক। দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়ায় পর্তুগাল। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রোনালদো যেন হয়ে উঠছিলেন আরও তীক্ষ্ণ। অবশেষে ৬০ মিনিট পেরিয়ে যাওয়ার পর কাছ থেকে বল জালে পাঠিয়ে দলকে সমতায় ফেরান তিনি।
রোনালদো পরে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়লেও তাঁর প্রভাব ছাপ ফেলেছে পুরো ম্যাচজুড়ে। দুই দলই সুযোগ পেলেও অতিরিক্ত সময়ে কেউ গোলের দেখা পায়নি। শেষ পর্যন্ত খেলা গড়ায় পেনাল্টিতে, যেখানে পর্তুগালের খেলোয়াড়েরা একে একে পাঁচটি শট জালে জড়ান। স্পেনের হয়ে আলভারো মোরাতা মিস করায় ব্যর্থ হয় তাদের শিরোপা ধরে রাখার চেষ্টা।
স্পেন কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তে বললেন, ‘খুবই ব্যালান্সড একটা ম্যাচ ছিল। অতিরিক্ত সময়ের শেষে মনে হচ্ছিল আমরা পেনাল্টি এড়াতে পারব। কিন্তু ফুটবলে খুঁটিনাটি মুহূর্তগুলো পার্থক্য গড়ে দেয়। আজ রাতে তারা সামান্য বেশি নিখুঁত ছিল।’