এশিয়া কাপে পাকিস্তানকে বয়কট না করার যে কারণ জানাল বিসিসিআই

মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে এশিয়া কাপ মাঠে গড়াতে যাচ্ছে আজ মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) থেকে। ৮ দলের টুর্নামেন্টটির সবচেয়ে আলোচিত ম্যাচে ১৪ সেপ্টেম্বর মুখোমুখি হবে ভারত-পাকিস্তান। তবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মুখোমুখি হওয়া নিয়ে বেশ জল ঘোলা হয়েছে। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিসিসিআইয়ের সচিব দেবজিৎ সাইকিয়া জানিয়েছেন, পাকিস্তানকে এশিয়া কাপসহ অন্যান্য বহুপাক্ষিক টুর্নামেন্টে বয়কট করবে না ভারত। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনিডিটিভিতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমনটিই জানিয়েছেন।
এশিয়া কাপে গ্রপপর্বের পর আরো দুটি ম্যাচে মখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা আছে ভারত-পাকিস্তানের। দুই দলই সুপার ফোর উঠতে পারলে সেখানে এবং ফাইনালেও দেখা হতে পারে দুই প্রতিবেশী দেশের।
বিসিসিআইয়ের এই অবস্থান মূলত কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া নির্দেশনা ও নীতিমালার প্রতি সম্মান জানিয়ে নেয়া হয়েছে। এতে স্পষ্ট হয়, রাজনৈতিক মতভেদ থাকলেও ক্রীড়াঙ্গনে অংশগ্রহণ ও নিয়মকানুন মানা প্রয়োজন। দেবজিৎ সাইকিয়া বলেন, ‘ক্রিকেট কিংবা অন্য যেকোনো খেলায় ভারতীয় দলের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে, কেন্দ্রীয় সরকারের ক্রীড়া বিভাগ সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়মকানুন ও নীতিমালা তৈরি করেছে। আমি মনে করি, কেন্দ্রীয় সরকার অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এমন নির্দেশিকা প্রণয়ন করেছে, যা জাতীয় পর্যায়ের ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে। এই নীতিমালা অনুসারে আমরা বহুজাতিক টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিই।’
এছাড়া খেলোয়াড়দের অধিকার ও ক্যারিয়ার সুরক্ষার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা হয়েছে। এশিয়া কাপের মতো মহাদেশীয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ না করলে ভারতীয় ক্রিকেটের নবাগতরা বড় টুর্নামেন্ট থেকে বঞ্চিত হবেন বলে মনে করা হচ্ছে। সাইকিয়া বলেন, ‘যদি কোনও কারণে আমরা পাকিস্তানকে বয়কট করি, তাহলে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি) ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) থেকে বিসিসিআই শাস্তির সম্মুখীন হতে পারে। এমন পরিস্থিতি হলে দেশের অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার ব্যাহত হবে। এই কারণেই কেন্দ্রীয় সরকার সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে খেলোয়াড়দের এবং ফেডারেশনের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে।’
চলতি বছরের এপ্রিলে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনার পর পাকিস্তানকে বয়কট করার নানা দাবিও ওঠে ভারতে। এরপর সাবেক ক্রিকেটারদের নিয়ে আয়োজিত টুর্নামেন্ট ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব লেজেন্ডসে (ডব্লিউসিএল) পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ বর্জন করে ভারত।
এরপর ভারতের সাবেক ক্রিকেটার হরভজন সিং ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’তে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘রক্ত ও ঘাম একসঙ্গে বইতে পারে না,’। যেকারণে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলার বিরোধিতা করেন। এছাড়া কেদার যাদবও বলেন, ‘এই ম্যাচটা খেলা উচিত নয় এবং ভারত খেলবে না।’
তবে সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে এবার মাঠে গড়াতে যাচ্ছে এশিয়া কাপ। এবারের আসরের স্বাগতিক দেশ ভারত। তবে সেটি কাগজে-কলমে। পাকিস্তানের সঙ্গে রাজনৈতিক বৈরিতার জেরে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবিআই) পুরো টুর্নামেন্টই সংযুক্ত আরব আমিরাতে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
এর আগে রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে, গত ফেব্রুয়ারি-মার্চে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে, ভারত ও পাকিস্তান নিজেদের মুখোমুখি ম্যাচগুলো নিরপেক্ষ ভেন্যুতে খেলার জন্য তিন বছর মেয়াদের একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে। যেকারণে এবারের টি-টোয়েন্টি সংস্করণের এশিয়া কাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে।