বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে থাকছেন ‘নির্বাসিত’ নারী ক্রিকেটাররা

ভারতে নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর্দা উঠছে আজ মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর)। আসামের গুয়াহাটিতে প্রথম ম্যাচে মাঠে নামবে ভারত-শ্রীলঙ্কা। উদ্বোধনী ম্যাচে আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকবে আরেকটি ব্যাপার। আফগানিস্তানের নির্বাসিত নারী ক্রিকেটরা উপস্থিত থাকবেন মাঠে। তবে খেলতে নয়, দর্শক হিসেবেই মাঠে আসছে আফগান নারীরা।
অস্ট্রেলিয়ায় নির্বাসনে থাকা আফগানিস্তানের একদল নারী ক্রিকেটার আজ গুয়াহাটির আসাম ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (এসিএ) স্টেডিয়ামে উপস্থিত থাকবেন। বিশ্ব ক্রিকেটের মূলধারায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করার প্রাথমিক প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে বিষয়টিকে।
আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (এসিবি) কাছ থেকে স্বীকৃতি পাননি দেশটির নারী ক্রিকেটাররা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে না পারলেও অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন লিগে খেলছে তারা। আজ ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচেও কেবল দর্শক হিসেবেই উপস্থিত থাকবেন আফগান নারীরা।
এসিএ সভাপতি তরঙ্গ গোগোই ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ইএসপিএন ক্রিকইনফোকে বলেন, ‘এই বিষয়ে বিস্তারিত জানেন বিসিসিআই সচিব দেবজিত সাইকিয়া। তিনি আমাদের দিকনির্দেশনা দেবেন। আমরা তার কাছ থেকে আরও তথ্যের অপেক্ষায় আছি। আফগান খেলোয়াড়রা আগামীকাল আসছেন এবং আমরা প্রস্তুতির ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
আফগান নারী খেলোয়াড়দের বিশ্বকাপে আনার বিষয়টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেনি। তবে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে আইসিসি নিশ্চিত করেছিল যে তারা আফগান নারী ক্রিকেটারদের সহায়তায় একটি ‘বিশেষ টাস্ক ফোর্স’ গঠন করবে। যেখানে কোচিং ও পরামর্শ দানের ব্যবস্থা থাকবে। এর জন্য অর্থ সহায়তা দিচ্ছে আইসিসি এবং তিনটি ধনী ক্রিকেট বোর্ড—বিসিসিআই (ভারত), ইসিবি (ইংল্যান্ড) ও সিএ (অস্ট্রেলিয়া)। ঠিক কত টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে তা অবশ্য জানানো হয়নি।
আফগান নারী ক্রিকেটারদের এই সফরের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছিল জুলাইয়ে আইসিসির বার্ষিক সম্মেলনে। তখন পরিকল্পনা ছিল, আফগান নারী ক্রিকেটাররা বেঙ্গালুরুতে একটি ট্রেনিং ক্যাম্পে অংশ নেবেন (যেখানে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ আয়োজনের কথা ছিল)। এছাড়া ভারতের ঘরোয়া দলের বিরুদ্ধে কয়েকটি ম্যাচ খেলবেন এবং এরপর বিশ্বকাপের কিছু ম্যাচ দেখবেন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের কিছু প্রস্তাবিত ম্যাচে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। তবে উদ্বোধনী ম্যাচ ছাড়া বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচে থাকছেন কি না, তা এখনও নিশ্চিত করা হয়নি।
বিশ্বকাপে আফগান নারী ক্রিকেটারদের আসার বিষয়টি খুব বেশি প্রচার না হওয়ার কারণ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে যে, আইসিসি বিষয়টি নিয়ে সতর্ক কৌশল অবলম্বন করছে যেন আফগান সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া না হয়।
২০২১ সালে দেশটিতে তালেবান শাসন শুরু হওয়ার পর থেকে আফগানিস্তানে নারীদের জনজীবনে অংশগ্রহণ কঠোরভাবে সীমিত হয়ে গেছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যেতে পারে না এবং তাদের কণ্ঠস্বর জনসমক্ষে শোনা যায় না। এই পরিস্থিতির কারণে এসিবিও তাদের নারীদের জাতীয় দলকে স্বীকৃতি দিতে পারছে না। যদিও তারা ২০২০ সালে তারা ২৫ জন নারী ক্রিকেটারকে চুক্তিবদ্ধ করেছিল।
এই খেলোয়াড়দের বেশিরভাগই বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন, তবে কয়েকজন যুক্তরাজ্য ও কানাডাতে আছেন। ভিসা জটিলতায় অস্ট্রেলিয়া থেকে তাদের মধ্যে কেউ কেউ ভারতে আসতে পারেননি। তাদের বেশিরভাগই চলতি বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত একটি প্রদর্শনী ম্যাচে অংশ নিয়েছিলেন। যেখানে ‘ক্রিকেট উইদআউট বর্ডার্স একাদশ’-এর মুখোমুখি হয় ‘আফগানিস্তান একাদশ।’