মৃৎশিল্পীর ডেরায়
করোনাকালে গৃহবন্দি বেশির ভাগ মানুষ। দীর্ঘ সময় ধরে গৃহবন্দি থাকার কারণে সবার মন নিশ্চয়ই চাইছে ছুট দিতে দূর অজানার পানে। তাঁদের জন্য করোনার পর ভ্রমণ-গন্তব্য হতে পারে নিভৃত গ্রামের কোনো মৃৎশিল্পীর আঙিনা। ঘোরাঘুরিতে আপনার দেহ ও মন ভরবে প্রশান্তিতে। এ ছাড়া ভ্রমণের কারণে বিভিন্ন জায়গায় নিত্যনতুন অভিজ্ঞতা হবে আপনার, যা পরবর্তী জীবনে অনেক কাজে দেবে। ঢাকা থেকে কাছের দূরত্ব গাজীপুরের ছাতিয়ানি গ্রামে দেখে আসতে পারেন প্রাচীন মৃৎশিল্পীদের জীবনধারা। সেখানকার পাল পরিবারের বংশপরম্পরায় শত বছর ধরে বসতি। শত দারিদ্র্য সত্ত্বেও তারা পূর্বপুরুষের আদি পেশা বদলাননি।
বিশ্বজুড়ে প্রতিটি দেশের রয়েছে নিজস্ব শিল্প ও সংস্কৃতি। এই শিল্প ও সংস্কৃতির পরিচয়েই পরিচিত হয় সেই দেশ বা জাতি। একেকটি শিল্পের বিস্তারের পেছনে রয়েছে একেকটি দেশ বা জাতির অবদান। তেমনই একটি মৃৎশিল্প। ‘মৃৎ’ শব্দের অর্থ মৃত্তিকা বা মাটি, আর ‘শিল্প’ বলতে এখানে সুন্দর ও সৃজনশীল বস্তুকে বোঝানো হয়েছে। এ জন্য মাটি দিয়ে তৈরি সব শিল্পকর্মকে মৃৎশিল্প বলা যায়। এ কাজের সঙ্গে জড়িতদের কুমার বলা হয়। প্রাচীনকাল থেকে বংশানুক্রমে গড়ে ওঠা গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আজও টিকে আছে কোনোরকমে। অতীতে গ্রামের সুনিপুণ কারিগরের হাতে তৈরি মাটির জিনিসের কদর ছিল অনেক বেশি। পরিবেশবান্ধব এ শিল্প শোভা পেত গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে।
গ্রামীণ পথ, নেই কোনো কোলাহল। কাঁঠালের জন্য বিখ্যাত গাজীপুর, বিধায় পথে পথে দেখা পাবেন কাঁঠালগাছের। কোথাও গাছে আম ঝুলে আছে। একটু হাত বাড়ালেই আম। গ্রামীণ মেঠোপথ পাড়ি দিয়ে আপনাকে পৌঁছাতে হবে পালপাড়ায়। যে যার কাজে ব্যস্ত। ১১০টি পরিবার আছে, যাদের জীবনধারণ এই কাজের ওপর নির্ভরশীল। পালপাড়ায় প্রবেশের পর দেখবেন প্রত্যেকের বাড়ির আঙিনায় তাদের তৈরি দ্রব্যসামগ্রী রোদে শুকাতে দিয়েছে। বিভিন্ন ধরনের মাটির খেলনা, পাতিল, প্রদীপ, কলস, পাখির ঘর আরো কত কী। কেউ মাটির পুতুল বানাচ্ছে, কেউ বানাচ্ছে মঙ্গলপ্রদীপ। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, এখানকার সবাই এই কাজ করে। আট বছরের বালক থেকে শুরু করে নব্বই বছরের বয়স্ক লোকটিও কাজ করছেন। দশ পুরুষ ধরে এই কাজ করে যাচ্ছে।
যাবেন যেভাবে : ঢাকা থেকে বিভিন্ন উপায়ে যেতে পারবেন গাজীপুরের ছাতিয়ানি গ্রামে। যাওয়ার প্রথম পথ হলো গুলিস্থান থেকে নরসিংদীগামী বাসে উঠে নামতে হবে নরসিংদীর পাঁচদোনায়, সেখান থেকে কালীগঞ্জগামী বাসে উঠে নামতে হবে কাপাসিয়া মোড়ে, সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চলে যাবেন ছাতিয়ানি। মহাখালী থেকে যেতে চাইলে আপনাকে উঠতে হবে চলনবিল/ বাদশা বাসে, আপনাকে নামতে হবে কাপাসিয়া মোড়ে। কাপাসিয়া মোড় থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে যেতে হবে ছাতিয়ানি গ্রামে। খরচ পড়বে ১৩০ থেকে ১৮০ টাকা। অথবা গাড়ি ভাড়া করে যেতে পারেন কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে। খরচ পড়বে পাঁচ হাজার থেকে সাত হাজার টাকা।