ইলিশ খেতে একদিন

শহরের কোলাহল, অফিসের চাপ আর একঘেয়ে রুটিনে হাঁপিয়ে উঠছিলাম। ঠিক তখনই মাথায় এলো – “চলো, একদিন ইলিশ খেতে যাওয়া যাক মাওয়ায়।” বাংলাদেশে নদী মানেই মাছ আর মাছের রাজা মানেই ইলিশ। বিশেষ করে পদ্মার ইলিশের স্বাদ অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। তাই রওনা হলাম মাওয়া ঘাটের পথে।
যাত্রা শুরু
গুলিস্তান থেকে মাওয়া যাওয়ার বাস ধরলাম। টিকিট হাতে পেয়ে মনে হচ্ছিল যেন ছোট্ট একটা অ্যাডভেঞ্চারের শুরু। রাস্তায় দুপাশে সবুজ মাঠ, নদীর ঘ্রাণ আর খোলা আকাশ ভ্রমণকে করে তুলেছিল আরো মনোমুগ্ধকর। মাত্র দেড়-দুই ঘণ্টার পথ, কিন্তু মনে হচ্ছিল এ এক অন্যরকম যাত্রা।
মাওয়ার পদ্মা ঘাট
ঘাটে নেমেই চোখে পড়ল জেলেদের ব্যস্ততা। সদ্য ধরা রুপালি ইলিশ নৌকা থেকে নামানো হচ্ছে। কেউ কিনছে, কেউ দরদাম করছে। পদ্মার বাতাসে ভেসে আসা মাছের ঘ্রাণ যেন ক্ষুধা আরও বাড়িয়ে দিল। দামও খুব বেশি না – ১৮০০ থেকে ২২০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে এক কেজি ওজনের টাটকা ইলিশ।
ভোজনরসিকদের স্বর্গ
মাওয়ার ফেরিঘাটে সারি সারি ভাতের হোটেল। বাইরে থেকে সাধারণ টিনের চালা মনে হলেও ভেতরে ঢুকতেই অন্য জগৎ। গরম ভাতের সাথে ভাজা ইলিশ – প্রথম কামড়েই যেন মনে হলো, এতদিন যা খেয়েছি তা কেবল নামেই ইলিশ! এখানে স্বাদে আছে নদীর টান, তাজা মসলার গন্ধ আর দেশি রান্নার জাদু। আর আছে ইলিশ মাছের লেজ ভর্তা।
গরম ভাত, মচমচে ভাজা ইলিশ, সাথে ভর্তা আর শুকনো মরিচ – টেবিলে আসতেই বুঝলাম আজকের দিনটা একেবারেই আলাদা। ২০০ টাকায় এক পিস ভাজা ইলিশ, ২০০ টাকায় ডিম ভাজা – স্বাদের কোনো তুলনা হয় না।
পদ্মার সান্ধ্যসৌন্দর্য
ভোজন শেষ করে ফেরীঘাটে দাঁড়িয়ে দেখলাম নদীর ওপরে সূর্যাস্ত। লাল আভায় ভরা পদ্মা যেন চোখে প্রশান্তির বৃষ্টি নামিয়ে দিল। নৌকার ভেসে চলা, মাছ ধরার দৃশ্য আর চারপাশের প্রকৃতি একদিনের এই ভ্রমণ যেন মনে নতুন শক্তি যোগাল।
ফিরে আসা
সন্ধ্যা নামতেই বাসে চড়ে ফিরলাম ঢাকায়। কিন্তু পুরো পথ জুড়ে মনে হচ্ছিল পদ্মার সেই ভ্রমণ আর ইলিশের স্বাদ চিরকাল রয়ে যাবে।