শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক মন্দা করোনার চেয়ে প্রাণঘাতী হতে পারে : আশঙ্কা চিকিৎসকদের
শ্রীলঙ্কায় চলমান ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দা কোভিড মহামারির চেয়ে অনেক বেশি মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন দেশটির চিকিৎসকেরা। খবর হিন্দুস্তান টাইমসের।
শ্রীলঙ্কার চিকিৎসকেরা গতকাল রোববার সতর্ক করে বলেছেন, তাঁদের হাতে থাকা জীবন রক্ষাকারী ওষুধের জোগান প্রায় শেষের পথে; এ কারণে শঙ্কায় রয়েছেন তাঁরা। দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপ রাষ্ট্রটি চরম বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র সংকট মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে।
সংবাদ সংস্থা এএফপির বরাতে হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কা মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (এসএলএমএ) বলেছে, সে দেশের হাসপাতালগুলোতে আমদানি করা চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
এ ছাড়া গত মাস থেকে বেশ কয়েকটি হাসপাতালে নিয়মিত অস্ত্রোপচার বন্ধ রয়েছে। কারণ, অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজনীয় চেতনানাশক ওষুধ রয়েছে খুব কমই। এসএলএমএ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জরুরি চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থাও খুব শিগগিরই হয়তো ঠিক হচ্ছে না।
চিকিৎসা পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসেকে সতর্ক করে এসএলএমএ’র পক্ষ থেকে কয়েকদিন আগে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। এসএলএমএ’র উদ্ধৃতি দিয়ে এএফপি বলেছে, ‘আমরা খুব বেছে বেছে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছি। আমাদের এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কারা চিকিৎসা পাবে, আর কারা পাবে না।’
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘যদি কয়েক দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় সরবরাহ না পাওয়া যায়, হতাহতের সংখ্যা কোভিড মহামারি চেয়ে অনেক বেশি হবে।’
এদিকে, শ্রীলঙ্কায় চলমান সংকটময় পরিস্থিতি নিয়ে জনগণের ক্ষোভ ক্রেমেই বাড়ছে। প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের পদত্যাগের দাবিতে গতকালও রাজধানী কলোম্বোতে বড় ধরনের বিক্ষোভ দেখা গেছে। হাজার হাজার মানুষ ভারী বৃষ্টি উপেক্ষা করে দ্বিতীয় দিনের মতো রাজাপাকসের সাগর পাড়ের কার্যালয়ের বাইরে বিক্ষোভ করেন।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে শ্রীলঙ্কার এমন ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে আলোচনার জন্য ৪২ জন স্বতন্ত্র এমপির সমন্বয়ে গঠিত ১১-দলীয় জোটকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
ওই বৈঠকে জোটনেতারা প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসেকে তাঁর বড় ভাই প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসেকে অপসারণের অনুরোধ করবেন বলে জানা গেছে। সেইসঙ্গে সংকট মোকাবিলায় একটি নতুন মন্ত্রিসভা গঠনেরও আহ্বান জানাবেন তাঁরা।
গত সপ্তাহে শুধু মাহিন্দা রাজাপাকসে ছাড়া শ্রীলঙ্কার পুরো মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করে। ১৯৪৮ সালে যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর এই প্রথম এমন অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়েছে শ্রীলঙ্কা।