অস্ট্রেলিয়ার ১০ প্রাকৃতিক বিস্ময়

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি অস্ট্রেলিয়া। দেশটিতে আছে অসংখ্য নৈসর্গিক সুন্দর স্থান। একই দেশে এত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কমই দেখা যায়। অস্ট্রেলিয়ার ১০টি নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সুন্দর স্থানের কথা তুলে ধরেছে ওয়ান্ডারলিস্ট ওয়েবসাইট। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী বিস্ময়কর স্থানগুলোর পরিচিতি দেওয়া হলো।
১. লর্ড হাওয়ি দ্বীপ
অস্ট্রেলিয়ার প্রকৃতিপ্রেমীদের স্বর্গ লর্ড হাওয়ি দ্বীপ। আধা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দ্বীপটির অবস্থান অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার তাসমান সাগরে। দ্বীপের মাঝে গম্বুজের মতো উঁচু হয়ে আছে একটি মৃত আগ্নেয়গিরি। দ্বীপের অনেক স্থানেই এখনো মানুষের পা পড়েনি। তাই প্রকৃতি যেন পুরোটাই আদিম। এই দ্বীপের কিছু প্রাণী ও গাছ পৃথিবীর অন্য কোথাও দেখা যায় না। নীল সাগর, পাহাড়ি ভূপ্রকৃতি আর সবুজের চাদরের মতো পুরোটা জুড়ে বিস্তৃত গাছপালা লর্ড হাওয়ি দ্বীপকে অনন্য করে তুলেছে।
২. দ্য পিনাকলস
বিস্তীর্ণ জোড়া হলদে বালি আর মাঝেমধ্যে প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে থাকা ক্ষয়ে যাওয়া পাথুরে টিলা। প্রাকৃতিক এই সৌন্দর্যের নাম পিনাকল। এর অবস্থান পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার সারভান্তেস শহরের কাছে ন্যামবার্গ জাতীয় পার্কে। চুনাপাথর সমৃদ্ধ পিনাকল তৈরি হয়েছে ৩০ হাজার বছর পূর্বে যখন স্থানটি ছিল সমুদ্রতটের কাছে। পাথুরে টিলাগুলো বালি থেকে কয়েক মিটার উঁচু। এই অঞ্চলে দেখা মিলবে বাদামি ক্যাঙ্গারু, ইমু আর কয়েকজাতের সরীসৃপ।
৩. দ্য ওলগাস-কাটা জুটা
লাল মাটির টানা রাস্তার পাশে অদ্ভুত আকৃতির কিছু পাহাড়। দেখে মনে হবে পাহাড়গুলোর গা কেউ যেন কেউ কেটে সমান করেছে। ওলগা নামের এই পাহাড়গুলো মধ্য অস্ট্রেলিয়ার আইরেস রক নাম দীর্ঘ পাহাড়ের একটি বিচ্ছিন্ন অংশ। তবে আইরেসের চেয়ে এই উচ্চতা বেশি। ওলগার গড় উচ্চতা ৩৪৮ মিটার (১১৪৮ ফুট)। ওলগায় ৩৬টি অংশ থাকলেও ধারণা করা হয়, এটি একটি বড় পাথর।
৪ কাকাডু
উত্তর অস্ট্রেলিয়ার একটি বিস্তীর্ণ পার্ক কাকাডু। হরেক রকমের সবজি, বন্যপ্রাণী, বাস্তুসংস্থান আর ভূপ্রকৃতির বৈচিত্র্যের জন্য পার্কটি বিখ্যাত। বিভিন্ন ঋতুতে পার্কটির প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটে। কাকাডু পার্কটি প্রায় ২০ হাজার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। ধারণা করা হয়, পার্কটিতে এক হাজার ৭০০ প্রজাতির গাছ আছে। ডারউইন থেকে ১৭১ দক্ষিণ-পূর্বে পার্কটির অবস্থান। আরেকটি কারণে এই পার্ক বিখ্যাত। এখানেই আছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইউরেনিয়াম খনি। পার্কটিতে দেখা যায় নদী ও সমুদ্রের পানির কুমির। প্রতিবছর হাজারো দর্শক পার্কটি দেখতে আসেন।
৫. দ্য টুয়েলভ অ্যাপেসটেলস
সমুদ্রতীরে দাঁড়িয়ে থাকা পাথুরে পাহাড় দ্য টুয়েলভ অ্যাপেসটেলস। ভূমিক্ষয় আর লাইমস্টোনোর কারণে সমুদ্রতটে এমন ক্ষয়ে যাওয়া পাহাড় তৈরি হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া সমুদ্রতীরবর্তী গ্রেট ওশেন রোড থেকে এই নৈসর্গিক সৌন্দর্য চোখে পড়ে। তবে মজার বিষয় হলো, পাহাড়ের সংখ্যা নয়টি হওয়া সত্ত্বেও এর নাম হয় টুয়েলভ অ্যাপেসটেলস। অপর একটি ভেঙে পড়ায় বর্তমানে এর সংখ্যা বর্তমানে আট। প্রতিবছর দুই থেকে তিন সেন্টিমিটার হারে পাহাড়ের উচ্চতা কমছে।
৬. কিংস ক্যানিয়ন
অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চলের ওয়াটারাক্কা জাতীয় পার্কের মধ্যেই অবস্থিত কিংস ক্যানিয়ন। অ্যালিস স্প্রিং থেকে এর অবস্থান দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং ডারউইন থেকে এক হাজার ৩১৬ মিটার দক্ষিণে। এই পাহাড়ি অঞ্চলে মিলবে ৬০০ প্রজাতির গাছ ও প্রাণী, যার অনেকটি এ অঞ্চলের বাইরে পাওয়া যায় না। পাহাড় ঘুরে বেড়ান এমন পর্যটকের কাছে এ অঞ্চল বেশ আকর্ষণীয়।
৭. আউটব্রেক
আয়তনে প্রায় পশ্চিম ইউরোপের সমান বিস্তীর্ণ তৃণভূমিই আউটব্রেক। মূলত আউটব্রেক বলতে এমন অঞ্চল বোঝায়, যা অনেক প্রত্যন্ত। আর বসতির কাছাকাছি এমন বিস্তীর্ণ তৃণভূমিকে বলে ‘দ্য বুশ’। দিনের পর দিন প্রকৃতির মাঝে ঘুরতে ভালোবাসেন এমন পর্যটকের কাছে আউটব্রেক বেশ আকর্ষণীয়।
৮. সিডনি হার্বর ও অপেরা হাউস
প্রকৃতি আর মানুষের নির্মিত স্থাপনার এক মিলিত সৌন্দর্য সিডনি হার্বর। এর ওপরই অস্ট্রেলিয়ার দুটি বিখ্যাত স্থাপনা সিডনি অপেরা হাউস ও সিডনি হার্বর ব্রিজ। অস্ট্রেলিয়া বলতেই প্রথমেই চোখে ভাসে সিডনি অপেরা হাউস। এটি বিশ্বের অন্যতম একটি শিল্পকেন্দ্র। প্রতিবছর প্রায় তিন লাখ মানুষ সিডনি হার্বর ও এর নিকটবর্তী বিভিন্ন স্থাপনা দেখতে আসেন।
৯. আইরেস রক-উরুলু
অনেকেই একে অস্ট্রেলিয়ার চিহ্ন বলেন। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এক টুকরো পাথরের পাহাড়। ৩৪৮ মিটারের মতো উঁচু এই পাহাড়ের পরিধি ৯ দশমিক ৪ কিলোমিটার। অস্ট্রেলিয়ার আনানগু অধিবাসীদের কাছে এটি পবিত্র স্থান। অ্যালিস স্প্রিং শহরের কাছে উলুরু-কাতা জুটা পার্কে আইরেস রক অবস্থিত। এখানে অনেক গুহাচিত্র ও আদিম মানুষের আঁকা ছবির খোঁজ পাওয়া গেছে। উলুরু ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্বঐতিহ্যের অংশ।
১০. গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ
বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময় গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ। এর সৌন্দর্য মহাশূন্য থেকেও দেখা যায়। দুই কোটি ৫০ লাখ বছর আগে এটি সৃষ্টি হয়েছে। কুইন্সল্যান্ড থেকে সাগরে এটি তিন হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। গ্রেট ব্যারিয়ার রিফে ৪০০ রকম কোরাল ও দেড় হাজার প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। দীর্ঘদিন ধরে এটি ব্যবহার করেছেন অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীরা। তাঁদের কাছে এটি পবিত্র স্থান। বিশ্বের পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ গ্রেট ব্যারিয়ার রিফকে কেন্দ্র করে এর কাছের হুইটসানডে দ্বীপে ও কেয়ার্নসে অনেক হোটেল ও ক্যাসিনো গড়ে উঠেছে।