সামরিক বাহিনী ছাড়াই দেশ!

বর্তমান সময়ে নিজস্ব সামরিক বাহিনী ছাড়া কোনো স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ চিন্তাই করা যায় না। সীমান্তে সুরক্ষা, অন্য দেশের হামলা থেকে রক্ষা বা জঙ্গিগোষ্ঠীর হাত থেকে রক্ষায় প্রয়োজন সামরিক বাহিনী। এ ছাড়া দেশের বড় দুঃসময়েও সহায়ক হয় সামরিক বাহিনী। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, চীনসহ অনেক দেশ শুধুমাত্র সামরিক শক্তির জোরেই বিশ্বনেতৃত্ব দিচ্ছে। অথচ বর্তমান সময়েও ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দেশ আছে যেখানে কোনো সামরিক বাহিনী নেই। সামরিক বাহিনী না থাকার পেছনে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিকসহ বিভিন্ন কারণের পাশাপাশি জনগণের যুদ্ধবিরোধী মনোভাবও কাজ করেছে।
একনজরে দেখা যাক বর্তমান বিশ্বের সামরিক বাহিনী না থাকা দেশগুলো :
কোস্টারিকা
দুই আমেরিকা মহাদেশের মধ্যবর্তী ৫১ হাজার ১০০ বর্গকিলোমিটারের ছোট দেশটি ১৯৪৮ সালের গৃহযুদ্ধ শেষে স্বাধীনতা লাভ করে। ওই যুদ্ধের পরই দেশটিতে সামরিক বাহিনীর অবসান ঘটানো হয়। দেশে সামরিক বাহিনী বিলুপ্ত করার দিনটি বেশ ঘটা করেই পালন করে কোস্টারিকা। প্রতিবছর পয়লা ডিসেম্বর সামরিক বাহিনী বিলুপ্ত দিবস উদযাপন করে কোস্টারিকাবাসী। সামরিক বাহিনী না থাকলেও দেশের নিরাপত্তার পুরো বিষয় দেখে কোস্টারিকার পুলিশ বাহিনী।
গ্রানাডা
আটলান্টিক মহাসাগরের ক্যারিবীয় অঞ্চলে অবস্থিত ৩৪৮ দশমিক ৫ বর্গকিলোমিটারের ছোট এই দ্বীপরাষ্ট্র। ১৯৮৩ সালে রাষ্ট্রটি দখল করে যুক্তরাষ্ট্র। ওই বছর ডিসেম্বরের মার্কিন সেনারা গ্রানাডা ত্যাগ করে। তবে, ৮৩ সালের পর থেকেই দেশটিতে কোনো সামরিক বাহিনী নেই। গ্রানাডার পুলিশ বাহিনীর একটি বিশেষ অংশ দেশের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করে।
কিরিবাতি
প্রশান্ত মহাসাগরে বিস্তৃত এলাকাজুড়ে ছড়ানো কিন্তু মাত্র ৮১১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশ কিরিবাতি। দেশটির কোনো সামরিক বাহিনী নেই। দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য আছে কিরিবাতি পুলিশ সার্ভিস। আর বড় কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকিতে কিরিবাতির সহায়তায় এগিয়ে আছে প্রতিবেশী দেশ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড।
অ্যান্ডোরা
স্পেন ও ফ্রান্স, দক্ষিণ পশ্চিম ইউরোপের বড় দুই দেশের সীমান্তে আবস্থিত অ্যান্ডোরা। চারদিকে ভূমিবেষ্টিত ৪৬৭ দশমিক ৬৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ছোট দেশটির কোনো উল্লেখযোগ্য সামরিক বাহিনী নেই। হাতে গোনা কয়েকজন সদস্যের যে সামরিক বাহিনী আছে, যার দায়িত্ব শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় বিশেষ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ। তবে দুটি পৃথক সামরিক চুক্তি অনুযায়ী অ্যান্ডোরার নিরাপত্তায় এগিয়ে আসে স্পেন ও ফ্রান্স। আর দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করে অ্যান্ডোরার জাতীয় পুলিশ বাহিনী।
ভ্যাটিকান সিটি
বিশ্বের ক্ষুদ্রতম দেশ ভ্যাটিকান সিটি। ইতালির রোম শহরের মধ্যেই অবস্থিত রাষ্ট্রটির আয়তন মাত্র ১১০ একর। চারদিকে দেয়ালঘেরা রাষ্ট্রটিতে একসময় তুলনামূলক বেশ শক্তিশালী সামরিক বাহিনী ছিল। ওই বাহিনী শুধুমাত্র পোপের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখত। ১৯৭০ সালে ষষ্ঠ পোপ পল ভ্যাটিকানের সামরিক বাহিনী বিলুপ্ত করেন। যেহেতু রোমের মধ্যেই রাষ্ট্রটির অবস্থান তাই এর নিরাপত্তার বিষয়টি ইতালিই দেখে।
আইসল্যান্ড
উত্তর আটলান্টিক ও উত্তর মহাসাগরের মধ্যে অবস্থিত ইউরোপের দ্বীপরাষ্ট্র আইসল্যান্ড। এক লাখ দুই হাজার ৭৭৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশটিতে ১৮৬৯ সালেও নিজস্ব সামরিক বাহিনী ছিল। এর পরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিশেষ চুক্তি করে আইসল্যান্ড। ওই চুক্তিতে দেশটির সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রকে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত আইসল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন সামরিক বাহিনী অবস্থান করেছে। ওই বছরই যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করে, আইসল্যান্ডে কোনো সামরিক বাহিনীর ঘাঁটি ছাড়াই তারা দেশটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। আইসল্যান্ডের অবস্থান ইউরোপ মহাদেশে হলেও এটি যুক্তরাষ্ট্রের বেশ নিকট দূরত্বেই অবস্থিত।