পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ পাঁচজন সাক্ষ্য দিতে চান
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ পাঁচ নাগরিক ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে চান। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ও সংশ্লিষ্ট আদালতের অনুমতি চাইছেন তাঁরা।
সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মিয়া সুমরো, সাবেক মন্ত্রী ইসহাক খান খাকওয়ানি ও পাকিস্তানের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ডন মিডিয়া গ্রুপের চেয়ারপারসন আমবর হারুন সায়গল সাক্ষ্য দিতে চান। আগ্রহী রয়েছেন আরো দুজন ব্যবসায়ী। প্রতিবেদনটি আজ বুধবার আল-জাজিরা অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত হয়েছে।
২০১৩ সালে ১ অক্টোবর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২৯ অক্টোবর আপিল করেন তিনি। চলতি বছর ২৯ জুলাই সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে রায় ঘোষণা দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। গত ৩০ সেপ্টেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।
চারটি অভিযোগে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
আল জাজিরায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাক্ষ্য দিতে আগ্রহী পাকিস্তানের ওই পাঁচ নাগরিক দাবি করেছেন, ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী করাচিতে ছিলেন। চারটি ঘটনাই ঘটেছিল এপ্রিল মাসে।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মিয়া সুমরো জানান, সালাউদ্দিন করাচিতেই ছিলেন। করাচি ত্যাগের আগে তাঁর সঙ্গে প্রায়ই সালাউদ্দিনের দেখা হতো। তিনি বলেন, ‘নির্দোষ ব্যক্তি শিকার হচ্ছেন এবং অন্যায্য ঘটছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘ন্যায়বিচার হলে অবশ্যই সাক্ষীদের অনুমতি দেওয়া উচিত। যেকোনো সময় আমি সাক্ষ্য দিতে প্রস্তুত।’
১৯৭১ সালে ডনের বর্তমান চেয়ারম্যান আমবর হারুন সায়গলের বয়স ছিল ২০ বছর। তিনি বলেন, ‘মার্চের শেষ থেকে মধ্য এপ্রিল পর্যন্ত সালাউদ্দিন আমাদের বাসায় (করাচি) ছিল।’ তিনি আরো বলেন, ‘এটাই সত্য। বাংলাদেশের আদালত যদি অনুমতি দেয় তবে অবশ্যই মানুষের জীবন বাঁচাতে সাক্ষ্য দিতে আমি বাংলাদেশে যেতাম।’
সালাউদ্দিন কাদেরের পক্ষ্যে সাক্ষ্য দিতে আগ্রহী মুসলিম লীগ নেতা মোহাম্মদ মিয়া সুমরো ১৬ নভেম্বর ২০০৭ থেকে ২৫ মার্চ ২০০৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এ সময় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন পারভেজ মোশাররফ। পারভেজ মোশাররফের ক্ষমতা ছাড়ার পর ১৮ আগস্ট ২০০৮ থেকে ৯ সেপ্টেম্বর ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্বও পালন করেন। এ সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইউসুফ রাজা গিলানি।
সাক্ষ্য দিতে আগ্রহী পাকিস্তানের সাবেক মন্ত্রী ইসহাক খান খাকওয়ানি বর্তমানে তেহরিক-ই-ইনসাফের ভাইস প্রেসিডেন্ট। দলটির সভাপতি সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান খান। দলটি বর্তমানে পাকিস্তানের তৃতীয় বৃহত্তম দল। তিনি মুসলিম লীগের নেতা ছিলেন, পরে ইমরান খানের দলে যোগ দেন।
সাক্ষ্য দিতে আগ্রহী অন্য পাকিস্তানির নাম আমবর হারুন সায়গল। করাচিভিত্তিক প্রভাবশালী সায়গল পরিবারের সদস্য তিনি। সায়গল পরিবারই পাকিস্তানের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ডন মিডিয়া গ্রুপের মালিক। আমবর হারুন বর্তমানে ওই গ্রুপের চেয়ারম্যান।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই পাঁচ সাক্ষ্যদাতা আশা করেছিলেন তাঁদের কাছে থাকা প্রমাণ তাঁরা ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করতে পারবেন। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ৪১ জনের তালিকা দিয়েছিলেন তাঁর আইনজীবী। তবে মাত্র পাঁচজন ব্যক্তিই সাক্ষ্য দিতে পেরেছেন।