মানবিক চোর!

চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী—এই প্রবাদবাক্য মিথ্যা প্রমাণিত করেছেন এক চোর। চুরি করলেও ধর্মের বিধান তিনি মেনে চলেন!
এই চোরের প্রধান টার্গেট ভারতে যাওয়া বিদেশিরা। প্রথমে তাঁদের সঙ্গে ভাব জমান, তার পর সুযোগ বুঝে দামি মোবাইল, ল্যাপটপ, নগদ অর্থ বা ডলার নিয়ে সরে পড়েন। কিন্তু তাঁরা যাতে বিপদে না পড়েন, এ কথাও তিনি মাথায় রাখেন। এ কারণেই ডাক অথবা কুরিয়ারযোগে তাঁদের পাসপোর্ট ও প্রয়োজনীয় নথি ফেরত পাঠিয়ে দিতেন।
শুধু তা-ই নয়, তাঁরা সেগুলো ঠিকমতো ফেরত পেয়েছেন কি না, তা জানার জন্য ফোনও করতেন। এমন ‘দায়িত্ববান’ চোরকে অবশেষে হাতেনাতে পাকড়াও করেছে মুম্বাইয়ের রেল পুলিশ। মুম্বাইয়ের সিএসটি স্টেশন থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ওই চোরের নাম সুব্রহ্মণ্যম মাদ্দালি। বয়স ৬১ বছর। পুলিশ জানায়, ছোট থেকেই চুরিতে হাত পাকিয়েছিলেন তিনি। বছর তিনেক আগে মুম্বাইয়ের একটি বেসরকারি পোশাক প্রস্তুতকারক সংস্থা থেকে অবসর নিয়েছেন। অন্ধ্রপ্রদেশের এই বাসিন্দা তেলেগু, মারাঠি, হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী।
মুম্বাইয়ের রেল পুলিশের কর্মকর্তা বাবান কোয়েল জানান, সৌদিপ্রবাসী দেবীদাসন শিবরামের ব্যাগ চুরি করে চম্পট দেন সুব্রহ্মণ্যম মাদ্দালি। তার পর তিনি ব্যাগের মধ্যে থাকা পাসপোর্টটি ভারতে সৌদি দূতাবাসে ডাকযোগে পাঠিয়ে দেন। এ ছাড়া চেন্নাই মেইলের যাত্রী নাইজেরিয়ার বাসিন্দা রুকো মিগা মুফিজা ইসার ব্যাগ চুরি করেন তিনি। ইসা মুম্বাইয়ের আন্নামালাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ইসার ব্যাগ থেকে ল্যাপটপ এবং ৫০ হাজার রুপি চুরি করলেও পরে তাঁর পাসপোর্টটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে দেন। পরে একটি পাবলিক টেলিফোন বুথ থেকে ইসাকে ফোন করে জেনে নেন, তিনি তাঁর পাসপোর্টটি ঠিকঠাক ফেরত পেয়েছেন কি না। এভাবেই চলছিল তাঁর চুরি-কাণ্ড। কিন্তু সম্প্রতি মুম্বাইয়ে সৌদি আরবে কর্মরত কর্ণাটকের আতাউর রহমান মহম্মদ হুগার ব্যাগ চুরি করতে গিয়ে রেল পুলিশের কাছে ধরা পড়েন সুব্রহ্মণ্যম।
ওই কর্মকর্তা আরো জানান, প্রতারণা ও চুরিসহ একাধিক অভিযোগে পুলিশ দীর্ঘদিন ধরেই তাঁকে খুঁজছিল। স্টেশনের সিসিটিভির ফুটেজ এবং তাঁর টুপি ও রোদচশমা দেখে তাঁকে চিহ্নিত করে পুলিশ।
ধরা পড়ার পর পুলিশি জেরায় সুব্রহ্মণ্যম মাদ্দালি সব স্বীকার করেন। তিনি জানান, অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা হলেও কর্মসূত্রে তিনি দীর্ঘদিন ধরে মুম্বাইয়ে থাকতেন। মদের টাকা জোগাড়ের জন্যই তিনি চুরি করতেন। এ কারণে তাঁর স্ত্রী ও ছেলে তাঁকে ছেড়ে বিদেশ চলে গেছে।