এক ফোন থেকে শুরু হয়েছিল পানামা পেপারস

‘হ্যালো, আমি জন ডো, তথ্যে আগ্রহ আছে?’ প্রায় দেড় বছর আগে জার্মানির সংবাদমাধ্যম জিটডয়েচ সাইতং পত্রিকার প্রতিবেদক বাস্তিয়ান ওবারমায়ার ধরা একটি ফোনকলে কথাগুলো বলা হয়। পরিচয় গোপনকারী এক ব্যক্তির রহস্যময় ওই ফোনকল দিয়েই শুরু হয়েছিল বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ‘পানামা পেপারর্স’-এর।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, রহস্যময় ফোনকলের সঙ্গে সঙ্গেই নিজের আগ্রহের কথা জানান বাস্তিয়ান ওবারমায়ার। এর পরের ঘটনা ছিল কল্পনাতীত। ডো নামে পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি এক কোটি ১৫ লাখ ডিজিটাল নথি পাঠায়। নথিগুলো ছিল পানামার এক আইনি সহায়তা প্রতিষ্ঠানের। চার দশকের বেশি সময় ধরে ওই আইনি প্রতিষ্ঠান বিশ্বের সম্পদশালী ও ক্ষমতাবান অনেক ব্যক্তির সম্পদ লুকাতে অফশোর কম্পানি তৈরি করে দিত।
কথিত ডো-এর পাঠানো সব তথ্য নিয়ে ২০১৪ সালে কাজ বিশেষ প্রকল্পের কাজ শুরু করেন বাস্তিয়ান ওবারমায়ার এবং তাঁর সহকর্মী ফ্রেডেরিক ওবারমায়ের। আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানী সাংবাদিক সংস্থার (আইসিআইজে) বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অনেক সাংবাদিক ওই প্রকল্পের জন্য কাজ করেছেন। বিশ্বজুড়ে দুই বছর ধরে চলা এই অনুসন্ধান কাজ প্রকাশের আগ পর্যন্ত লোকচক্ষুর আড়ালেই থেকে যায়। আর তথ্য সাংবাদিকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া ডো-এর পরিচয় অন্ধকারেই রয়ে যায়। বাস্তিয়ান ও ফ্রেডেরিক কোনো ধারণাই নেই ওই ‘ডো’ সম্পর্কে।
গত রোববার থেকে বিশ্বের কয়েকটি প্রভাবশালী সংবাদ সংস্থা একযোগে ও ধারাবাহিকভাবে ‘পানামা পেপারস’ প্রকাশ করে। এর মাধ্যমে জানা যায় অনেক বিশ্বনেতা, জনপ্রিয় অভিনেতা ও ব্যক্তিত্ব কীভাবে পানামার নির্দিষ্ট আইনি প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নিয়ে লোকচক্ষুর অন্তরালে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। আর কিছু ক্ষেত্রে লুকোনো সম্পদের জন্য কোনো করও ফাঁকি দিয়েছেন নির্দিষ্ট ব্যক্তি।
পানামা পেপারস প্রকাশিত হওয়ার ফলাফল ছিল বিস্ফোরক। এরই মধ্যে অফশোর সম্পদ গড়ার অভিযোগে আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। সেখানে উল্লেখিত আরো হাজারো ব্যক্তির মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেত্রো প্রোশেঙ্কো, সৌদি বাদশাহ সালমান, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের পরিবার, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নিকট সহযোগী, ব্রিটিশ প্রেসিডেন্ট ডেভিড ক্যামেরনের প্রয়াত বাবা এবং তারকা ফুটবলার লিওনেল মেসি।
পানামা পেপার্সের পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামাসহ অনেক বিশ্বনেতারা আন্তর্জাতিক কর ব্যবস্থা সংস্থারের আহ্বান জানিয়েছেন।