সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী আইসিইউতে

উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও সমাজকর্মী মহাশ্বেতা দেবীর শারীরিক অবস্থা সংকটজনক। তাঁকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। বয়োবৃদ্ধ এ লেখিকাকে গত ২২ মে ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে কলকাতার একটি বেসরকারি নার্সিং হোমে ভর্তি করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ চিকিৎসাতেও তাঁর অবস্থার উন্নতি হয়নি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তিনদিন আগে তাঁর অবস্থার অবনতি ঘটে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রক্তে বিষক্রিয়া ও মূত্রনালিতে সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় তাঁর অবস্থার অবনতি হয়েছে। তাঁর দুটি কিডনিই বিকল হয়ে গিয়েছে। ফলে নিয়মিত ডায়ালিসিসও করতে হচ্ছে।
চিকিৎসকরা কোনো আশার বাণী শোনাতে পারছেন না। তাঁরা জানিয়েছেন, সর্বোচ্চ পর্যায়ের অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হচ্ছে। তাতেও এখন পর্যন্ত আশানুরূপ সাড়া দিচ্ছেন না লেখিকা। এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানিয়েছেন, ৯১ বছর বয়সে একজন রোগীর ক্ষেত্রে রক্তের সংক্রমণ ও মূত্রনালিতে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ ঠেকানোর চিকিৎসা বেশ কঠিন।
বামপন্থী লেখক হিসেবে পরিচিত মহাশ্বেতা দেবী লেখালেখির পাশাপাশি আদিবাসীদের সমাজ মান উন্নয়নে নিরলস কাজ করেছেন। বিশেষ করে লোধা ও শবরদের জীবন মান উন্নয়নে তিনি দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে গিয়েছেন। প্রায় এককভাবেই তিনি এ লড়াই করেছেন।
প্রখ্যাত কবি মনীশ ঘটকের (যুবনাশ্ব) মেয়ে মহাশ্বেতার জন্ম ১৯২৬ সালে ঢাকায়। এখানেই লেখাপড়া। তবে দেশ-বিভাজনের পর চলে যান ভারতে। ভর্তি হয়েছিলেন শান্তিনিকেতনে। ইংরেজি সাহিত্যে এমএ করার পর অধ্যাপনা করেছিলেন। প্রখ্যাত নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাইকে নিয়ে প্রথম লিখে সবার নজরে আসেন। এরপর তিনি অসংখ্য গল্প-উপন্যাস লিখেছেন।
সমাজের প্রত্যন্ত মানুষের জীবন ও নকশাল আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে লেখা এ উপন্যাসগুলো বেশ সাড়া ফেলেছিল। তাঁর লেখা ‘অরণ্যের অধিকার’, ‘হাজার চুরাশির মা’, ‘অগ্নিগর্ভ’ প্রভৃতি উপন্যাসের জন্য তিনি সমাদৃত হয়েছেন সাহিত্যিক মহলে। তাঁর লেখা অসংখ্য ভাষায় অনূদিত হয়েছে। র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার থেকে শুরু করে জ্ঞানপীঠ, সাহিত্য একাডেমি প্রবর্তিত বহু পুরস্কার পেয়েছেন। পদ্মশ্রী ও পদ্ম বিভূষণের মতো জাতীয় সম্মানও পেয়েছেন তিনি।