পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষের ৪৮ ঘণ্টা পরও প্রকাশ হয়নি পূর্ণাঙ্গ ফলাফল। দেশটির নির্বাচন কমিশনের (ইসিপি) বরাতে বিভিন্ন গণমাধ্যম ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিয়েছে। সেই তথ্য অনুযায়ী এখনও অন্তত ১০টি আসনের ফল বাকি। সেই তথ্যগুলো বলছে, দেশটির কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্রপ্রার্থীরা বেশি এগিয়ে আছে। আর স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিজয়ের মোট ফলাফলে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১০০ আসন দেখানো হয়েছে। এই স্বতন্ত্রদের মধ্যে পিটিআই সমর্থিত ছাড়াও অন্যরা আছেন। যদিও পিটিআই বলছে, তারা ১৫০টির বেশি আসনে জয়লাভ করেছে।

আজ শনিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে পিটিআইয়ের ভেরিফায়েড একাউন্ট থেকে এই দাবি করা হয়। ওই অ্যাকাউন্টে পোস্টটি পিন করে রাখা।

এক্স পোস্টে পিটিআই বলছে, নির্বাচনি ফলাফলের প্রাথমিক উত্সকে ফর্ম-৪৫ বলে। প্রতিটি প্রার্থীর ভোট প্রতি ভোটকেন্দ্রে এই ফর্মে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এই ফর্মগুলোর অনুলিপি পিটিআই প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

পিটিআই বলছে, ফর্মগুলোর তথ্য বলছে, তারা বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জয়ী হয়েছে।

পিটিআই আরও বলেছে, তাদের তথ্য বলছে, পিটিআই ১৫০টিরও বেশি আসন জিতেছে। ফেডারেল, পাঞ্জাব এবং কেপিতে সরকার গঠনের জন্য শক্ত অবস্থানে রয়েছে তারা।

পিটিআই রাতের আধারে ফলাফল হেরফের হচ্ছে বলে দাবি করে বলেছে, এটি অসম্মানজনক ও নির্লজ্জ চুরি। পাকিস্তানের জনগণ কারচুপির ফলাফলকে তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। বিশ্ব দেখছে।

যদিও পাকিস্তান ভিত্তিক জিও টিভি বলছে, স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ১৯ মিনিট পর্যন্ত ২৬৫টি আসনের মধ্যে ২৫১টি আসনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। এরমধ্যে স্বতন্ত্রপ্রার্থীরা ১০০টি আসনে জয়লাভ করেছে। অন্যদিকে, পিএমএল-এন ৭৩টি আসন পেয়েছে। আর পিপিপি ৫৪টি, এমকিউএম-পি ১৭টি, আইপিপি তিনটি এবং পিএমএল ও জেইউআই দুটি করে মোট চারটি এবং এমডাব্লিউএম একটি আসন পেয়েছে।

সামা টিভিতে প্রচারিত লাইভ চার্ট বলছে, মোট ২৫৩টি আসনের ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। অর্থাৎ, বাকি আছে এখনও ১০টি আসনের ফলাফল। প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, স্বতন্ত্রপ্রার্থীরা পেয়েছে ১০০টি আসন। নওয়াজ শরীফের পিএমএলএন ৭১টি,  পিপিপিপি ৫৪টি, আইপিপি ‍দুটি, জেইউআইপি তিনটি, এমকিউএমপি ১৭টি, পাকিস্তান মুসলিম লিগ তিনটি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি পাকিস্তান, মজলিস ওয়াহদাত মুসলিমি, পিএমএল জিয়া একটি আসনে জয়লাভ করেছে। এ ছাড়া একটি আসনে ভোট স্থগিত হয়েছে।

এদিকে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরার চার্ট বলছে, দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২৪৬টি আসনের ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। একটি স্থগিত আসন বাদে তাদের হিসাবে এখনও ১৮টি আসনের ফলাফল মেলেনি। বলা হয়েছে, পিটিআই সমর্থিতরা এখন পর্যন্ত ৯৩টি আসনে জয়লাভ করেছে। অন্যদিকে পিপিপি পেয়েছে ৫৩টি আসন আর পিএমএলএন পেয়েছি ৯৩টি। এ ছাড়া অন্যান্য হিসেবে গণমাধ্যমটি দেখিয়েছে ২৯টি আসন।

 গত ৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হয় পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচন। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টায় ভোটগ্রহণ শেষে শুরু হয় গণনা। যদিও কিছু কেন্দ্রে নির্ধারিত সময়ের আগে উপস্থিত ভোটারদের ভোটগ্রহণে দুই ঘণ্টা সময় বাড়ানো হয়।

পাকিস্তানে প্রতিটি ভোটার দুটি ভোট দিতে পারেন। এর একটি জাতীয় পরিষদের জন্য এবং অন্যটি প্রাদেশিক পরিষদের জন্য। জাতীয় পরিষদে ৩৩৬টি আসন রয়েছে। এরমধ্যে ২৬৬টিতে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন। বাকি আসনগুলোর মধ্যে ৬০টি আসন নারীদের ও ১০টি সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত। সংরক্ষিত এসব আসনে ফেডারেল পার্লামেন্টে পাঁচ শতাংশ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে বরাদ্দ করা হয়। সরকার গঠনের জন্য একটি দল বা জোটের ১৩৪টি আসন প্রয়োজন। যদিও এবারের নির্বাচনে একটি আসন স্থগিত রেখে ২৬৫ আসনে ভোটগ্রহণ করা হয়।