এশিয়ায় মার্কিন আধিপত্যের নতুন অধ্যায়
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেকের মাধ্যমে এশিয়া মহাদেশে মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি নতুন অধ্যায়ের মাত্রা পেতে যাচ্ছে বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে চীন ও আঞ্চলিক মিত্রদের বিষয়ে এই নীতি নতুন দিকনির্দেশনা পেতে যাচ্ছে। আর এর মূল কেন্দ্রবিন্দু হতে যাচ্ছে মার্কিন স্বার্থ ও শক্তিমত্তা।
অর্থনৈতিক বিভাজন, সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়ন, ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জোটের বোঝা হয়ে যাওয়া বিষয়গুলো ভাগাভাগি করে নেওয়ার মতো প্রসঙ্গগুলো এক্ষেত্রে গুরুত্ব পেতে যাচ্ছে। তবে এই পরিবর্তন এ অঞ্চলের কৌশলগত ভারসাম্যকে নতুন করে বিশ্লেষণ ও বেইজিংয়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতার মতো বিষয়গুলোকে নতুন মাত্রা দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফিরে আসা ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতায় নতুন যুগের সূচনা করবে এবং দেশটির কৌশলগত অগ্রাধিকারকে নতুন করে বিশ্লেষণ করবে। এই ধারাটি কেন্দ্রীভূত হবে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে মোকাবিলা করার বিষয়কে সামনে রেখে। এই পরিবর্তন সদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে এশিয়ায় ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরিতে। পাশাপাশি তা যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ও অংশীদারত্বকেও দেবে নতুন মাত্রা। এক্ষেত্রে এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের সঙ্গে দেশটির সহযোগিতা শক্তিশালী করতে স্থিতিশীলতা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও কৌশলগত অবস্থান নেওয়ার মতো প্রসঙ্গগুলো নীতি নির্ধারণে নতুন মাত্রা দেবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে কোরীয় উপদ্বীপ বা দক্ষিণ কোরিয়া আলাদা গুরুত্ব পেতে যাচ্ছে। সম্পর্ক রক্ষার এই চ্যালেঞ্জে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কোরীয় নীতিনির্ধারকদের কাজ করতে হবে সিউলের কৌশলগত বিশ্বাসযোগ্যতাকে আরও কীভাবে বাড়ানো যায়, সে প্রসঙ্গগুলোকে ঘিরে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক অস্থিরতায় উত্তাল দক্ষিণ কোরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ২০২৫ সালের প্রথমভাগেই সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত চার দশকের মধ্যে এবারই প্রথমবারের মতো দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট খোলাখুলিভাবে আইন ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করেছেন। তবে গণতন্ত্র রক্ষার সব রকম প্রচেষ্টা সেখানে চলছে। আর এমন একটা সময়ে এসব ঘটনা ঘটছে, যখন উত্তর কোরিয়া ইউক্রেনে তার শক্তি প্রদর্শন করতে মরিয়াভাব প্রকাশ করছে, রাশিয়ার সঙ্গে সৌহার্দ্য বাড়াচ্ছে। তবে সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ায় ঘটে যাওয়া একের পর এক ঘটনার কারণে দেশটির সামরিক সংস্কৃতিতে আরও পরিপক্কতার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ট্রাম্প প্রশাসন। তবে জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে কোন ক্ষেত্রগুলো আলোচিত হবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ট্রাম্প প্রশাসনকে। এক্ষেত্রে ইউএস স্টিল ও জাপানের নিপ্পন স্টিলের একীভূতকরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদিও বাইডেন প্রশাসন ও নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর বিরোধিতা করে আসছে। তাদের দাবি, এই সিদ্ধান্ত জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। তবে নিপ্পন কর্তৃপক্ষ বাইডেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কাজ শুরু করেছে।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে, জাপানে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটির ওপর জাপানের নিয়ন্ত্রণ না থাকা। এক্ষেত্রে ক্রমশ আগ্রাসী হতে থাকা চীনের প্রভাব মোকাবিলায় একটি সার্বভৌম দেশ হিসেবে জাপানের ভূমিকা কী হতে পারে, সে বিষয়ে সহযোগিতা আরও নিবিড় করতে যুক্তরাষ্ট্রকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে খুব দ্রুত।
এ ছাড়া জাপানের প্রতিরক্ষা বাজেটের বিষয়টি নিয়েও একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে। দেশটি তাদের প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়াতে চায়। এই বরাদ্দ জিডিপির দুই শতাংশ করতে চায় তারা। তবে ট্রাম্প প্রশাসন মনে করে, এই বরাদ্দ তিন শতাংশ করাটা হবে বেশি যুক্তিযুক্ত।