যুক্তরাষ্ট্রে বেআইনিভাবে ঢোকা ভারতীয়দের ফেরাচ্ছে মোদি সরকার
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেআইনি অভিবাসীদের প্রতি কড়া মনোভাব দেখানোর পরিপ্রেক্ষিতে মোদি সরকারও ভারতীয়দের ফেরাতে উদ্যোগ নিচ্ছে। ২০২৪ সালে জো বাইডেনের আমলেও এক হাজার ৫২৯ জন ভারতীয়কে দেশে ফেরানো হয়েছে। তারা বেআইনিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকছিলেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে বেআইনি অভিবাসীদের দেশে ফেরাতে কড়া নীতি নিয়েছেন।
সম্প্রতি হাতকড়া পরিয়ে ব্রাজিলের বেআইনি অভিবাসীদের সেদেশে পাঠিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। কলম্বিয়াতেও সামরিক বিমানে করে বেআইনি অভিবাসীদের পাঠানো হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ভারত জানিয়ে দিয়েছে, যে সব ভারতীয় নাগরিক বেআইনিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেছেন বা ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও থেকে গেছেন, তাদের দেশে ফেরানো হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, “আমরা বেআইনি অভিবাসনের বিরুদ্ধে। কারণ, এর সঙ্গে অনেক ধরনের সংগঠিত অপরাধের যোগ থাকে। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়, বিশ্বের যে কোনো দেশে কোনো ভারতীয় যদি ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে যান বা প্রয়োজনীয় নথিপত্র ছাড়া ঢোকেন, তাহলে আমরা তাদের ফিরিয়ে নেব।”
জয়সওয়াল আরও বলেন, “তবে আমাদের কাছে আগে সব নথিপত্র দিতে হবে, আমরা যাচাই করে দেখবো। তারা যদি ভারতীয় হন, তাহলে আমরা বিষয়টি নিয়ে এগিয়ে যাবে। আমরা তাদের ভারতে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করবো।”
তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কতজন বেআইনি ভারতীয় অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে আছেন, যাদের ফিরিয়ে আনা হবে? জয়সওয়াল বলেছেন, “এই প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সময় এখনো আসেনি।”
সম্প্রতি ওয়াশিংটনে গিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও বলেছেন, “যদি কোনো ভারতীয় বেআইনিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন, তাহলে তাদের ফিরিয়ে নেওয়াটাই সরকারের নীতি। সরকার বেআইনি অনুপ্রবেশকে সমর্থন করে না।”
যুক্তরাষ্ট্রে বেআইনিভাবে বসবাসরত ভারতীয়ের সংখ্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানাচ্ছে, ১৮ থেকে ২০ হাজারের মতো ভারতীয়কে প্রথমে ফেরত পাঠানো নিয়ে কথা চলছে। ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, ১৮ হাজার বেআইনি ভারতীয় অভিবাসীকে চিহ্নিত করা গেছে। তাদেরই প্রথমে ফেরত পাঠানো হবে।
তবে এক প্রতিবেদনে নিউ ইয়র্ক টাইমস দাবি করেছে, সরকারি তথ্য অনুসারে, শুধু ২০২৩ সালেই ৯০ হাজার ভারতীয় বেআইনিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছে।
পিউ রিসার্চ রিপোর্টে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে সাত লাখ ২৫ হাজার বেআইনি ভারতীয় অভিবাসী আছে। বেআইনি অভিবাসীদের সংখ্যার হিসাবে এক নম্বরে মেক্সিকো, তারপরেই আছে এল সালভাদোর, তিন নম্বরে ভারত।
ট্রাম্প যা বলেছেন
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ফোনে কথা বলার পর সাংবাদিকদের মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, তিনি অভিবাসীদের বিষয়টি নিয়েও মোদির সঙ্গে আলোচনা করেছেন। বেআইনি অভিবাসীদের নেওয়ার ক্ষেত্রে যেটা ঠিক, প্রধানমন্ত্রী মোদি সেটাই করবেন।
ভারতের মনোভাব
ভারতের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের অভিযোগ হলো, দিল্লি এই বেআইনি অভিবাসীদের নিয়ে কালক্ষেপণ করে, তারা সহযোগিতা করে না। কিন্তু এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, তারা এবার কালক্ষেপ না করে বেআইনি পথে ঢোকা ভারতীয়দের দেশে ফিরিয়ে আনার কথা বলছে।
প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডিডাব্লিউকে বলেছেন, “ভারতের এই সিদ্ধান্তের পিছনে বেশ কয়েকটি কারণ আছে। তার মধ্যে অন্যতম কারণ হলো, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখতে চায় ভারত। নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ট্রাম্প তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বর্তমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বন্ধুকে পাশে পাওয়াটা ভারতের পক্ষে জরুরি।”
শরদ মনে করেন, “প্রতিবছর ভারত থেকে এইচ১বি ভিসা নিয়ে প্রচুর ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি করতে যায়। তারা যাতে কোনো অসুবিধায় না পড়েন, সরকার সেটাও নিশ্চিত করতে চায়। এর সঙ্গে আরো একটা কারণ আছে। সেটা হলো, ট্রাম্প অতীতে একাধিকবার পণ্যের ওপর মাসুল বসানোর হুমকি দিয়েছেন। চীনের পণ্যের ক্ষেত্রে তিনি মাসুল বসিয়েছেন। ভারত চায় না, কোনো ভারতীয় পণ্যের ওপর ট্রাম্প মাসুল বসাক।”
বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, এস জয়শঙ্কর বলেছেন, “আমরা চাই ভারতীয়দের প্রতিভা, ভারতীয়দের দক্ষতা বিশ্বে সর্বোচ্চ সুযোগ পাক। একইসঙ্গে আমরা বেআইনিভাবে অভিবাসীদের প্রবেশের কড়া বিরোধিতা করছি।”
তবে শরদ এটাও বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের আইটি কোম্পানিগুলোর মাথায় ভারতীয়রা আছেন। মার্কিন তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের ক্ষেত্রে তাদের অবদানও প্রচুর। কিন্তু তারা ভারতে এসে কেন এই কাজটা করেন না? ভারত থেকে ব্রেন ড্রেইন হয়ে যাচ্ছে, আর দেশও তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে প্রতিভাবানদের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এটাও ভাবা দরকার।”