যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খনিজ সম্পদ চুক্তিতে সম্মত ইউক্রেন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বড় খনিজ সম্পদ চুক্তি করতে সম্মত হয়েছে ইউক্রেন। কিয়েভের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে এ তথ্য জানিয়েছেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, আমরা সত্যিই চুক্তির বেশকিছু শর্তে ভালো সংশোধনীর সঙ্গে একমত হয়েছি এবং এটিকে একটি ইতিবাচক ফলাফল হিসেবে দেখছি। তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের রাজস্ব থেকে ৫০০ বিলিয়ন ডলার গ্রহণের প্রাথমিক দাবি প্রত্যাহার করেছে ওয়াশিংটন। তবে, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনকে দৃঢ় নিরাপত্তার নিশ্চয়তাও দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি আশা করছেন, এই সপ্তাহে ওয়াশিংটনে তার ইউক্রেনীয় প্রতিপক্ষ ভলোদিমির জেলেনস্কি চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন। এর আগে দুই নেতা একে অপরের সম্পর্কে কড়া বাক্য বিনিময় করেন।
কোনো চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত না করেই মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ট্রাম্প বলেন, খনিজসম্পদ চুক্তির বিনিময়ে ইউক্রেন ‘লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অধিকার’ পাবে। তিনি বলেন, ‘তারা খুবই সাহসী, কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তাদের অর্থ ও সামরিক সরঞ্জাম ছাড়াই এই যুদ্ধ খুব অল্প সময়ে শেষ হয়ে যেত।’
ইউক্রেনে মার্কিন সরঞ্জাম ও গোলাবারুদ সরবরাহ অব্যাহত থাকবে কিনা জানতে চাইলে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘হয়তো রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত। তবে আমাদের একটি চুক্তি করতে হবে, অন্যথায় এটি চলতেই থাকবে।’
ট্রাম্প আরও বলেন, যেকোনো শান্তি চুক্তির পর ইউক্রেনে এক ধরনের শান্তিরক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজন হবে, তবে তা ‘সবার কাছে গ্রহণযোগ্য’ হতে হবে।
মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ৩০০ থেকে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সেই টাকা ফেরত পেতে চাই। আমরা দেশটিকে একটি খুব বড় সমস্যায় সাহায্য করছি, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের করদাতারা এখন তাদের টাকা ফেরত পাবেন।’
ইউক্রেনের উপপ্রধানমন্ত্রী ওলহা স্টেফানিশিনা ফিনান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, চুক্তিটি প্রক্রিয়ার একটি অংশ মাত্র। আমরা মার্কিন প্রশাসনের কাছ থেকে একাধিকবার শুনেছি, এটি একটি বৃহত্তর চিত্রের অংশ।

ইউক্রেনের সংবাদ ভিত্তিক ওয়েবসাইট ইউক্রেনস্কা প্রাভদা জানায়, খনিজ চুক্তিটি ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও স্বাক্ষর করবেন।
সংবাদমাধ্যমটি আরও জানায়, দুই দেশ একটি পুনর্গঠন বিনিয়োগ তহবিল গঠনেও সম্মত হয়েছে।
ইউক্রেনে লিথিয়াম ও টাইটানিয়ামসহ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং খনিজ পদার্থের বিশাল মজুত রয়েছে, সেইসঙ্গে বিশাল পরিমাণ কয়লা, গ্যাস, তেল ও ইউরেনিয়ামের মজুত রয়েছে, যেগুলোর মূল্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার।
এদিকে মঙ্গলবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে বিরল খনিজ সম্পদে প্রবেশাধিকার দেওয়ার প্রস্তাবের বিষয়ে আলোচনার জন্য তার দরজা খোলা, যার মধ্যে ইউক্রেনের রাশিয়া-অধিকৃত অঞ্চলগুলোও রয়েছে।
গত সপ্তাহে সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার দ্বিপাক্ষিক আলোচনাসহ সম্প্রতি মার্কিন-রুশ সম্পর্কে বরফ গলতে শুরু করা নিয়ে ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা ক্রমশ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে।
কিয়েভ ও সমগ্র ইউরোপে উদ্বেগে রয়েছে যে, যুদ্ধের অবসানে যেকোনো আলোচনা থেকে তাদের বাদ দেওয়া হতে পারে এবং সমগ্র ইউরোপের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিয়ে তাদের পেছনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।