গাজায় ধ্বংসস্তূপ থেকে কান্নার আওয়াজ, উদ্ধার হলো ফুটফুটে নবজাতক

গাজা উপত্যকার খান ইউনিসের বাইরে সীমান্তের কাছে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় ভেঙে পড়া ভবনের ধ্বংসাবশেষ তন্নতন্ন করে খুঁজছিলেন উদ্ধারকারীরা। কেউ আটকে পড়েছে কিনা; তা দেখছিলেন তারা। তখনই ইট-পাথরের নিচ থেকে একটি নবজাতকের কান্না ভেসে আসে।
এ সময়ে বিস্ময়ে সবার মুখ থেকে ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি বেরিয়ে আসে। এক লোক দৌড়ে এসে একটি জীবন্ত শিশু কোলে তুলে নিল। তার শরীরে কম্বল মোড়ানো। এরপর তাকে অপেক্ষারত অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেওয়া হয়।
প্যারামেডিকরা যখন শিশুটিকে পরীক্ষা করছিল, তখন সে থেমে থেমে নড়ে উঠছিল। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) সেহরির সময় আকস্মিক ইসরায়েলি বিমান হামলায় শিশুটির বাবা-মা ও ভাই নিহত হয়েছেন।
হাজেন আত্তার নামের একজন বেসামরিক প্রতিরক্ষাকর্মী বলেন, ‘স্থানীয় লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে আমরা জানতে পারি, শিশুটির বয়স ২৫ দিন। বিমান হামলার পর থেকেই ইট-পাথরের ভেতরে আটকা পড়ে সে।’
এই প্রতিরক্ষাকর্মী আরও বলেন, ‘তখন থেকে শিশুটি কান্না করে যাচ্ছিল। ধীরে ধীরে তার গলার স্বর কমে নীরব হয়ে যায়। আর কাঁদতে পারছিল না। এরপর তাকে আমরা উদ্ধার করেছি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে, সে এখন নিরাপদ।’
শিশুটির নাম ইল্লা ওসামা আবু দাগ্গা। ২৫ দিন আগে গাজায় নড়বড়ে যুদ্ধবিরতির মধ্যে শিশুটি জন্ম নিয়েছে। ফিলিস্তিনিরা ধরে নিয়েছিলেন, যুদ্ধ শেষ। যদিও ১৫ মাসের যুদ্ধে পুরো উপত্যকাটি ধ্বংস হয়ে গেছে। বাসিন্দারা বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছেন সবাই। নিহত হয়েছেন ৪৯ হাজারের বেশি মানুষ, যাদের বেশির ভাগ নারী-শিশু।
হামলায় শিশুটির দাদা ছাড়া পুরো পরিবার নিহত হয়েছেন। অর্থাৎ তার বাবা-মা ও ভাই বেঁচে নেই। তাদের সঙ্গে আরেকটি পরিবারের সাত বছরের শিশু ও তার বাবা নিহত হয়েছেন।
ধ্বংসস্তূপের ভেতরে একটি জাজিমের ওপর ঘুমিয়েছিল শিশুটি। সেখান থেকে তার ছোট্ট শরীরটি বের করে নিয়ে আসেন উদ্ধারকর্মীরা। শিশুকন্যাটিকে তাৎক্ষণিকভাবে কে আশ্রয় দিয়েছেন, তা জানা সম্ভব হয়নি।
মঙ্গলবার আকস্মিকভাবে গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে দুপক্ষের যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে যায়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এরপর গেল দুদিনে ৬০০ ফিলিস্তিনি নিহত হন। নিহতদের বেশিরভাগ নারী-শিশু।
খান ইউনিসের বাইরে ইসরায়েলি সীমান্তের কাছে আল-কাবিরা নামের একটি গ্রামে শিশুটির বাড়ি। ইসরায়েলি হামলায় সেখানে ১৬ জন নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি, ‘তারা কেবল হামাস যোদ্ধাদের নিশানা করে হামলা চালাচ্ছে। বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার জন্য ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনটিই দায়ী। কারণ, আবাসিক এলাকার ভেতরে থেকে কার্যক্রম চালায় হামাস।’
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা চালিয়ে এক হাজার ২০০ ইসরায়েলিকে হত্যা করে হামাস। এ সময় ২৫১ জনকে জিম্মি করে তারা। এরপর থেকে হামাসকে ধ্বংস করতে অবিরত হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েলি বাহিনী।