পেঙ্গুইন আর পাখির রাজ্যেও ট্রাম্পের শুল্ক!

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে দাঁড়িয়ে যাকে ‘‘স্বাধীনতা দিবসের শুল্ক’’ বলে বর্ণনা করেছেন, সেই শুল্ক বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর চাপিয়েছেন। অনেক দেশই হয়তো এর জন্য প্রস্তুত ছিল। কিন্তু তিনি যে জনশূন্য আর যেখানে মানুষের বসতি নেই, এমন দ্বীপের ওপরও শুল্ক বসাবেন, তা বোধহয় কেউই ভাবতে পারেননি। জনমানবহীন সেই দ্বীপগুলোতে কেবল পেঙ্গুইন, সিল আর কিছু যাযাবর পাখির বাস।
যুক্তরাষ্ট্রের যত বাণিজ্য সহযোগী দেশ আছে, তাদের সবার ওপর কম করে ১০ শতাংশ হারে শুল্ক বসানোর পাশাপাশি ট্রাম্পের তালিকাভুক্ত হয়েছে অ্যান্টার্কটিকার ভারত মহাসাগরের জনশূন্য হার্ড ও ম্যাকডোনাল্ড দ্বীপপুঞ্জও। আর হ্যাঁ, এই দুটি দ্বীপে কোনো মানুষের বসবাস নেই।
হোয়াইট হাউসের তালিকায় থাকা হার্ড দ্বীপ ও ম্যাকডোনাল্ড দ্বীপ অস্ট্রেলিয়ার অনেক দূরের এলাকা। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যেহেতু এই দ্বীপগুলো অস্ট্রেলিয়ার অংশ, তাই সেগুলোকে নতুন শুল্কের তালিকায় যোগ করা হয়েছে।

বক্তৃতার সময় ট্রাম্প যেসব দেশ ও এলাকার বিরুদ্ধে নতুন করে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন, সেসব দেশের তালিকা হাতে ধরা একটি পোস্টারে দেখা যায়। পরে সাংবাদিকদের কাছে এসব দেশের ওপর শুল্ক বসানোর কারণসহ বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়েছে, হার্ড দ্বীপ ও ম্যাকডোনাল্ড দ্বীপ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক নিয়েছে। এর জবাবে যুক্তরাষ্ট্রও একই হারে এসব দ্বীপের বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপ করছে।
অস্ট্রেলিয়ার সরকারি ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, হার্ড দ্বীপ ও ম্যাকডোনাল্ড দ্বীপ বিশ্বের সবচেয়ে দুর্গম ও জনমানবহীন স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। অস্ট্রেলিয়ান অ্যান্টার্কটিক প্রোগ্রামের তথ্য অনুযায়ী, আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পার্থের কাছের ফ্রেম্যান্টল বন্দর থেকে জাহাজে করে হার্ড দ্বীপে পৌঁছাতে অন্তত ১০ দিন সময় লাগে।
হার্ড দ্বীপ এবং ম্যাকডোনাল্ড দ্বীপে শুধু পেঙ্গুইন, সিল আর পরিযায়ী পাখিরাই থাকে। এর মধ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সংরক্ষিত কয়েক প্রজাতির পাখিও রয়েছে।
ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় থাকা অস্ট্রেলিয়ার এই দ্বীপগুলো ট্রাম্পের ঘোষণা করা সেই অঞ্চলের তালিকায়ও আছে, যেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে কোনো জিনিস আমদানি করলে কমপক্ষে ১০ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার দূরবর্তী হার্ড দ্বীপ ও ম্যাকডোনাল্ড দ্বীপ এতটাই জনশূন্য যে গত প্রায় ১০ বছরে সেখানে কোনো মানুষই যায়নি। এমন জনশূন্য দ্বীপের ওপর ট্রাম্পের শুল্ক বসানোর ঘোষণায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ। তিনি বলেছেন, বিশ্বের কোনো স্থানই আর নিরাপদ নয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বার্তায় আলবানিজ বলেছেন, এই কঠিন সময়ে সব অস্ট্রেলিয়ান এটা নিশ্চিতভাবে জানতে পারে। এই শুল্ক অপ্রত্যাশিত না হলেও এর কোনো মানে নেই। আজকের এই সিদ্ধান্তের কারণে অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে অন্য অনেক দেশ বেশি ক্ষতির শিকার হবে। এই শুল্ক মোকাবিলার জন্য অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে ভালো প্রস্তুতি আর কোনো দেশের নেই।
হার্ড দ্বীপ এবং ম্যাকডোনাল্ড দ্বীপ ছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার আরও কিছু দূরবর্তী এলাকা ট্রাম্পের নতুন শুল্কের তালিকায় রয়েছে। এর মধ্যে কোকোস দ্বীপ, ক্রিসমাস দ্বীপ এবং নরফোক দ্বীপও আছে। নরফোক দ্বীপে ২ হাজার ১৮৮ জন মানুষের বাস। এই দ্বীপের ওপর ২৯ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন, যা অস্ট্রেলিয়ার মূল ভূখণ্ডের ওপর ধার্য করা শুল্কের চেয়ে ১৯ শতাংশ বেশি।