নতুন পোপ রবার্ট প্রিভোস্ট

ক্যাথলিক বিশ্বের নতুন পোপ নির্বাচিত হয়েছেন রবার্ট প্রিভোস্ট। সিস্টিন চ্যাপেলের চিমনি থেকে সাদা ধোঁয়া বের হওয়ার পর দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে তার নাম ঘোষণা করা হলো। স্থানীয় সময় আজ বৃহস্পতিবার (৮ মে) বিকেলে কার্ডিনালদের গোপন ভোটাভুটির মাধ্যমে তিনি পোপ ফ্রান্সিসের উত্তরসূরি নির্বাচিত হয়েছেন। খবর বিবিসির।
এদিন বিকেলে সিস্টিন চ্যাপেলে ১৩৩ জন কার্ডিনালদের চতুর্থ ধাপের ভোটে নতুন পোপ নির্বাচন করা হয়। এরপর সেন্ট পিটারের ব্যাসিলিকার প্রধান কেন্দ্রীয় লোগিয়ার বারান্দা থেকে ফরাসি কার্ডিনাল ও প্রোটোডিয়াকন ডমিনিক মাম্বার্টি নতুন পোপের নাম ঘোষণা করেন।
এর আগে গতকাল বুধবার সকালে প্রার্থনা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় শুরু হয় পোপ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা। এই আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন ৯১ বছর বয়সী কার্ডিনাল ডিন জিওভান্নি বাতিস্তা রে। এবার ২৬৭তম পোপ নির্বাচন করলেন কার্ডিনালরা, যে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে কনক্লেভ বলা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার খুব ভোরেই সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় জড়ো হন বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ। সবার ধারণা ছিল আজ হয়তো চিমনি দিয়ে সাদা ধোঁয়া বের হবে, জানা যাবে পরবর্তী পোপের নাম। কিন্তু সকাল ১১টায় তৃতীয় রাউন্ডের ভোটের পরও দেখা গেল কালো ধোঁয়া। এরপর বিকেল শুরু হয় চতুর্থ ধাপের ভোট। এরপরই সিস্টিন চ্যাপেলের চিমনি থেকে সাদা ধোঁয়া বের হতে শুরু করে।
সাদা ধোঁয়া দেখা যাওয়ার পর সাধারণত ঘণ্টাখানেকের মধ্যে নতুন পোপ ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে সেন্ট পিটার্স স্কয়ারের বারান্দায় এসে দাঁড়ান। এরপর কনক্লেভে অংশগ্রহণকারী একজন জ্যেষ্ঠ কার্ডিনাল আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন পোপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানান। তিনি ল্যাটিন ভাষায় চিৎকার করে বলেন, ‘হ্যাবেমাস পাপাম’, বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায়, ‘আমাদের একজন পোপ আছেন’।
কার্ডিনাল এরপর নতুন পোপের নাম ঘোষণা করেন। এসময় নতুন পোপকে যে নামে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে, সেটি তার আসল নাম হতে পারে, আবার নাও হতে পারে।
এর আগে গত ২১শে এপ্রিল ৮৮ বছর বয়সে পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যু হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে নতুন পোপ বেছে নেওয়ার বিষয়টি সামনে আসে।
পোপ নির্বাচন করা হয় যেভাবে
যখন একজন পোপ মারা যান (অথবা পদত্যাগ করেন, যেমনটি ২০১৩ সালে পোপ বেনেডিক্ট ষোড়শের ক্ষেত্রে ঘটেছিল, যেটি ছিল বিরল ঘটনা), তখন ভ্যাটিকানে কার্ডিনালদের একটি সম্মেলন ডাকা হয়। তারপর কনক্লেভ অনুষ্ঠিত হয়, যেটি পোপ নির্বাচনের সময় হিসেবে পরিচিত।
বর্তমান পোপের মৃত্যুর পর থেকে নতুন পোপ নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়কালে 'কলেজ অব কার্ডিনালস'ই গির্জার যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে থাকেন। সিস্টিন চ্যাপেলের ভেতরে অনুষ্ঠিত হয় পোপ নির্বাচনের ভোট। কঠোর গোপনীয়তার সঙ্গে সেখানে কার্ডিনালরা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন।
নতুন পোপ নির্বাচনের এই প্রক্রিয়ায় বেশ কয়েক দিন সময় লেগে যায়। অতীতে এক সপ্তাহ, এমনকি এক মাস সময় ধরেও ভোট চলতে দেখা গেছে। ভোট চলাকালে কার্ডিনালদের মধ্যে কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছেন, এমন ঘটনারও নজির আছে।
এই সময় নতুন পোপ নির্বাচন কতটুকু এগোলো, সেটি বোঝার একমাত্র উপায় হলো ধোঁয়া। নির্বাচন চলাকালে প্রতিবার ভোট শেষে নির্দিষ্ট চুল্লিতে ব্যালট পেপার পুড়িয়ে ফেলা হয়। এর ফলে দিনে দুবার যে ধোঁয়া বের হয়, সেটিই নতুন পোপের বিষয়ে ইঙ্গিত দেয়। কালো ধোঁয়ার অর্থ হলো পোপ নির্বাচন হয়নি। আর সাদা ধোঁয়া দেখার মানে হলো নতুন পোপ নির্বাচিত হয়েছেন।