পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ ভারতের

যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে ভারত। গতকাল শনিবার (১০ মে) রাত ১১টার দিকে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি এক বিবৃতিতে জানান, পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করেছে এবং ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী এর যথাযথ জবাব দিচ্ছে। খবর এনডিটিভির।
বিক্রম মিশ্রি বলেন, “আজ সন্ধ্যায় ভারত ও পাকিস্তানের দুই দেশের সেনাবাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশন্স (ডিজিএমও)-এর মধ্যে যে সমঝোতায় পৌঁছানো হয়েছিল, তা গত তিন ঘণ্টায় একাধিকবার লঙ্ঘিত হয়েছে। এটি গুরুতর শর্ত লঙ্ঘন। সশস্ত্র বাহিনী উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে এবং আমরা এসব লঙ্ঘনকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।”
দেশটির পররাষ্ট্র সচিব আরও বলেন, “আন্তর্জাতিক সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলওসি) আবার এমন লঙ্ঘন ঘটলে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানাতে সশস্ত্র বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তান যেন এ বিষয়ে দায়িত্বশীল আচরণ করে এবং অবিলম্বে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়।”
এই বিবৃতির আগে জম্মু ও কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকায় এবং গুজরাটে একাধিক ড্রোন শনাক্ত ও জব্দ করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারত।

জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ সন্ধ্যায় এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, “যুদ্ধবিরতির কী হলো? শ্রীনগরজুড়ে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে।”
পরে আরেকটি পোস্টে তিনি লেখেন, “এটা কোনো যুদ্ধবিরতি নয়। শ্রীনগরের মধ্যে থেকেই এয়ার ডিফেন্স ইউনিটগুলো চালাতে শুরু করেছে।”
এর আগে, শনিবার সন্ধ্যা ৫টা ২৫ মিনিটে (ভারতীয় সময়) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। তিনি লেখেন, “একটি দীর্ঘ রাতের আলোচনার পর ভারত ও পাকিস্তান সম্পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। সাধারণ বোধ এবং চমৎকার বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করার জন্য দুই দেশকেই অভিনন্দন।”

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি ও সমঝোতার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বিকেল ৬টায় বিক্রম মিশ্রি জানান, “আজ ৩টা ৩৫ মিনিটে পাকিস্তানের ডিজিএমও ভারতীয় ডিজিএমওকে ফোন করেন। উভয় পক্ষ সম্মত হয় বিকেল ৫টা থেকে ভূমি, আকাশ এবং সমুদ্রে সব ধরনের সামরিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।”
তবে সূত্রের বরাতে জানা যায়, এই যুদ্ধবিরতি ‘শর্তসাপেক্ষ’ এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের কূটনৈতিক অবস্থানে কোনও পরিবর্তন আসেনি। সিন্ধু নদী চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তও বহাল রয়েছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে কমোডর রঘু আর নাইয়ার বলেন, “পাকিস্তানের প্রতিটি আগ্রাসনের জবাব শক্তভাবে দেওয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও যে কোনো রকম উসকানির কঠিন জবাব দেওয়া হবে। জাতির নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন হলে আমরা প্রস্তুত।”
এদিকে, পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সম্প্রতি ঘোষিত যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী দায়িত্বশীলভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। খবর ডনের।
শনিবার ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলার কয়েক ঘণ্টা পর পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এই বিবৃতি আসলো।
গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে দেওয়া এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, “পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যে আজ যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা হয়েছে, তার আন্তরিক বাস্তবায়নে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “কিছু এলাকায় ভারতের পক্ষ থেকে লঙ্ঘন সত্ত্বেও, আমাদের বাহিনী দায়িত্বশীলতা ও সংযমের সঙ্গে পরিস্থিতি সামলাচ্ছে।”
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, যুদ্ধবিরতির সুষ্ঠু বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা উপযুক্ত স্তরের যোগাযোগের মাধ্যমে সমাধান করা উচিত।
তিনি বলেন, “মাঠে থাকা সেনাদেরও সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানানো হচ্ছে।