ট্রাম্পের ব্যবহারের জন্য কাতারের উড়োজাহাজটি গ্রহণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পিট হেগসেথ কাতার থেকে পাঠানো একটি বোয়িং ৭৪৭ উড়োজাহাজ গ্রহণ করেছেন, যা সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা হবে বলে জানিয়েছে পেন্টাগন।
পেন্টাগনের প্রধান মুখপাত্র শন পারনেল এক বিবৃতিতে বলেন, “প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ফেডারেল নিয়ম ও বিধিমালা অনুসরণ করে কাতার থেকে একটি বোয়িং ৭৪৭ গ্রহণ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পরিবহনের জন্য এই বিমানে যথাযথ নিরাপত্তা এবং মিশনভিত্তিক সক্ষমতা যোগ করা হবে।”
তবে বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন আলোচনার সঙ্গে যুক্ত একজন। তার মতে, আইনজীবীদের মধ্যে আলোচনা এখনও চলমান।
এ বিষয়ে বিমানটির মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে কি না, সে প্রশ্নের জবাব দেননি পারনেল এবং বিস্তারিত তথ্যের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর কাছে যেতে বলেন। সিএনএন জানিয়েছে, তারা ওয়াশিংটনে কাতারের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
বুধবার (২১ মে) সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, “কাতার আমাদের বিমান বাহিনীকে একটি বিমান দিচ্ছে, ঠিক আছে এবং এটা দারুণ ব্যাপার।”
এর আগেই কাতারের প্রধানমন্ত্রী ব্লুমবার্গকে বলেন, “এই বিমান সংক্রান্ত বিষয়টি কাতারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও বৈধতার সঙ্গে সম্পন্ন হচ্ছে এবং এটি আমাদের বহু দশকের সহযোগিতারই অংশ।”
এদিকে মঙ্গলবার (২০ মে) বিমান বাহিনীর সচিব ট্রয় মেইঙ্ক এবং প্রধান কর্মকর্তা ডেভিড অলভিন কংগ্রেস সদস্যদের জানান, হেগসেথ বিমান বাহিনীকে বিমানটি পরিবর্তনের জন্য পরিকল্পনা শুরু করতে বলেছেন।
মেইঙ্ক বলেন, “প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন যে বিমান বাহিনী যেন এই বিমানটি সংশোধনের পরিকল্পনা শুরু করে। আমরা প্রস্তুত আছি।”
বিমান বাহিনীর একজন মুখপাত্র সিএনএনকে বলেন, “প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী, বিমান বাহিনী বোয়িং ৭৪৭ উড়োজাহাজটি নির্বাহী পরিবহনের উপযোগী করে তোলার জন্য চুক্তি প্রদানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই চুক্তি সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য গোপনীয়।”
তবে বিষয়টি রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি করেছে, কারণ ডেমোক্র্যাটদের পাশাপাশি কিছু রিপাবলিকান নেতাও এই ‘উপহার’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলছেন, এটি নৈতিকতা ও স্বচ্ছতার প্রশ্ন তোলে।
ট্রাম্প নিজেই তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশালে একে “একটি উপহার, সম্পূর্ণ বিনামূল্যে” বলে দাবি করেছেন। তবে সিএনএন জানিয়েছে, মূলত ট্রাম্প প্রশাসনই কাতারের কাছে প্রথম বিমান চেয়েছিল।
ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর বিমান বাহিনী জানতে পারে যে বোয়িং তাদের নতুন এয়ার ফোর্স ওয়ান সরবরাহ করতে অন্তত দুই বছর সময় নেবে। তাই বিকল্প খুঁজতে থাকে হোয়াইট হাউস।

সাবেক মধ্যপ্রাচ্য প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফকে বিকল্প তালিকা খুঁজতে দায়িত্ব দেন ট্রাম্প। পরে বোয়িং কাতারসহ কয়েকটি দেশের নাম দেয় যাদের এমন বিমান রয়েছে। এরপরই শুরু হয় কাতারের সঙ্গে আলোচনা।
প্রাথমিকভাবে ধারণা ছিল এটি বিক্রির ভিত্তিতে হবে, কিন্তু পরে সেটিকে ‘উপহার’ বলা হচ্ছে।
তবে নিরাপত্তা ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে বিমানটিকে প্রেসিডেন্টের উপযোগী করে তোলা বিশাল ও ব্যয়বহুল কাজ বলে জানান প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। এটি সম্পূর্ণরূপে ভেঙে নতুন করে গঠন করতে হবে এবং এতে খরচ হতে পারে বিমানটির প্রকৃত মূল্যের চেয়েও বেশি। এজন্য সময় লাগতে পারে প্রায় দুই বছর।