ইরানে হামলার সঙ্গে হিরোশিমা-নাগাসাকির তুলনায় ক্ষুব্ধ জাপানিরা

ইরানে সাম্প্রতিক মার্কিন হামলার সঙ্গে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটানো হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপের ঘটনার তুলনা করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিন্দা জানিয়েছে জাপান। খবর বিবিসির।
ট্রাম্প গত বুধবার (২৫ জুন) সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওই হামলা যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছিল। আমি হিরোশিমার উদাহরণ দিতে চাই না, নাগাসাকির উদাহরণও দিতে চাই না, কিন্তু এটি মূলত একই জিনিস ছিল।’
১৯৪৫ সালের আগস্টে জাপানের দক্ষিণাঞ্চলীয় দুটি শহরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করায় প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা আজও মানসিক আঘাত এবং ক্যানসারের ঝুঁকি নিয়ে বেঁচে আছেন।
নাগাসাকির মেয়র শিরো সুজুকি বলেছেন, ট্রাম্পের মন্তব্য যদি ‘পারমাণবিক বোমা ফেলার ন্যায্যতা প্রমাণ করে, তাহলে বোমা হামলার শিকার শহর হিসেবে আমাদের জন্য এটি অত্যন্ত দুঃখজনক’।
জাপানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এনএইচকে জানায়, পারমাণবিক বোমা হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া এবং নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অ্যাডভোকেসি গ্রুপ নিহন হিডানকিওর সহসভাপতি বলেন, ট্রাম্পের মন্তব্য ‘অগ্রহণযোগ্য’।
কিয়োডো নিউজ জানায়, ওই গ্রুপের আরেক সদস্য তেরুকো ইয়োকোয়ামা বলেন, ‘আমি সত্যিই হতাশ। আমার শুধু রাগ হচ্ছে।’
হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা হামলায় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা গতকাল বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ট্রাম্পের বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার হিরোশিমার আইনপ্রণেতারা পারমাণবিক বোমা ব্যবহারের ন্যায্যতা দাবি করে দেওয়া ট্রাম্পের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে একটি প্রস্তাব পাস করেন। তারা সশস্ত্র সংঘাতের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তিরও আহ্বান জানান।
ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের বিরুদ্ধে টোকিও অভিযোগ দায়ের করবে কিনা জানতে চাইলে, মুখ্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব হায়াশি ইয়োশিমাসা বলেন, জাপান বারবার ওয়াশিংটনের কাছে পারমাণবিক বোমা ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান প্রকাশ করেছে।
ফাঁস হওয়া এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ইরানের ওপর মার্কিন হামলা তাদের পারমাণবিক কর্মসূচিকে মাত্র কয়েক মাস পিছিয়ে দেবে। আর বুধবার এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে ওই মন্তব্য করেন ট্রাম্প।
তবে এর আগে ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেছিলেন, এই হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ‘নিশ্চিহ্ন’ করে দিয়েছে এবং এটিকে কয়েক ‘দশক ধরে’ পিছিয়ে দিয়েছে। আর তার এই দাবিকে সিআইএয়ের পরিচালক জন র্যাটক্লিফ সমর্থন জানিয়েছেন।

জাপান বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে পারমাণবিক হামলা হয়েছে এবং হিরোশিমা ও নাগাসাকির বোমা হামলার বেদনাদায়ক স্মৃতিকে তুলে ধরে। ১৯৬০ সাল থেকে হিরোশিমায় পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে দেশটির বিরোধিতার প্রতীক হিসেবে একটি শান্তির শিখা জ্বলছে, এ ছাড়া একটি যুদ্ধ জাদুঘরের প্রবেশপথে বিশ্বের শেষ পারমাণবিক হামলার পর থেকে দিন গণনাকারী একটি ঘড়ি রয়েছে। হিরোশিমা সফরকারী বিশ্ব নেতাদের শান্তির প্রতি তাদের অঙ্গীকার নিশ্চিতে কাগজের সারস পাখি তৈরি করতেও বলা হয়।