নাইজেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদু বুহারি আর নেই

নাইজেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদু বুহারি মারা গেছেন। স্থানীয় সময় রোববার (১৩ জুলাই) বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে যুক্তরাজ্যের লন্ডনের একটি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট বোলা টিনুবুর মুখপাত্র এক্সে (পূর্বে টুইটার) দেওয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
২০১৫ সালে ইতিহাস গড়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন বুহারি। তিনিই ছিলেন নাইজেরিয়ার আধুনিক ইতিহাসে প্রথম বিরোধীদলীয় প্রার্থী, যিনি ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টকে নির্বাচনে পরাজিত করেন। ওই নির্বাচনে তিনি গুডলাক জোনাথনকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট হন এবং সেটিকে দেশটির সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনগুলোর একটি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল বুহারি প্রথমবারের মতো ১৯৮০-এর দশকে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নাইজেরিয়ার শাসক হন। পরে তিনি নিজেকে রূপান্তরিত করেন একজন বেসামরিক রাজনীতিক হিসেবে।
গাম্ভীর্যপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান এবং ‘গণতন্ত্রে বিশ্বাসী’ নেতার ভাবমূর্তি গড়ে তোলেন তিনি। একাধিকবার তিনি বলেছিলেন, “আমি সবার, কিন্তু কারও নই”—এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি নিজেকে দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে রাখতে চেয়েছিলেন।
তবে তার শাসনামলে দেশজুড়ে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। বোকো হারাম দমন ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ছাড়িয়ে সন্ত্রাস, সশস্ত্র গোষ্ঠী, বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন এবং অপরাধমূলক কার্যকলাপ ছড়িয়ে পড়ে।
তার প্রশাসনের শেষদিকে এসে দেখা যায়, নাইজেরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় চরম নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে এবং সরকার সেগুলোর ওপর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে।

তবুও মুহাম্মাদু বুহারি নাইজেরিয়ার গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার প্রতীক হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন। যদিও তিনি যে ব্যাপক রূপান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার অনেকটাই অপূর্ণ রয়ে গেছে।
তিনি ছিলেন একজন কড়া শাসক, আবার রূপান্তরিত গণতন্ত্রবাদীও—যার জীবন ও নেতৃত্ব নিয়ে নাইজেরিয়ার জনগণের মধ্যে দীর্ঘদিন আলোচনা চলতেই থাকবে।