২০ বছর কোমায় থাকার পর মারা গেলেন সৌদির ‘স্লিপিং প্রিন্স’
দীর্ঘ ২০ বছর কোমায় থাকার পর মৃত্যুবরণ করেছেন সৌদি আরবের রাজপরিবারের সদস্য ‘স্লিপিং প্রিন্স’ আল ওয়ালিদ বিন খালেদ বিন তালাল আল সৌদ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৩৫ বছর। খবর গাল্ফ নিউজের।
২০০৫ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে লন্ডনে সামরিক প্রশিক্ষণরত অবস্থায় এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। এতে তার মস্তিষ্কে মারাত্মক আঘাত লাগে এবং শরীরের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। সেই থেকেই তিনি গভীর কোমায় চলে যান।
দুর্ঘটনার পর মার্কিন ও স্প্যানিশ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মাধ্যমে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হলেও তার আর সম্পূর্ণভাবে জ্ঞান ফেরেনি। মাঝে মাঝে কিছু অনৈচ্ছিক নড়াচড়া দেখা গেলেও, তিনি সচেতন অবস্থায় ফিরতে পারেননি।
তার বাবা প্রিন্স খালেদ বিন তালাল — সৌদি রাজপরিবারের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং ধনকুবের প্রিন্স আল ওয়ালিদ বিন তালালের ভাতিজা। তিনি কখনোই তার সন্তানের লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়ার পরামর্শ মেনে নেননি। তিনি বিশ্বাস করতেন, একদিন অলৌকিকভাবে তার ছেলের সুস্থতা ফিরে আসবে।
পরিবার প্রায়শই সামাজিক মাধ্যমে এমন ভিডিও প্রকাশ করত, যেখানে দেখা যেত কুরআন তেলাওয়াতের সময় কোমায় থাকা প্রিন্সের শরীরে সামান্য নড়াচড়া হচ্ছে। এই ভিডিওগুলো সাধারণ মানুষের মধ্যে আবেগ ও সহানুভূতির ঢেউ তোলে।
সৌদি আরবের একটি বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রিন্স আল ওয়ালিদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে।
স্লিপিং প্রিন্স হ্যাশট্যাগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাজার হাজার মানুষ তার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে থাকেন। অনেকেই বলছেন, তিনি শুধু একজন রাজপুত্রই ছিলেন না, বরং ধৈর্য, বিশ্বাস ও পিতৃস্নেহের জীবন্ত প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন।
২০ বছরের বেশি সময় ধরে প্রিন্সের হাসপাতাল কক্ষটি যেন এক আধ্যাত্মিক স্থান হয়ে ওঠে। সেখানে নিয়মিত দোয়া-তিলাওয়াত চলত, দর্শনার্থীরা প্রার্থনা করতেন।

তার জীবন এবং সংগ্রাম একদিকে যেমন চিকিৎসা বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতাকে স্মরণ করিয়ে দেয়, তেমনি অন্যদিকে মানবীয় মমত্ববোধ, বিশ্বাস এবং পারিবারিক ভালোবাসার এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
সৌদি আরব এবং বিশ্বজুড়ে অনেকেই এই “স্লিপিং প্রিন্স”-এর কাহিনি মনে রাখবেন একজন সাহসী পিতা ও তার অবিচল সন্তানের প্রতিচ্ছবি হিসেবে।