হোয়াইট হাউসে বৈঠকের আগে ইউক্রেনে রুশ হামলা, নিহত ১২

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ শান্তি আলোচনার জন্য ওয়াশিংটনে অবস্থান করছেন, ঠিক তখনই রাশিয়ার ভয়াবহ হামলায় ইউক্রেনজুড়ে অন্তত ১২ জন বেসামরিক নিহত হয়েছেন।
দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভে রোববার (১৭ আগস্ট) রাতে এক আবাসিক এলাকায় রুশ ড্রোন হামলায় সাতজন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে একটি পরিবার, এক শিশু ও ১৬ বছরের এক কিশোরও রয়েছে। এ হামলায় আহত হয়েছেন আরও ২০ জন, যাদের মধ্যে ছয়জন শিশু।
পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্ক অঞ্চলে রুশ হামলায় পাঁচজন নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন। সেখানে সবচেয়ে তীব্র লড়াই চলছে। পুতিন চান, ইউক্রেন যেন এ অঞ্চলের অবশিষ্ট এক-তৃতীয়াংশ থেকে সেনা প্রত্যাহার করে।
দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জাপোরিঝিয়ায় অন্তত ১৭ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া সুমি ও ওডেসা অঞ্চলেও রুশ বিমান হামলা চালানো হয়েছে। ইউক্রেনীয় সেনারা জানিয়েছে, এক রাতেই রাশিয়া ১৪০টি ড্রোন ও ৪টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, যার মধ্যে ৮৮টি ভূপাতিত করা সম্ভব হয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে রাশিয়া প্রায় ২ হাজার ৬০০ ড্রোন হামলা চালিয়েছে, যা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সর্বোচ্চ। এ সময়ে ৩০০-এর বেশি বেসামরিক নিহত হয়েছে।
ইউক্রেন জানিয়েছে, তাদের ড্রোন রাশিয়ার তামবভ অঞ্চলের একটি তেল পাম্পিং স্টেশনে আঘাত হেনেছে, যার ফলে দ্রুজবা পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
সর্বশেষ হামলাগুলোকে “অহংকারপূর্ণ ও নৃশংস প্রদর্শনীমূলক হত্যাকাণ্ড” আখ্যা দিয়েছেন জেলেনস্কি। তিনি বলেন, “পুতিন ইউক্রেন ও ইউরোপের ওপর চাপ ধরে রাখতে এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে হেয় করতে এসব হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছেন।”
সোমবার জেলেনস্কি ট্রাম্প ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েনসহ ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেন। আলোচনায় নিরাপত্তা নিশ্চয়তা, মানবিক সহায়তা, যুদ্ধবন্দি বিনিময়সহ বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। তবে ভূখণ্ড-সংক্রান্ত আলোচনাকে তিনি পুতিনের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের জন্য রাখছেন।
ইউক্রেন সংবিধান অনুযায়ী কোনো ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়া নিষিদ্ধ হলেও, আলোচনার টেবিলে সম্ভাব্য ছাড় এবং ন্যাটো-ধাঁচের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
কুইন্সি ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক আনাতোল লিভেন বলেন, “বর্তমানে রাশিয়া ধীরে হলেও স্থলযুদ্ধে অগ্রসর হচ্ছে। ইউক্রেন পিছিয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতি পুতিনকে যুদ্ধবিরতি নয়, বরং পূর্ণাঙ্গ শান্তি চুক্তির দিকে চাপ দিতে উৎসাহিত করছে।”

ইউরোপীয় নেতাদের একসঙ্গে ওয়াশিংটন সফরের পেছনে কৌশলগত বার্তা রয়েছে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প ও মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের প্রকাশ্য তিরস্কারের পর জেলেনস্কির এই সফরকে তারা গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।