যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে স্কুলে মোবাইল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকির লুইসভিলের ডস হাই স্কুলে শেষ বর্ষের ক্লাস শুরু করেছেন জামেল বিশপ। তার ক্লাসে পাঠদানের সময় এখন মোবাইল ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। যে কারণে শ্রেণিকক্ষের পরিবেশে নাকি বড় পরিবর্তন চোখে পড়েছে তার।
জামেল বলেন, আগের বছরের ক্লাসগুলোতে শিক্ষার্থীরা তেমন মনোযোগ দিতেন না, একই প্রশ্ন বারবার করে সময় নষ্ট করতেন। তবে এখন যেসব শিক্ষার্থীদের সহায়তা প্রয়োজন তাদের এক এক করে আরও বেশি সময় দিতে পারছেন শিক্ষকরা।
নতুন শিক্ষাবর্ষে শ্রেণিকক্ষে মোবাইলফোন নিষিদ্ধের এ সিদ্ধান্ত নেওয়া মার্কিন ১৭টি অঙ্গরাজ্যে ও ডিসট্রিক্ট অব কলম্বিয়ার একটি হলো কেন্টাকি। এতে স্কুলে মোবাইলফোন ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা আরোপকারী অঙ্গরাজ্যের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫টিতে। ২০২৩ সালে প্রথম এই নিয়ম চালু করেছিল ফ্লোরিডা।
মোবাইলফোনের ব্যবহার শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এবং শিক্ষা থেকে তাদের মনোযোগ সরিয়ে দেয় বলে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় দলই এই উদ্যোগের সমর্থন করেছে। যদিও প্রভাবগুলো অতটা স্পষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেছেন অনেক গবেষক।
গত সপ্তাহে আটলান্টায় মোবাইল ফোন ব্যবহারের ওপর আয়োজিত এক আলোচনায় জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধি স্কট হিলটন বলেন, ক্যালিফোর্নিয়া ও ফ্লোরিডায় যদি কোনো বিল পাস হয়, তাহলে বুঝতে হবে সেটি বেশ জনপ্রিয় উদ্যোগ।
নতুন নীতিমালার আওতায় ১৮টি অঙ্গরাজ্য এবং ডিসট্রিক্ট অব কলম্বিয়ায় পুরো স্কুলেই সারা দিন মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ। তবে জর্জিয়া ও ফ্লোরিডায় এই নিষেধাজ্ঞা কিন্ডারগার্টেন থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয় শুরু থেকে ছুটির ঘণ্টা পড়ার আগ পর্যন্ত প্রযোজ্য। আরও সাতটি অঙ্গরাজ্যে কেবল ক্লাস চলাকালে ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ, তবে ক্লাসের ফাঁকে বা দুপুরের খাবারের সময় তা ব্যবহার করা যাবে।
অন্যদিকে, স্থানীয়ভাবে স্কুল পরিচালনার ঐতিহ্য রয়েছে— এমন কিছু অঙ্গরাজ্যে কেবল একটি মোবাইল ফোন নীতিমালা বাধ্যতামূলক করেছে। অন্যরাও ইঙ্গিতটি বুঝে নিয়ে ফোন ব্যবহারে কঠোর সীমাবদ্ধতা আরোপ করবে বলে তাদের বিশ্বাস।
অভিভাবকদের আপত্তি
এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের পরিচালিত জর্জিয়ার ১২৫টি স্কুলে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের সামাজিক ও ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আরোপের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের আপত্তিই সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
অড্রিয়ান্নার মা অড্রেনা জনসন বলেন, তার সন্তানরা স্কুলে সহিংসতা থেকে নিরাপদ আছে কি না এই নিয়ে তিনি সবচেয়ে বেশি চিন্তিত থাকেন। বিভিন্ন হুমকির বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ যেসব সতর্কবার্তা পাঠায় বেশিরভাগ সময়ই তা দেরিতে কিংবা অসম্পূর্ণভাবে আসে।
একটা উদাহরণ দিয়ে অড্রেনা বলেন, একবার ম্যাকনেয়ারের শিক্ষার্থী নন, এমন একজন স্কুল প্রাঙ্গণে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ক্লাস চলাকালীন তার মেয়ের পাঠানো মেসেজের মাধ্যমেই তিনি সে বিষয়ে জানতে পেরেছিলেন।
অড্রেনা বলেন, ‘আমার সন্তানের কাছে ফোন থাকাটা আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তাহলে কখন কী হচ্ছে, আমি সঙ্গে সঙ্গেই তা জানতে পারি।’
ন্যাশনাল প্যারেন্টস ইউনিয়নের জাতীয় পার্টনারশিপস পরিচালক জেসন অ্যালেন বলেন, অনেক বাবা-মা অড্রেনার সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন। তারা নীতিনির্ধারণে নিজেদের মত দিতে চান। সন্তানের নিরাপত্তার বিষয়ে তারা আরও কার্যকর যোগাযোগ চেয়েছেন।
অভিভাবকদের ভাষ্য, বাচ্চাদের সময়সূচির সঙ্গে সমন্বয় করা প্রয়োজন। তাছাড়া সন্তানরা কোনো সমস্যায় পড়লে তা দ্রুত জানতে পারাটাও তাদের জন্য জরুরি।
অ্যালেন বলেন, ‘আমরা কেবল মোবাইল ফোন নীতির পরিবর্তন করেছি। কিন্তু নিরাপত্তা নিয়ে অভিভাবকদের যে চাহিদা, তা পূরণ করছি না। এমনকি শিক্ষার্থীদের সামাজিক ও মানসিক উন্নয়নে কাজ করার জন্য শিক্ষকদের যথাযথভাবে প্রশিক্ষণও দিচ্ছি না।’