পুতিন-জেলেনস্কির মধ্যে বৈঠকের পরিকল্পনা নেই, জানাল রাশিয়া

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠকের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনের সঙ্গে কূটনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা থেমে যাওয়ায় আজ শুক্রবার (২২ আগস্ট) এ কথা জানান রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। খবর এএফপির।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ বলেন, ভ্লাদিমির পুতিন ও জেলেনস্কির মধ্যে ‘কোনো বৈঠকের’ পরিকল্পনা করা হয়নি।
ন্যাটো প্রধান মার্ক রুট অবশ্য কিয়েভ সফর করেছেন, মূলত ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনার জন্য।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সপ্তাহের শুরুতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টদের মধ্যে দ্রুত শীর্ষ সম্মেলনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছিলেন। কিন্তু শুক্রবার তিনি এই দুই ব্যক্তিকে ‘তেল ও ভিনেগারের’ সঙ্গে তুলনা করেছেন।
ওয়াশিংটনে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্পষ্ট কারণেই তারা খুব একটা ভালোভাবে মিশে না।’
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। একইসঙ্গে তিনি ক্রেমলিনের সর্বোচ্চ দাবির পুনরাবৃত্তি করে মূলত চতুর্থ বছরে গাড়ানো এই সংঘাতের সমাধানে পুতিন-জেলেনস্কির সরাসরি বৈঠকের আশায় ঠান্ডা পানি ঢেলে দিলেন।
এনবিসির ‘মিট দ্য প্রেস উইথ ক্রিস্টেন ওয়েলকার’ অনুষ্ঠানে ল্যাভরভ বলেন, ‘বৈঠকের কোনো পরিকল্পনা নেই।’
ল্যাভরভ এই মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যমকে বলেন, পুতিন একটি এজেন্ডা প্রস্তুত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ‘জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে প্রস্তুত’। তবে তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে এজেন্ডা ‘একেবারেই প্রস্তুত নয়’।
এদিকে কিয়েভে ন্যাটো প্রধান মার্ক রুটের সঙ্গে সাক্ষাতে জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের কোনো চুক্তির বিষয় নেই। ইউক্রেন কেবল ট্রাম্পের সঙ্গে কূটনৈতিক দিকনির্দেশনা কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যেতে পারে সে বিষয়ে একমত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘বৈঠক আয়োজনের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টার’ অভিযোগ এনেছিলেন। তিনি আরও যোগ করেন, মস্কো আক্রমণ চালিয়ে যেতে চায়।
সংঘাতের অবসান ঘটাতে শান্তি চুক্তির মধ্যস্থতায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন সর্বশেষ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ছিল ইউক্রেনের জন্য চূড়ান্ত নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রশ্নটি সামনে ও কেন্দ্রবিন্দুতে রাখা। ট্রাম্প এর আগে বলেছিলেন, রাশিয়া কিয়েভের জন্য কিছু ‘পশ্চিমা নিরাপত্তা’ নিশ্চয়তায় সম্মত হয়েছে। কিন্তু মস্কো পরে এই ধরনের কোনো ব্যবস্থা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে। গত বুধবার ল্যাভরভ বলেন, রাশিয়া ছাড়া তাদের নিয়ে আলোচনা করা ‘একটি কল্পরাজ্য, কোথাও যাওয়ার রাস্তা নেই’।
ভবিষ্যতে রাশিয়ার আক্রমণ ঠেকাতে ইউক্রেনে বিদেশি সেনাদের চান জেলেনস্কি। তবে তিনি বলেন, ‘রাশিয়া যখন নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয়টি উত্থাপন করে, তখন সত্যি বলতে আমি এখনও জানি না—কে তাদের হুমকি দিচ্ছে।’
ক্রেমলিন অবশ্য দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে, তারা কখনোই ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্য হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে মেনে নেবে না। এটিকেই আক্রমণের অন্যতম অজুহাত হিসেবে উল্লেখ করেছে রাশিয়া।
ল্যাভরভ এনবিসিকে বলেন, ‘ওয়াশিংটন বিশ্বাস করে, বেশ কিছু নীতি (ইউক্রেনের) মেনে নেওয়া উচিত, যার মধ্যে ন্যাটোর সদস্যপদ না থাকা ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা। কিন্তু জেলেনস্কি সবকিছুতেই না বলেছেন।’

কিয়েভ সফরকালে শহরজুড়ে যখন বিমান হামলার সতর্কতা জারি করা হয়েছিল, তখন ন্যাটো প্রধান মার্ক রুট বলেন, ‘রাশিয়া যেকোনো চুক্তি মেনে চলবে এবং আর কখনও ইউক্রেনের এক বর্গকিলোমিটার দখলের চেষ্টা করবে না’ তা নিশ্চিত করার জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা প্রয়োজন।
রাশিয়া প্রথমে ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করে নেয়। এরপর ২০২২ সালে ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণ শুরু করে। এতে এ পর্যন্ত হাজার হাজার নিহত হয়েছে এবং লাখ লাখ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।