রাজতন্ত্র অবমাননায় ৪৩ বছরের সাজা, রাজার জন্মদিনে মুক্তি

থাইল্যান্ডের রাজতন্ত্র অবমাননার অভিযোগে দেশের অন্যতম দীর্ঘ সাজাপ্রাপ্ত নারী আনচান প্রিলার্ট কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। রাজার জন্মদিন উপলক্ষে ঘোষিত একটি সাধারণ ক্ষমার আওতায় বুধবার (২৭ আগস্ট) তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। খবর এএফপির।
৬৯ বছর বয়সী আনচানকে ২০২১ সালে ৪৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তিনি ‘ডিজে বানপোডজ’ নামে পরিচিত একজন অনলাইন পডকাস্টারের অডিও ক্লিপ ইউটিউবে শেয়ার করেছিলেন, যেখানে রাজতন্ত্রের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে রাজতন্ত্র অবমাননার ২৯টি অভিযোগ আনা হয়েছিল। প্রতিটি অপরাধের জন্য ৩ বছর করে মোট ৮৭ বছরের সাজা হয়েছিল। তবে আদালতে নিজের অপরাধ স্বীকার করায় তার সাজা অর্ধেক কমিয়ে ৪৩ বছর করা হয়।
২০১৫ সালে সামরিক সরকারের শাসনামলে সাবেক সরকারি কর্মচারী আনচানকে প্রথম গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর কারাগারে থাকার পর আজ সকালে ব্যাংককের সেন্ট্রাল উইমেন্স কারেকশনাল ইনস্টিটিউশন থেকে মুক্তি পান। এদিন আরও ৮৪ জন বন্দিকে সাধারণ ক্ষমা প্রদান করা হয়। সাদা টি-শার্ট এবং বেগুনি স্কার্ফ পরা আনচানকে বাইরে থাকা সমর্থকরা ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানায় এবং ‘বাসায় স্বাগতম’ লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে। আনচান সাংবাদিকদের বলেন, আট বছর আমি সেখানে ছিলাম...এটা আমার জন্য একটি তিক্ত অভিজ্ঞতা।
থাইল্যান্ডের আর্টিকেল ১১২ নামে পরিচিত ‘লেস-ম্যাজেস্ট’ আইন, রাজপরিবারকে যেকোনো ধরনের সমালোচনা থেকে সুরক্ষা দেয়। এই আইনে প্রতিটি অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ১৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং সমালোচকরা বলছেন, দেশটিতে এই আইন অতিমাত্রায় প্রয়োগ করা হয়। যা বৈধ বিতর্ককেও বাধাগ্রস্ত করে। আনচান ২৯ বার আপত্তিকর ক্লিপগুলো পোস্ট করেছিলেন, এবং আইন অনুযায়ী প্রতিটি পোস্টকে আলাদা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল।
আনচানের এই সাজা ছিল 'লেস-ম্যাজেস্ট' আইনের অধীনে দেওয়া তখন পর্যন্ত সবচেয়ে দীর্ঘ কারাদণ্ড। তবে ২০২৪ সালে মংখল থিরাকট নামে ৩২ বছর বয়সী এক অনলাইন বিক্রেতাকে ফেসবুক পোস্টে রাজতন্ত্র অবমাননার অভিযোগে অন্তত ৫০ বছরের সাজা দেওয়া হলে সেই রেকর্ডটি ভেঙে যায়।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বেশ কয়েকটি মানবাধিকার গোষ্ঠী আনচানের মুক্তিকে থাইল্যান্ডে রাজনৈতিক বন্দীদের জন্য একটি বিরল স্বস্তি হিসেবে স্বাগত জানিয়েছে।
থাই ল'ইয়ার্স ফর হিউম্যান রাইটস নামক একটি সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে ২ শতাধিক মানুষের বিরুদ্ধে আর্টিকেল ১১২ ধারায় মামলা করা হয়েছে। ২০২০ সালে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে ব্যাপক বিক্ষোভের পর এই আইনে মামলার সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়, যেখানে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে রাজার সমালোচনা করা হয়েছিল।