গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার সুরক্ষায় সরকারের পতন জরুরি : বিএনপি

ক্ষমতাসীন সরকারকে গণতন্ত্র হত্যাকারী ও রিজার্ভ চোর আখ্যায়িত করে ফরিদপুরের গণসমাবেশ থেকে বিএনপি নেতারা বলেছেন, ভোট ছাড়াই ক্ষমতায় এসে সরকার দেশের সকল গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে। মেগাপ্রকল্পের নামে মেগাদুর্নীতির মাধ্যমে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে। দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া করে দিয়েছে। গত এক বছরেই সরকার দশ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে। দেশের গণতন্ত্র ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ উদ্ধারে এ সরকারের পতন জরুরি।
ফরিদপুরের কোমরপুর আবদুল আজিজ ইনস্টিটিউশন মাঠে আজ শনিবার বিকেলে গণসমাবেশে জনতার উদ্দেশে নেতারা বলেন, সরকারকে টেনে-হেঁচড়ে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে সত্যিকারের জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। লড়াই হবে রাজপথে। ফয়সালাও হবে রাজপথে। গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের এ লড়াইয়ে সবাইকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপির নেতারা।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন, দলীয় নেতাকর্মীদের হত্যার বিচার, দলের চেয়ারপারসনের নিঃশর্ত মুক্তি ও দ্রব্যমূল্য কমিয়ে মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনাসহ নয়টি দাবিতে বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত ষষ্ঠ গণসমাবেশ এটি।
আগের ৫টি গণসমাবেশের মতো গণপরিবহণ ধর্মঘট ডেকে ফরিদপুরকেও গোটা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। সব বাধা উপেক্ষা করেই এখানেও বিশাল শোডাউন করে বিএনপি।
রাষ্ট্রের মেরামত চাই, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ চাই : মির্জা ফখরুল
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ২০১৪ সালে একটা নির্বাচন করেছেন, ২০১৮ সালের একটা নির্বাচন করেছেন। এবার দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। আওয়ামী লীগের পদত্যাগ করতে হবে, নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। নির্বাচনের পর জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। আমরা রাষ্ট্রের মেরামত চাই। দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ চাই।
গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনে সংগ্রামকে আরও জোরদার করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সমস্ত মানুষকে জেগে উঠতে হবে। ৩৫ লাখ মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আওয়ামী লীগ যে অগ্নিসন্ত্রাসের কথা বলে, তার হোতা আওয়ামী লীগ। ১/১১ আনার জন্য তারা অগ্নিসন্ত্রাস করেছে। আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে সরকার থেকে পদত্যাগ করেছিলাম। নির্বাচনে আমরা হেরে মেনে নিয়েছি। আজ তত্ত্বাবধায়ক দেওয়া হচ্ছে না। সময় হয়েছে নতুন করে স্বাধীনতা নিয়ে আসার। দেশের ১৮ কোটি মানুষের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।
তিনি বলেন, এই ফরিদপুরের মানুষ লড়াই করেছে ভোটের অধিকারের জন্য, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য। এই লড়াই টিকে থাকার লড়াই। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন। স্বাধীন দেশের স্বাধীনতার পতাকাকে রক্ষা করার লড়াই আমাদের। যে পতাকা রক্ষা করেছিলেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তাঁকে মুক্ত করতে হবে। এখন আমাদের নেতৃত্বে দিচ্ছেন তারেক রহমান।
চুরির টাকা ফেরত আনেন, দেশে দুর্ভিক্ষ হবে না : মির্জা আব্বাস
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, একনায়কতন্ত্রের যেভাবে পতন হয়, তা আপনারা সহ্য করতে পারবেন না। আমাদের দাবি, চুরির টাকা যা নিয়ে গেছেন, তা ফেরত আনেন। দেশে দুর্ভিক্ষ হবে না। ৪৭ সালে একটা হয়েছিল সেটা অন্য কারণে। রাজনৈতিক কারণে নয়। এখন যদি হয় রাজনৈতিক কারণে হবে।
‘গলা টিপে ধরার দিন শেষ, এখন খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের বাংলাদেশ’উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সরকারের অধীনে আপনারা ভোট দিতে পারবেন না। আমরা লড়াই করে ভোটের অধিকার আদায় করবো। নয় হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে পাচার করে দিয়ে, ডাল কেনার টাকা, চাল কেনার টাকা নাই, শুধু নাই নাই। শুধু আছে আওয়ামী লীগ। তাও আবার জনসমর্থনহীন আওয়ামী লীগ।
মির্জা আব্বাস বলেন, এইভাবে চলতে থাকলে সরকারের সমর্থন কমে যাবে, গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে। আরে সরকারের সমর্থন যদি থাকতো তাহলে তো আমাদের সমাবেশে বাধা দিতো না। সুযোগ পেলে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানকে জানাবো, আপনাদের ভালোবাসার কথা। ফরিদপুরবাসীকে ধন্যবাদ জানাই, আপনারা আওয়ামী লীগকে দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছেন।
ফরিদপুরের মহাসমাবেশে মানুষ উজ্জীবিত হয়েছে : আমীর খসরু
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ফরিদপুর জেগেছে, ফরিদপুর বার্তা দিয়েছে। এই মাঠের বাইরেও একটি বিশাল অংশ জনতা রয়েছে। আজকের মহাসমাবেশে মানুষ উজ্জীবিত হয়েছে। এর আগে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশালে সমাবেশ হয়েছে। ফরিদপুর থেকে আজকে বার্তা দিয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীরা আগামীদিনে আন্দোলন কেমন হবে- এর বার্তা দিয়েছে।
আমীর খসরু বলেন আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। নির্বাচনের ফলাফল কি হবে তার বার্তা আজকে আপনারা (বিএনপি নেতাকর্মীরা) দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ অনেক চেষ্টা করেছে, বাধা নিয়ে এই সমাবেশ ঠেকাতে। বাস, টেম্পু সব বন্ধ করেও মানুষের বাঁধভাঙা জোয়ার ঠেকাতে পারেনি। ৬ জন সহকর্মী জীবন দিয়েছে ইতোমধ্যে। ৩৫ লাখ বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। তারপরও এখানে এসেছেন আপনারা।
যত বাধা আসুক গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে : শামা ওবায়েদ
বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেছেন, যত বাধা আসুক না কেন, গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে। সেদিন খালেদা জিয়া মুক্ত হবে। তারেক রহমান দেশে এসে নেতৃত্ব দিবে। এ সমাবেশ প্রমাণ করে ফরিদপুরের প্রতিটি বালুকণা বিএনপির দখলে। ২০১৮ সালে যখন ব্যালট ছিনতাই হয়েছিল, সেই রাতে টুঙ্গিপাড়াতেও ব্যালট ছিনতাই করতে হয়েছে আওয়ামী লীগকে! ফরিদপুরে আর আওয়ামী লীগের কোনো ঘাঁটি নেই। এটি এখন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের দখলে।
ফরিদপুর থেকেই গণসমাবেশের নতুন যাত্রা শুরু : ডা. জাহিদ
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, ফরিদপুর থেকেই গণসমাবেশের নতুন যাত্রা শুরু। সবাই জানত এই ফরিদপুর নাকি কার ঘাঁটি, তাদের বাপ-দাদার পৈতৃক সম্পত্তি। আপনারা প্রমাণ করে দিয়েছেন এই ফরিদপুর বিএনপি, খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের ঘাঁটি। এই ফরিদপুর থেকেই গণসমাবেশের নতুন যাত্রা শুরু হবে। আগামী ১০ ডিসেম্বব ঢাকায় সমাবেশের মধ্য নিয়ে এই নতুন যাত্রা শেষ হবে
জনগণ এই সরকারের এখনই পদত্যাগ চায় : খোকন
আগামী ৩১ ডিসেম্বর সরকারের শেষ সময় এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেছেন, জনগণ এই সরকারের এখনই পদত্যাগ চায়। ১৪ বছর দেশ চালাইছেন, অনেক উন্নয়ন করেছেন। এখন দুর্ভিক্ষের কথা বলছেন। আমাদের দুর্ভিক্ষের দরকার নেই। দাবি করছি, আগামী ৩১ ডিসেম্বর লাস্ট টাইম। দয়া করে ২০২২ সালের মধ্যে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেন।
দুর্ভিক্ষের কথা বলে নির্বাচন পেছাতে চায় সরকার : হেলেন জেরিন
জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান বলেছেন, শেখ হাসিনা দুটি ফন্দি করছে। একটি হলো-দুর্ভিক্ষের কথা বলে দেশের নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চায়। কিন্তু আমরা সেটা হতে দেব না। অপরটি হলো আওয়ামী লীগের গুন্ডাবাহিনী দিয়ে দেশে জ্বালাও পোড়াও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে বিএনপির সমাবেশ নস্যাৎ করার চেষ্টা করছে
হেলেন জেরিন খান বলেন, ফরিদপুর শেখ হাসিনার নিজের শহর। ফরিদপুর তোমার নিজের বিভাগ। তুমি অনেক চেষ্টা করেছ সমাবেশে বাধা দিতে কিন্তু কেউ শুনেনি। তোমাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে লাখ লাখ মানুষ সমাবেশ হাজির হয়েছে। এ সমাবেশ প্রমাণ করেছে দেশের মানুষ খালেদা জিয়ার কথা শুনে, তারেক রহমানের কথায় দেশ চলে। মির্জা ফখরুলের কথায় মানুষ চলে।