প্রিমিয়ার বন্ধ, হামলাকারীরা ‘বহিরাগত’

দুটি পক্ষের মধ্যে বিরোধের জেরে এক শিক্ষার্থী খুনের ঘটনার পর চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়টি বিবিএ ওয়াসা ক্যাম্পাসে এ হত্যাকাণ্ডের পর পরই কর্তৃপক্ষের বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বন্ধের ঘোষণা এলো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. আবু তাহের স্বাক্ষরিত এ বিজ্ঞপ্তিতে হত্যার পর বিভিন্ন ভবনে হামলা ও ভাঙচুরে জড়িতদের ‘বহিরাগত’ বলে দাবি করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, আগামী ৩১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩তম র্যাগ ডে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এ আয়োজনকে সামনে রেখে বেশ কিছুদিন ধরে বিবিএ ওয়াসা ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের দুটি পক্ষের মধ্যে বিবাদ চলছিল। এ থেকেই অসন্তোষের সৃষ্টি। এর জের ধরে আজ দুপুরে শিক্ষার্থীদের দুটি পক্ষের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়।
একপর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় প্রতিপক্ষ এমবিএ শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী নাছিম আহমেদ সোহেলকে ছুরিকাঘাত করে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর সোহেল মারা যান।
সোহেলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবর্তক ও ওয়াসা ক্যাম্পাস ভাঙচুর করেছে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা যানবাহন, বিভিন্ন ভবনের জানালা ও মূল্যবান জিনিস ভাঙচুর করে।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ছাত্রদের মধ্যে একটি অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে এক ছাত্র দুষ্কৃতকারীদের হাতে নিহত হয়।’
‘এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেলা সাড়ে ৩টায় কতিপয় বহিরাগত দুষ্কৃতকারী প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ক্যাম্পাসে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে বিপুল ক্ষতি করেছে। দামপাড়ার বাণিজ্য অনুষদে যারা ভাঙচুর করেছে তাদের মধ্যে অধিকাংশ বহিরাগত দুষ্কৃতকারী।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ‘এসব ভাঙচুরের কারণে ও অনিবার্য কারণে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে।’
প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়টি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন হলেও উচ্চ আদালতের রায় নিয়ে সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী তা পরিচালনা করছেন।
আমিই সন্তানহারা হয়েছি : মহিউদ্দিন চৌধুরী
প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিবিএ ছাত্রদের মধ্যে সংঘঠিত মারামারির ঘটনাকে অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয় বলে আখ্যায়িত করেছেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা আলহাজ এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী।তিনি এ ঘট্নার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন।
বিকেলে মহিউদ্দিন চৌধুরীর একান্ত সচিব মুহাম্মদ ওসমান গণি স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক এ মেয়র বলেন, ‘যারা প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্র ক্যম্পাসকে রক্তাক্ত করেছে, তারা আমার শরীরের রক্ত ঝরিয়েছে। আমার শরীর আর মন দুই আজ রক্তাক্ত। এই ঘটনায় নিহত সোহেলর পিতা-মাতা সন্তান হারা হননি। আমিই সন্তান হারা হয়েছি। আমার এই সন্তান হত্যার বিচার চাই। খুনিদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হোক এবং খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবেই।’
মহিউদ্দিন চৌধুরী ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক এবং নগরবাসীকে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘কিছু সংখ্যক হটকারী ও ষড়যন্ত্রকারী ব্যক্তির কারণে এই পবিত্র বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস হতে পারে না। একইসঙ্গে এ ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবি জানাচ্ছি।’