ভুল চিকিৎসায় নারীমৃত্যুর অভিযোগ, হাসপাতালে ভাঙচুর
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ভুল চিকিৎসায় সেলিনা বেগম (৪৭) নামে এক নারীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগে হাসপাতালটিতে ভাঙচুর চালিয়েছেন রোগীর স্বজনরা। আজ শনিবার (৮ জুলাই) সকালে শহরের কমলপুর নিউটাউন এলাকার গ্রামীণ জেনারেল হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে হাসপাতালটি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
নিহত সেলিনা বেগম শহরের দক্ষিণ জগন্নাথপুরের আওয়ালকান্দা এলাকার আক্তার মিয়ার স্ত্রী। পুলিশ, রোগীর স্বজন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সূত্র জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) সেলিনা বেগম জরায়ুর সমস্যা নিয়ে গ্রামীণ জেনারেল হাসপাতালে আসেন। সেখানে তিনি ডা. ফাহিমা শারমিন হানি ও ডা. দীপঙ্কর রায়ের তত্ত্বাবধানে ভর্তি হন।
নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে গতকাল শুক্রবার (৭ জুলাই) বিকেলে সেলিনা বেগমের জরায়ু অপারেশন করা হয়। রাত ২টার দিকে তার স্বাস্থ্যের অবনতি দেখা দিলে রোগীর স্বজনরা হাসপাতালের স্টাফদের বিষয়টি জানালে তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে উল্টো তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। রাত ৪টার দিকে রোগীর অবস্থা আরও অবনতি হয়। তিনি তখন অজ্ঞান হয়ে যান। এমন অবস্থায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জরুরি তাকে ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেন।
স্বজনদের অভিযোগ, তখনই সেলিনা বেগম মারা যান। তারপরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চাপে তারা অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার পথে রওনা হন। কিন্তু, রোগীর জীবিত থাকা নিয়ে তাদের সন্দেহ হলে পথিমধ্যে নরসিংদীর একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। এ সময় চিকিৎসকরা সেলিনাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরে স্বজনরা মরদেহ নিয়ে গ্রামীণ জেনারেল হাসপাতালে আসলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রধান ফটকে তালা দিয়ে তাদের ভেতরে ঢুকতে বাঁধা দেয়। তখন উত্তেজিত স্বজনরা হাসপাতালটিতে ভাঙচুর চালায়।
এই বিষয়ে নিহত সেলিনার স্বামী আক্তার মিয়া বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর ভুল চিকিৎসায় আমার স্ত্রী মারা গেছে। আমি সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে এই হত্যাকান্ডের বিচার চাই।’
এ বিষয়ে জানতে বারবার চেষ্টার পরও ডা. ফাহিমা শারমিন হানি ও ডা. দীপঙ্কর রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। এমনকি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও অসহযোগিতা করেছে।
হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বদিউজ্জামান বদি জানান, ডা. ফাহিমা শারমিন হানি ও ডা. দীপঙ্কর রায়ের তত্ত্বাবধানে সেলিনা বেগমের চিকিৎসা চলছিল। শুক্রবার বিকেলে অপারেশন হয়। রাতে পরিস্থিতির অবনতি হলে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। পথিমধ্যে রোগীর মৃত্যু হলে সকালে তার স্বজনরা হাসপাতালটিতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে।
জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহম্মদ বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। অভিযোগ পেলে ভুল চিকিৎসার বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাকছুদুল আলম বলেন, ‘খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়। পরবর্তী অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’