কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা

রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন সর্বস্তরের মানুষ। ছাত্র-শিক্ষকসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন শহীদ মিনারে। বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল এবং তাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। অনেকে পরিবার নিয়েও এসেছেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। আজ শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ভোর থেকেই বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে।
এর আগে একুশের প্রথম প্রহরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর অন্যান্যদের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রাত ১২টা ৪০ মিনিটে সাধারণ মানুষকে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পলাশী মোড়ের প্রবেশপথ খুলে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই শহীদ মিনারে মানুষের ঢল নামে। ফুলের ডালা, গাঁদা-গোলাপের মালা আর হাতে হাতে লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে শহীদ বেদীর দিকে এগোতে থাকেন হাজারও মানুষ। শিশু থেকে বৃদ্ধ—সবার কণ্ঠে সুর ওঠে, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’।
১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় সারা বিশ্বে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
১৯৫২ সালের এদিনে ‘বাংলাকে’ রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে পূর্ববাংলার (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ছাত্র ও যুবসমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ সে সময়ের শাসকগোষ্ঠির চোখ-রাঙানি ও প্রশাসনের ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে আসে। মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে দুর্বার গতি পাকিস্তানি শাসকদের শঙ্কিত করে তোলায় সেদিন ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিক গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বাণীতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আমি বাংলাসহ বিশ্বের সব ভাষাভাষীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশ ও ইউনেস্কো যৌথভাবে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে আসছে। টেকসই উন্নয়নের জন্য ভাষাকে গুরুত্ব দিন, কারণ এ বছরের ইউনেস্কোর বিষয়বস্তু যৌক্তিক।’
ড. ইউনূস আরও বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ ও এর ভাষার মর্যাদা রক্ষায় ধারাবাহিকভাবে কাজ করছে, যা প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতেও কাজ করা হচ্ছে। ব্রেইল বইসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে।’

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যে পথে যাওয়া যাবে
শহীদ মিনারের প্রবেশ পথের মধ্যে রয়েছে—পলাশী ক্রসিং-ভাস্কর্য ক্রসিং-জগন্নাথ হল ক্রসিং এবং বের হওয়ার পথটি রমনা ক্রসিং-দোয়েল চত্বর হয়ে। এ ছাড়া শাহবাগ ক্রসিং, নীলক্ষেত ক্রসিং, শহিদুল্লাহ হল ক্রসিং, চাঁনখারপুল ক্রসিং, পলাশী ক্রসিং এবং বকশীবাজার ক্রসিংয়ে ডাইভারশন করা হবে।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ শ্রদ্ধা নিবেদনের সুবিধার্থে জনসাধারণকে এ নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে ডিএমপি।