দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়েও আত্মনির্ভরশীল আব্দুস সামাদ

আব্দুস সামাদ তালুকদার। জন্মের পর থেকে দেখেননি পৃথিবীর আলো। পৃথিবীর মানুষ, প্রকৃতি, সৌন্দর্য–কোনো কিছুই তাঁর দেখা হয়নি। আছে শুধু উপলব্ধি। আছে স্বজনদের কাছে শেখা ধর্মীয় ও কারো কাছে হাত না পাতার জ্ঞান।
জন্মগতভাবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সামাদ তালুকদার তবু পরনির্ভরশীল নন। অন্যের কাছে হাতপাতাকে দেখেন ঘৃণাভরে। আত্মবিশ্বাসী অদম্য এক ব্যক্তিত্ব তিনি।
নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বাঁশিলা গ্রামের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সামাদ তালুকদারের বয়স ৬৫ পাড়ি দিয়েছে। বাকি জীবনটা এভাবেই কাটাতে চান তিনি।
চোখের দৃষ্টিশক্তি না থাকলেও রয়েছে মনের কঠিনতম দৃষ্টি। রয়েছে শৈল্পিক জ্ঞান। হাতের নিপুণতা এমন পর্যায়ে যেন হাত দিয়েই সব দেখতে পান এই প্রৌঢ়। জীবন-জীবিকার প্রয়োজন তাঁকে করে তুলেছে শিল্পী। তাঁর হাতের ছোঁয়ায় গড়ে উঠছে বাঁশের ডালি, ধানের ধামা। সুতোর বুননে তৈরি করছেন গরু ছাগলের (গোমাই) মুখোশ। সংসারের যাবতীয় কাজ নিজেই করেন তিনি। জমিতে আগাছা পরিষ্কার, গবাদি পশুর খাবার সংগ্রহ, খড় কেটে গাবাদি পশুকে দেওয়া থেকে শুরু করে বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা দিয়ে কারো সহযোগিতা ছাড়াই পৌঁছে যান বাজারে। নিয়মিত গ্রামের মসজিদে আদায় করতে যান নামাজ।
আব্দুস সামাদ তালুকদারের সংসারে তিন সন্তান। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন আগেই। একচালা ঘরে স্ত্রী আর ছেলেকে নিয়ে তার বসবাস। ছেলে দিনমজুরের কাজ করে সংসারের স্বচ্ছলতার জোয়াল ধরে রেখেছেন। সব মিলিয়ে ভালো আছেন বলে জানান তিনি। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমছে কর্মক্ষমতা। কমছে কানের শোনার ক্ষমতাও। তাঁর সাহস ও প্রবল মনোবল দেখে হতবাক গ্রামের সব শ্রেণির মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম, আদন তালুকদার, আলেকজান বেওয়া, বেলাল হোসেন জানান, সামাদ তালুকদার চোখে না দেখলেও কারো কাছে হাতপাতা বা ভিক্ষার মতো অপমানজনক কাজ করেননি। নিজের ইচ্ছেশক্তিকে কাজে লাগিয়ে মেধা ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল কর্মী হয়ে উঠেছেন। নানা ধরনের হস্তশিল্প তৈরি করে তা বিক্রি করেই পাড়ি দিয়েছেন জীবনের দীর্ঘ পথ। তবে এই বৃদ্ধ বয়সে শরীর আর আগের মতো চলে না। একটু বিরতি নিতে চায়। একটু অবসর চায় বলে জানান আব্দুস সামাদ তালুকদার।
আব্দুস সামাদের বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সুমন সরকার বলেন, উনি চাইলে ছোট একটি দোকান তৈরির জন্য বিনা সুদে ঋণের ব্যবস্থা করে দেবে সমাজসেবা অধিদপ্তর।