গুলিস্তানের ফুটপাতে জমজমাট ঈদ বাজার

ঈদকে ঘিরে রাজধানীর প্রাণ কেন্দ্র গুলিস্তানের ফুটপাতে জমে উঠেছে পোশাকের বাজার। সারা বছরই এখানে তুলনামূলক কম দামে পোশাক, জুতা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য পাওয়া যায়, তবে ঈদের মৌসুমে কেনা-বেচা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁক-ডাকে মুখরিত থাকে পুরো এলাকা।
‘ব্যাইছা লন ১০০’, ‘দেইখ্যা লন ১০০’ ‘জোড়া লন ৩০০’-এমন ডাকাডাকির সঙ্গে চলছে ঈদের পোশাক বিক্রি। পাঞ্জাবি, পায়জামা, শার্ট, প্যান্ট, থ্রি-পিস, শাড়ি, লুঙ্গি, জুতা, ব্যাগ, আতর, টুপি সবই মিলছে এই অস্থায়ী দোকানগুলোতে। মূলত নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে পোশাক কিনতে এসব দোকানে ভিড় জমাচ্ছে।
গতকাল সোমবার (২৪ মার্চ) রাতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জমজমাট কেনা-বেচা হচ্ছে ফুটপাতে।
বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তরপশ্চিম গেটের সামনে, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ হকার্স সমিতি মার্কেট ও গুলিস্তান মোড়ের চারপাশের ফুটপাতে ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমে বেশ জমে উঠেছে। পোশাক থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় প্রায় সবকিছুই পাওয়া যাচ্ছে ফুটপাতে। এখানে প্যান্ট, শার্ট, পাঞ্জাবি, জুতা, বেল্ট, শিশুদের পোশাক, লুঙ্গি, মেয়েদের পোশাক, ট্রাউজার, পায়জামা, টি-শার্ট, ঘড়ি, শাড়ি, মানিব্যাগ, চশমা সবকিছুই পাওয়া যায়।
এখানে দোকান ও মান ভেদে ছেলেদের শার্ট পাওয়া যাচ্ছে ১৫০ থেকে ৫০০ টাকায়, জিন্স প্যান্ট ৩০০ থেকে ৮০০ টাকায়, গ্যাবাডিন প্যান্ট ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা, টি-শার্ট ১০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা, থ্রি-কোয়াটার প্যান্ট ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, পাঞ্জাবি ৩০০ থেকে ৮০০ টাকা, লুঙ্গি ২০০ থেকে ৬০০ টাকা, ফ্রক ২৫০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।
গোলাপ শাহ মাজারের পূর্ব দিকে টি-শার্টের দোকান নিয়ে বসেছেন জহির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘গুলিস্তানে সবসময় মানুষের আনাগোনা লেগেই থাকে। দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বেচাকেনা ভালোই হচ্ছে। ঈদবাজারে মানুষ নতুন পোশাক কিনে তাই আমাদের ব্যবসা ভালো যাচ্ছে।’
প্যান্ট বিক্রেতা মো. ইব্রাহীম বাসসকে বলেন, ‘এখান দিয়ে মানুষ সদরঘাট হয়ে বাড়িতে যাবে। আমাদের অনেক ক্রেতারা সদরঘাটগামী লঞ্চের যাত্রী। ভালো কাপড় দেখলে তারা আমাদের থেকে কিনে নিয়ে যায়। প্রতিদিনই ক্রেতাদের চাপ বাড়ছে। আশা করি ঈদের আগে আমাদের ব্যবসা আরও ভালো হবে।’
নারিন্দা এলাকা থেকে কেনাকাটা করতে এসেছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আবদুল মতিন। তিনি বলেন, ‘ছেলের জন্য পাঞ্জাবি ও পায়জামা কিনতে এসেছি। এখানে মার্কেটের তুলনায় কম দামে পাওয়া যায় যা আমাদের জন্য অনেক সুবিধা হয়। সুবিধা মতো দামে পাইলে নিজের জন্য ও কিনব। তবে দাম অন্য বছরের চেয়ে একটু বেশি মনে হচ্ছে।’
মগবাজার থেকে পোশাক শ্রমিক মো. রুবেল এখানে এসেছেন কেনাকাটা করতে। তিনি বলেন, ‘ঈদে সবসময়ই চেষ্টা করি মা-বাবা, ভাই-বোনদের জন্য কিছু কেনাকাটা করার। এখানে দরাদরি করে কম দামে কেনা যায়। একই জিনিস বড় মার্কেটে গেলে দাম বেশি পড়বে। আমাদের বাজেটের মধ্যে ফুটপাতেও ভালো জিনিস পাওয়া যায়। তাই এখানে আসা।’
ঈদের আগের কিছুদিন গুলিস্তানের ফুটপাতে সবচেয়ে বেশি ভিড় হয়। ক্রেতারা শেষ মুহূর্তে কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ফলে বিক্রির পরিমাণ আরও বাড়ে। তাই শেষ মুহূর্তে ভালো বিক্রির আশা করেছেন ব্যবসায়ীরা।