মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেখালেন ইউএনও মঈনুল হক

২৫ বছর ধরে খোলা আকাশের নিচে শিকলবন্দী অবস্থায় জীবন কাটাচ্ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন বিমল হালদাল (৫৫)। সম্প্র্রতি এ বিষয় নিয়ে এনটিভি অনলাইনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে বিমল হালদারের পাশে এসে দাঁড়ালেন গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মঈনুল হক।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মঈনুল হক পূর্বপাড়া গ্রামে বিমল হালদারের বাড়িতে যান। তিনি বিমল হালদারের বড় ভাই জগদীশ হালদারের হাতে চাল, ডালসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী, পোশাক ও নগদ অর্থ তুলে দেন।
এ সময় উপজেলা প্রকৌশলী শফিউল আজম, সমাজসেবা অফিসার রাকিবুল হাসান শুভ, প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার আনসার আলী উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মঈনুল হক বলেন, দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে খোলা আকাশের নিচে শিকলবন্দী অবস্থায় রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে মানবেতর জীবনযাপন করছিল। এ বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি আমার নজরে আসে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিমল হালদারকে থাকার জন্য বাথরুমসহ একটি পাকা ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। আজকেই এই ঘরের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।
মো. মঈনুল হক আরো বলেন, এছাড়াও বিমল হালদারের জন্য একটি প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং তার ভাইয়ের পরিবারের জন্য ভিজিটি কার্ড করে দেওয়া হবে। শুধু বিমল হালদারই নয় এ ধরনের মানসিক ভারসাম্যহীন সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের পাশে উপজেলা প্রশাসন সার্বক্ষণিক থাকবে।
বিমল হালদারের ভাই জগদীশ হালদার বলেন, বিমল খুব মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। এইচএসসি পরীক্ষার সময় কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারায়। ওই সময় পাবনাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে এবং ভারতে বিমলের চিকিৎসা করানো হয়। এরপর আত্মীয়-স্বজনের পরামর্শে বিয়ে দেওয়া হয় বিমলকে। স্ত্রী ও এলাকাবাসীর সাথে অস্বাভাবিক আচরণ করায় দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ২৫ বছর আগে বিমলের স্ত্রী বিমলকে ছেড়ে চলে যায়। এরপর থেকে সে পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। বিমলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমরা পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে পড়েছি।
জগদীশ হালদার আরো বলেন, প্রথমে ওকে টিনের ঘরে রাখা হয়। তখন ঘর-দোড় ভেঙে ফেলে। অর্থের অভাবে আমরা পাকা ঘর করে দিতে পারিনি। আজ ইউএনও স্যার পাগল বিমলের জন্য যা করলেন তার জন্য আমরা চিরঋণী।
সামাজিক সংগঠন কোটালীপাড়া কল্যাণ সংঘের প্রতিষ্ঠাতা মনিরুজ্জামান শেখ জুয়েল বলেন, একজন মানসিক ভারসাম্যহীন বিমল হালদারের নিরাপত্তার জন্য ইউএনও মো. মঈনুল হক যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা সমাজে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।