‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর অনলাইন শপ’, ‘চাঁদপুর ইলিশ বাজার’, ‘চাঁদপুর ইলিশ ঘাট’ ইত্যাদি নামে ফেসবুক পেজ খুলে অনলাইনে চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে অভিনব কৌশলে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিল একটি অনলাইন প্রতারক চক্র।

এই অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ২৫টি মোবাইল ফোন ও ৭০টি অবৈধ সিমকার্ডসহ ওই প্রতারকচক্রের আট সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ।

ডিএমপির উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিরা হলেন আনাছ শেখ (২১), কামাল শেখ (২১), ইয়ানুর মোল্লা (২১), জোবায়ের হোসেন (২৩), রুবেল শেখ (২৯), সাগর হোসেন (২৩), মো. আলীনূর ইসলাম (১৮) ও শরিফুল ইসলাম (২১)।

তালেবুর রহমান জানান, গত সোমবার ও মঙ্গলবার (২৬ ও ২৭ মে) খুলনা, নড়াইল ও যশোরে বিশেষ ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করে ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ২৫টি মোবাইল ফোন ও ৭০টি ভুয়া রেজিস্ট্রেশন করা সিম জব্দ করা হয়।

তালেবুর রহমান আরও জানান, গত ২০ নভেম্বর মো. মাসুম বিল্লাহ ‘চাঁদপুর ইলিশ বাজার’ নামক ফেসবুক পেইজে সুলভ মূল্যে ইলিশ মাছ বিক্রির চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন দেখে ইলিশ অর্ডার দেন এবং তাদের দেওয়া একটি বিকাশ নম্বরে ১৫ হাজার টাকা অগ্রিম পাঠান। কিন্তু  ওই অর্ডারের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি কোনো ইলিশ পাননি। এ ঘটনায় মো. মাসুম বিল্লাহর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে খিলগাঁও থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়।

মামলাটি পরবর্তী সময়ে ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগে হস্তান্তর করা হয়। তদন্তাধীন এই মামলায় তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় প্রতারক চক্রকে শনাক্ত করে ডিবি। এরপর সোমবার ও মঙ্গলবার খুলনা, নড়াইল ও যশোরে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে প্রতারক চক্রের আট জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে ডিবি-সাইবার সূত্রে জানা যায়, প্রতারক চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন অনলাইন শপের ছবি ব্যবহার করে পেইজ খুলে চাঁদপুরের তাজা ইলিশ সুলভ মূল্যে সরবরাহের বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছিল। তারা ইলিশ সরবরাহের অর্ডার নিয়ে অগ্রিম টাকা গ্রহণ করত। টাকা নেওয়ার পর তারা গ্রাহকদের ইলিশ মাছ বুঝিয়ে দিত না এবং কোনো যোগাযোগ রাখতো না। চক্রটির মূলহোতা আনাছ শেখ ও শরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে তারা বিভিন্ন ব্যক্তির এনআইডি সংগ্রহ করে মোবাইল কোম্পানি, বিকাশ ও নগদের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহায়তায় ভুয়া সিম ও অ্যাকাউন্ট খুলে এই অভিনব প্রতারণা চালিয়ে আসছিল। তারা দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে এই অভিনব প্রতারণার সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। তাঁদের প্রতারণার শিকার অসংখ্য ভুক্তভোগী ডিএমপির বিভিন্ন থানায় সাধারণ ডায়েরি ও অভিযোগ করেছেন, সেগুলো ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগে তদন্তাধীন রয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। চক্রটির সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে ডিবির প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

অনলাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য এবং অপরিচিত পেইজ থেকে কেনাকাটার পরিপ্রেক্ষিতে অগ্রিম টাকা প্রদানের আগে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা ভালোভাবে যাচাই করার জন্য সম্মানিত নগরবাসীকে আহ্বান জানিয়েছে ডিএমপি।