সাংবাদিক তুহিন হত্যার ঘটনায় এক নারীসহ গ্রেপ্তার ৪

গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত এক নারীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আসামিদের শনাক্ত করা হয়েছে।
গ্রেপ্তাররা হলেন— আলামিন, গোলাপি, ফয়সাল ওরফে কেটু মিজান ও স্বাধীন। সিসিটিভি ফুটেজ দা, ছুরি ও চাপাতি হাতের যাদের দেখা গেছে, গ্রেপ্তার এই চারজন তাদের মধ্যে ছিল।
শুক্রবার (৮ আগস্ট) দিনগত রাতে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) উপসহকারী পুলিশ কমিশনার রবিউল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, গোলাপিকে কেন্দ্র করেই মূলত এই হামলার ঘটনা ঘটে। সিসিটিভি ফুটেজে চাপাতি হাতে তুহিনকে কোপানোর জন্য দৌড়াতে দেখা যায় ফয়সাল ওরফে কেটু মিজানকে। স্বাধীনকে চাপাতি হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
পুলিশ আরও জানায়, গ্রেপ্তারকৃত ফয়সাল ও গোলাপি সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী।
এর আগে, হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে আরও পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ।
জিএমপির উপসহকারী পুলিশ কমিশনার রবিউল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় চান্দনা চৌরাস্তায় বহুতল বিপণিবিতান শাপলা ম্যানশনের সামনে বাদশা মিয়া নামে এক ব্যক্তি গোলাপী নামে এক নারীকে কিল ঘুষি মারছিল। এ সময় তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন যুবক চাপাতি, ছুরি দিয়ে বাদশার ওপর হামলা চালায়। আক্রান্ত বাদশা মিয়া দৌড়ে পালিয়ে যান। এরপর তিনি শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। গোলাপীকে বাদশাহ মিয়ার হামলা ও বাদশা মিয়ার ওপর সন্ত্রাসীদের মামলার ঘটনাগুলো একটু দূরে দাঁড়িয়ে মোবাইলে ভিডিও ধারণ করছিলেন প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন। হামলাকারীরা তুহিনকে ভিডিও ধারণ না করতে বলে ও যেটা করেছে সেটা ডিলিট করতে বলে। এ সময় আসাদুজ্জামান তুহিন ঘটনাস্থল থেকে চলে যায় ও পাশেই মসজিদ মার্কেটে অবস্থান নেন। হামলাকারীরা তাকে অনুসরণ করে মসজিদ মার্কেটে গেলে তুহিন দৌড়ে পাশের চায়ের দোকানে আশ্রয় নেন। এ সময় তুহিনকে ধাওয়া করে ও কুপিয়ে খুন করে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।
জিএমপির ডিসি (ক্রাইম) রবিউল হাসান বলেন, ‘পাঁচজনকে আটক করে আনা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজের সঙ্গে মিলিয়ে এদের শনাক্তকরণের কাজ চলছে। আমরা খুব সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছি যেন কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি এই মামলায় জড়িয়ে না যায়।
রবিউল হাসান আরও বলেন, পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার গোয়েন্দা বিভাগের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, দাড়িওয়ালা ও মাথায় ক্যাপ পরা ফয়সাল ওরফে কেটু মিজান চাপাতি হাতে দৌড়াচ্ছে। তার সঙ্গে শাহজামাল, বুলেট ও সুজনসহ আরও কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাকিদের পরিচয় উদ্ঘাটনের জন্য কাজ চলছে।
পুলিশ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জানান, হামলাকারীরা চিহ্নিত হয়েছে। নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে জুমার নামাজের পর চান্দনা চৌরাস্তার ঈদগাহ মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তার বড় ভাই সেলিম মিয়া মরদেহ ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়ায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফনের জন্য নিয়ে যান।
নিহত তুহিনের বড় ভাই সেলিম মিয়া বাদী হয়ে জিএমপির বাসন থানায় হত্যা মামলা করেছেন। তিনি জানান সাংবাদিক তুহিন কোনো অপরাধ করেননি। তিনি সমাজের চিত্র তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। খুনিরা তাকে বাঁচতে দিল না। তবে যারা তাকে খুন করেছে তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি করেছেন তিনি। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে আর যেন কোনো সাংবাদিককে এভাবে নির্মম হত্যার শিকার হতে না হয়।
সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে গাজীপুর ও আশপাশের জেলাগুলোয় খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ করছেন সাংবাদিকরা। শুক্রবার (৮ আগস্ট) দুপুরে গাজীপুর প্রেসক্লাবের সামনে সাংবাদিক ইউনিয়ন গাজীপুর জেলা শাখার উদ্যোগে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধনে প্রকৃত খুনিদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন সাংবাদিক নেতারা।
তুহিনের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ভাটিপাড়ায় মৌলভীবাড়ি। তার বন্ধু আজিজুর রহমান বলেন, ‘গাজীপুরে স্ত্রী মুক্তা বেগম ও দুই ছেলে সন্তানকে নিয়ে বসবাস করতেন তিনি। এর মধ্যে বড় ছেলের বয়স সাত আর ছোট ছেলের বয়স তিন বছর। গাজীপুরে তিনি একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করতেন ও একটি ক্লিনিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকতায় যুক্ত ছিলেন।