সব বিষয়ই চ্যালেঞ্জের, রাজনৈতিক দলের মতামত আমলে নেবে ইসি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ঘোষণায় ইসি জানিয়েছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে কোন কাজ কখন করবে। যদিও এর মধ্যে পরিস্থিতি অনুযায়ী কোনো কিছু যুক্ত করার প্রয়োজন হলে তা করবে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি।
রোডম্যাপ ঘোষণার সময় ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ ভোটকে সামনে রেখে প্রতিটি বিষয়ই ‘চ্যালেঞ্জের’ বলে উল্লেখ করেছেন। সচিব জানান, পরিস্থিতি বুঝে তা সামাল দেওয়ার দৃঢ়তা রয়েছে বর্তমান ইসির। তিনি বলেন, এখনকার আইন-শৃঙ্খলার বিষয়টি সরকারের হলেও প্রয়োজনে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে সমন্বয় ও সহযোগিতা নেবে ইসি। সচিব জানান, সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলের যথাযুক্ত পরামর্শ থাকলে প্রয়োজনে তা কর্মপরিকল্পনায় যুক্ত করা হবে।
আজ বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পথে একগুচ্ছ কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে ইসি সচিব এসব কথা জানান।
রোজার আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ভোটের দিনের প্রায় দুই মাস আগে তফসিল ঘোষণা করবেন এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিশন।
সংবাদ সম্মেলনে এসে ভোটের পথের রোডম্যাপে ভোটার তালিকা, সীমানা নির্ধারণ, দল নিবন্ধন, প্রবাসী ও দেশি ভোটারদের পোস্টাল ব্যালটে ভোটিং, প্রশিক্ষণসহ ২৪টি কাজের তালিকা তুলে ধরেন সচিব।
আখতার আহমেদ বলেন, আমরা কর্মপরিকল্পনা দিলাম আর সব কিছু হয়ে গেল তা তো নয়; এটা চলমান থাকবে। এর সঙ্গে সংযোজন হবে। নতুন নতুন পরিস্থিতিতে নতুন নতুন কাজ আসে, এগুলো একসঙ্গে সম্পূরক কাজ হিসেবে নেব।
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা
কর্মপরিকল্পনার ভেতরে-বাইরে কোনো চ্যালেঞ্জ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে সচিব বলেন, প্রতিটি জিনিসই চ্যালেঞ্জের। আগামীতে আমার জীবনে দুর্ঘটনা ঘটবে না এটা কি আমি জানি? সুতরাং, প্রত্যেকটি জিনিসই চালেঞ্জের। প্রত্যেকটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মানুষের প্রস্ততি থাকতে হবে, এটাই দৃঢ়তা। এটাই আমরা চাই।
সবার সহযোগিতা কামনা করে চ্যালেঞ্জের বিষয় থাকলে তা কমিশনের কাছে তুলে ধরার আহ্বান জানান আখতার আহমেদ। সচিব বলেন, না জেনে বাতাসের সঙ্গে তলোয়ার খেলানো যায় না। চ্যালেঞ্জ আসবে, পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। তার জন্য মানসিকভাবে যে দৃঢ়তা থাকা দরকার আমাদের সবার রয়েছে।
বিদ্যমান আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। এর সঙ্গে ইসিকে এখন ‘রিলেট’ করার বিষয় হিসেবে দেখতে চায় না ইসি সচিব।
‘আমরা ভবিষ্যত দ্রষ্টা নই’
বিরাজমান পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে আখতার আহমেদ বলেন, কেন থাকবে না। এক্সিস্টিং ল’ এ্যাণ্ড অর্ডার সিচুয়েশনটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয়। আমাদের বিষয়টা হচ্ছে নির্বাচন সংক্রান্ত কার্যক্রমের। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বুঝে সমন্বয় করে বিষয়টি দেখা হবে।
সচিব বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রলণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে যখন যেখানে যতটুকু প্রয়োজন হবে আমরা করব। আমরা ভবিষ্যত দ্রষ্টা নই। ভবিষ্যতে যেটা আসবে সেটা সামাল দেওয়ার জন্যে যাবতীয় যা করার আমরা করব।
সিসি ক্যামেরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয়
ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বা বডি ক্যাম ব্যবহারের বিষয়টিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বলে মনে করেন সচিব। আখতার আহমেদ বলেন, সিসি ক্যামেরা, বডি ক্যামেরার বিষয়টা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সঙ্গে। এটা আমাদের ব্যাপার নয়। এটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আলোচনা হয়েছে। যদি আমাদের অংশগ্রহণের বিষয় হয়ে থাকে, সেটা কতটুকু হতে হবে আলোচনা সাপেক্ষে। উদ্যোগী মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্র, ইসি নয়।
আখতার আহমেদ জানান, ভোটকেন্দ্রে সিসি টিভি লাগবে কি লাগবে না এটা নির্ভর করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমানের উপরে। তিনি বলেন, আমরা চাইব শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ হোক। ভোটার স্বতস্ফুর্তভাবে, আন্দমুখর পরিবেশে আসবে; আমরা তার জন্যে অংশীজন হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদি মনে করে এটা (কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা) করতে হবে, অবশ্যই করবে। আমরা সহযোগিতা করব।
সংলাপে রাজনৈতিক দলের মতামত নেবে ইসি
রোডম্যাপে রাজনৈতিক দল সন্তুষ্ট হবে কিনা জানতে চাইলে সচিব বলেন, এটা আমাদের কর্মপরিকল্পনা। রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে যখন আলোচনা হবে তখন মতামত থাকে আমাদের নিশ্চিত করবেন। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ হবে, এর আগে সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে ফেলছে ইসি।
দলের সঙ্গে সংলাপ পরে করায় উল্টো (দলের মতামত উপেক্ষা) হচ্ছে কিনা? জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, এ কথার সঙ্গে একমত নই। স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সংলাপ পরবর্তী কোথাও যদি সংশোধনের প্রয়োজন হয়, আমরা বলেছি কর্মপরিকল্পনায় সংযোজন হবে; সেক্ষেত্রে আমরা সেভাবে এডজাস্ট করব। কতটুকু লাগবে তার ওপর বিষয়টি নির্ভর করবে।
নির্বাচনি আইন সংস্কারে দলগুলোর সঙ্গে সংস্কার কমিশন, ঐকমত্য কমিশনের মতামতের ভিত্তিতে ইসি উদ্যোগ নেওয়ায় নতুন করে বড় ধরনের সুপারিশ ইসির সংলাপে আর আসবে না বলে মনে করেন সচিব।
সচিব জানান, ইতোমধ্যে ঐকমত্য কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছে। বাস্তবতাটা পরবর্তীতে দেখা যাবে।
এআই অপপ্রচার রোধ চ্যালেঞ্জ
ইসি সচিব জানান, এআই অপব্যবহার, অপপ্রচার, মিসইনফরমেশন, ডিসইনফরমেশন রোধ একটা চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো নিয়ে আমরা এটাকে এডজাস্ট করব। আমরা কি আমাদের সব কিছু সামাল দিতে পারব? চেষ্টা করব, যাতে সব কিছু সামাল দেওয়া যায়। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমেরও বড় ভূমিকা রয়েছে। সবার সহযোগিতা লাগবে।
ভোটার উপস্থিতিও ভাবনায়
আখতার আহমেদ বলেন, ভোট দিতে কমিশনের সব উদ্যোগের পরও কোনোভাবেই যদি কেউ উৎসাহিত না হন-সেটাই বড় চ্যালেঞ্জ। আপনাকে আমরা উদ্বুদ্ধ করতে পারি, সেটা বাস্তবায়ন করবেন কিনা সেটা আপনার ব্যাপার। আমরা সব সময় বলছি-এমন একটা উৎসবমুখর পরিবেশ আনতে চাই যেখানে মানুষ স্বতস্ফুর্তভাবে আসবেন (কেন্দ্রে)। আর কী করলে ভালো হয় সে পরামর্শ দিন।
পার্বত্য এলাকায় হেলিকপ্টার
ভোটার তালিকা থেকে ভোটের ফলাফল প্রকাশ পযন্ত দুই শতাধিক কাজের ফর্দ তুলে ধরা হয় ইসির রোডম্যাপে। আইন-শৃঙ্খলা ও নির্বাচনি কাজে সশস্ত্রবাহিনীর সহায়তার কথাও তুলে ধরা হয়। সচিব জানান, ভোটের আট দশ দিন আগে স্বচ্ছ ব্যালট পেপারসহ আনুষাঙ্গিক সামগ্রী আনা নেওয়ায় বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার সরবরাহের বিষয়ে যোগাযোগ করা হবে।