বিনোদন চ্যানেলে এত খবর কেন : তারিন

তারিন, বাংলাদেশের নাট্য অঙ্গনের প্রিয় মুখ। জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী অভিনয় ও নাচের পাশাপাশি শখের বশে গানও করেন। ‘আকাশ দেব কাকে’ শিরোনামে একটি গানের অ্যালবামও বের করেছেন তিনি। নিজের প্রোডাকশন হাউজ ‘তানা’ থেকে বেশ কিছু নাটকের প্রযোজনাও করেছেন গুণী এই অভিনয়শিল্পী।
নাটক, গান, দেশীয় মিডিয়ার অবস্থান নিয়ে অনেক কথা বলেছেন এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে।
প্রশ্ন : অভিযোগ আছে দেশীয় নাটক কেউ টিভিতে দেখছে না। ইউটিউবে নাটক দেখছে। অভিযোগটা কতখানি সত্য?
উত্তর : এটা খুব সত্যি কথা। অবশ্যই আমি এখানে আমার দর্শকদের দোষ দিব না। এখানে আমি চ্যানেলকে দোষ দিব না, মিডিয়ার পুরো সিস্টেমকে দোষ দিব। এখন নির্ধারিত সময়ে নাটকে প্রচার হয় না। একটা নাটকের মাঝে কতখানি ব্রেক হবে সেটাও অনেকসময় বলা হয় না।নাটকের পিক আওয়ারে বেশি বিজ্ঞাপন হয়।আবার নাটকের ব্রেকে খবরও দেখানো হয়। মাঝে মাঝে টকশোও শুরু হয়। দর্শক তো ভুলে যাবে যে সে নাটক দেখছিল।কার এত ধৈর্য আছে যে এতক্ষণ ধরে নাটক দেখবে?
আমরা রোদ বৃষ্টিতে এত কষ্ট করে নাটকে অভিনয় করার পর সেই নাটক যদি কেউ না দেখে, তখন আমাদের মন ভেঙে যায়।নাটক দেখার পর দর্শকদের কাছ থেকে ভালো বা খারাপ দুই ধরনের মন্তব্যই আমরা প্রত্যাশা করি। কিন্তু এখন দর্শক নাটক দেখে না, এর প্রধাণ কারণ বিজ্ঞাপন, টকশো ও খবর। আমার কথা হলো একটা বিনোদন চ্যানেলে এত খবর দেখানোর তো দরকার নেই। প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় যদি খবর দেখোনো হয় তাহলে এটা বিনোদন চ্যানেল কেন? খবরের চ্যানেল তো আছেই। এখন মুঠোফোনে চাইলেই খবর পাওয়া যায়। রাতে মানুষ যখন খবর দেখার জন্য টিভির সামনে বসে তখন আবার টকশো শুরু হয়। আমরা এভাবে দর্শক হারাচ্ছি।
প্রশ্ন : সমস্যগুলো থেকে বের হয়ে হয়ে আসার উপায় কি বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর: বিনোদন চ্যানেলে এত খবর দেখানোর তো কোনো প্রয়োজন নেই। নিজের শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সবাইকে অনেক সতর্ক হতে হবে। আমাদের দেশে এত চ্যানেলের দরকার আছে কি? চ্যানেলের তুলনায় আমাদের ভালো মানের চিত্রনাট্যকার ও শিল্পী তৈরি হয়নি। সবকিছুতে সবার নজার রাখতে হবে।
প্রশ্ন : আপনার অভিনীত নাটকগুলো আপনি কি দেখেন?
উত্তর : নিজের অভিনীত নাটক অবশ্যই দেখা উচিত।আমি বাসায় থাকলে আমার অভিনীত নাটকগুলো দেখি। ভুলগুলো ধরার চেষ্টা করি।টিভিতে আমার নাটক না দেখালেও অন্যের নাটক দেখতে আমি পছন্দ করি।
প্রশ্ন : একসময় চলচ্চিত্রে ডাবিং করেছেন। এখন ডাবিং করতে আপনাকে দেখা যাচ্ছে না কেন?
উত্তর : তখন আসলে ডাবিংটা কীভাবে করতে হয় এই আগ্রহ থেকে করেছি।
প্রত্যেকটি বিভাগের কাজের অভিজ্ঞতাগুলো ভবিষ্যতে কাজে দেয়।এখন কোন নাটকের শুটিংয়ের ডাবিং দিতে গেলে ওই অভিজ্ঞতাগুলো আমাকে সাহায্য করে।
প্রশ্ন : আপনার প্রোডাকশন হাউস থেকে এখন নাটক কী কম নির্মিত হচ্ছে? এর প্রধান কারণ কী?
উত্তর : আমি খুব ভালো কিছু করার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রোডাকশন হাউসটি করেছিলাম। কিন্তু গত এক, দুই বছর ধরে দেখছি কিছু কোম্পানির এজেন্টের মাধ্যমে চ্যানেলগুলো নাটক নিচ্ছে। দীর্ঘদিন নাট্যাঙ্গনে কাজ করার পর যদি আমার প্রযোজনায় কোনো নাটক এজেন্সির মাধ্যমে চ্যানেলকে জমা দিতে হয়, সেটা অনেক হতাশাজনক। তাই আমি এর পিছনে সময় নষ্ট করতে চাইনি। চলমান মিডিয়ার বানানো নিয়মগুলোর অনেক পরির্বতন প্রয়োজন।এজেন্সির মাধ্যমে নাটক বানাতে হবে-এটা আমি বিশ্বাস করি না।
প্রশ্ন : দ্বিতীয় গানের অ্যালবাম বের করার ইচ্ছা আছে কী? বাংলাদেশের অডিও বাজার সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?
উত্তর : ‘আকাশ দেব কাকে’ অ্যালবামটি শখের বশে করেছি।কাউকে ফোন করে আমার গানের ওয়েলকাম টিউন শুনলে আমার অনেক ভালো লাগে।কিন্তু আপাতত আমার অ্যালবাম বের করার ইচ্ছা নেই।কারণ একটা ভালো গান তৈরি করতে খরচ হয় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। কিন্তু এত টাকা বিনিয়োগ করার পর যদি সেই টাকাগুলো ফিরে না আসে এটা অনেক কষ্টজনক। আমার অ্যালবাম করার অভিজ্ঞতা ভালো না।আমাদের অডিও বাজারের খারাপ অবস্থা হওয়ার পিছনে অনেক কারণ আছে।যারা পাইরেসি করছে তাদের আমি একশ ভাগ দোষ দিব না। অডিও বাজারের সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমি দোষারোপ করব। তারা তাদের কাজগুলো সঠিক ভাবে করছে না।