নায়িকার মুখোমুখি
আমার চোখের দিকে তাকান, বুঝবেন : ঋতুপর্ণা
পশ্চিমবঙ্গে চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় নায়িকা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। বাংলাদেশেও তাঁর পরিচিতি কম নয়। এত ব্যস্ত কাজ নিয়ে যে তাঁর সাক্ষাৎ পাওয়াই দুষ্কর! তবু দুরু দুরু বুকে ফোন, ভাগ্য সুপ্রসন্ন। এনটিভি অনলাইনের কথা বলতেই রাজি হয়ে গেলেন টালিউডের এই ড্রিম গার্ল। তাই আর সব ফেলে ছুটলাম, মুখোমুখি হলাম ঋতুপর্ণার।
সামনাসামনি হতেই শুরু করলেন ঋতুপর্ণাই। বললেন, ‘জানেন তো, আমার ভালোলাগার অন্যতম দেশের নাম বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সঙ্গে আমার একটা আত্মিক যোগ আছে। বিভিন্ন সময়ে আমি বাংলাদেশে যেমন নানা ড্যান্স পারফর্ম করতে গেছি, তেমনি বাংলাদেশে আমার বহু সুপার ডুপার হিট ছবি রয়েছে।’
কথার মাঝেই জিভ কেটে বললেন, ‘আসলে আমি খুব সরি। আমার মেয়ে রিশোনিয়া হওয়ার পর বাংলাদেশের সঙ্গে আমার একটা সাময়িক দূরত্ব তৈরি হয়ে গিয়েছে। মেয়ে হওয়ার পর কলকাতার ছবির সঙ্গেই চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো ছবির চুক্তি করা হয়নি। তবে হ্যাঁ, বাংলাদেশের দর্শকদের চিন্তা করার কোনো কারণ নেই, ভগবান চাইলে আগামী কিছুদিনের মধ্যে বাংলাদেশের বেশ কিছু ছবির সঙ্গে আমার চুক্তি হতে চলেছে। (হেসে) খুশি হয়েছেন তো?’
‘বাংলাদেশের মানুষের কাছে থেকে ভীষণ ভালোবাসা পেয়েছি,’ স্মৃতিচারণা করেন ঋতুপর্ণা, ‘খুব মনে পড়ছে, ২০১২ সালে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং নন্দিতা রায়ের ‘মুক্তধারা’ ছবি মুক্তি পায়। সেই উপলক্ষে ওই সময় বিশাল প্রমোশনাল ইভেন্ট হয় বাংলাদেশে। আজও ভুলতে পারি না।’
এতক্ষণ নিজের কথাই বলে চলছিলেন ঋতুপর্ণা। এবার প্রশ্ন করি, ঋতুপর্ণার চরিত্রে আগামী দিনে কোনো পরিবর্তন কি দেখতে পাবেন দর্শকরা?
একটু থেমে ঋতুপর্ণা উত্তর দেন, “এই বছরেই ভিন্ন স্বাদের চরিত্রে দর্শকরা আমাকে দেখতে পাবেন বলে আশা করছি। ‘রাজকাহিনী’ নামের একটি ছবিতে আমার চরিত্র দেখে চমকে উঠবেন দর্শকরা। যেখানে আমার সাজ পোশাক, ব্যবহার, কথা বলার ধরন সম্পূর্ণ আলাদা। এমন চরিত্রে দর্শকরা আমাকে আগে কখনো দেখেননি।’
টালিউডের অন্যতম ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের সঙ্গে তিক্ততার প্রসঙ্গ তুলতেই জনপ্রিয় এ অভিনেত্রীর চটজলদি জবাব, ‘ইন্ডাস্ট্রিতে ওসব একটু আধটু হয়। এখন সব অতীত। আসল কথা হলো, ভালো স্ক্রিপ্ট আর ভালো চরিত্র পেলে আমার কোনো ছুৎ-মার্গ নেই। অবশ্যই কাজ করব। দর্শকরাই শেষ বিচারক। দর্শকদের ভালোবাসা না পেলে কি আর ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকা যেত? একসময় তো আমার অনেক ছবি ফ্লপ করেছে। তারপরেও দর্শকরা আমাকে ভালোবেসে আমার ছবি দেখেছেন, যা সবই সম্ভব হয়েছে ঈশ্বরের অপার কৃপায়। তিনি সহায় থাকলে আর তাঁর প্রতি আস্থা ও ভক্তি থাকলে কিসের চিন্তা বলুন তো?’
‘রাজনীতি পছন্দ করেন?’
প্রশ্ন শুনেইে ঋতুর চোখেমুখে হাসির ঝলকানি। বেশ রসিয়ে বললেন, ‘রাজনীতি কোথায় নেই বলুন তো? সংসারেও কিন্তু রাজনীতি আছে, হা হা হা...।’
কিছুটা ভয়-সংশয় নিয়ে জানতে চাই, ‘শুনেছি চল্লিশের কোটা পার হতে চলল আপনার?’
তবে উত্তরে সপ্রতিভ ঋতুপর্ণা, ‘ধুর, বয়েস টয়েস নিয়ে ভাবি না। ফালতু, মন খারাপ হয়ে যায়।’
সৌন্দর্যের গোপন রহস্য জানতে চাইলে টলিউডের এই সুপারস্টার মিষ্টি হেসে বললেন, ‘আমার চোখের দিকে তাকান ...। বুঝলেন তো?’
‘কাজকে ভালোবাসুন, মানুষ দেখবেন আপনাকে ভালোবাসবে। আমি ইন্ডাস্ট্রিতে ভালো কাজ করার খিদে নিয়ে আজও কাজ করে যাই। ভালো চরিত্রের সঙ্গে অভিনয়ের বুনন বুনতে পারলেই সৌন্দর্য আপনা থেকেই ফুটে উঠবে,’ যোগ করেন ঋতু।
এই ফাঁকে ঘড়ির দিকে একবার তাকালেন ব্যস্ত এই অভিনেত্রী। বোঝা গেল, হাতের সময় কমে এসেছে। জানতে চাই, ‘বাংলাদেশ কবে যাচ্ছেন?’
মুচকি হেসে ঋতুপর্ণা বললেন, ‘যাব যাব। আসলে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং নন্দিতা রায়ের ‘বেলাশেষে’ ছবিটি হিন্দিতে হওয়ার কথা আছে। ছবি নিয়ে আমাদের একটা ট্যুর আছে। সেই ট্যুরেই বাংলাদেশ যাব।’
শেষ করার আগে বাংলাদেশের দর্শকদের ও পাঠকদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা, ধন্যবাদ আর শুভকামনা জানালাম। সঙ্গে সঙ্গে হাত জোড় করে পাল্টা বিনয় জানিয়ে ঋতুপর্ণা বলেন, ‘ধন্যবাদ বাংলাদেশের সক্কলকে। ভালো থাকবেন, মনে রাখবেন।’